১৯৩৪ সালে আয়া সোফিয়াকে মসজিদ থেকে জাদুঘরে রূপ দেয় তুরস্কের তৎকালীন সরকার৷ শুক্রবার সেই সিদ্ধান্তকে বেআইনি হিসেবে উল্লেখ করেছে দেশটির একটি আদালত৷ এর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান স্থাপনাটিকে মসজিদ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এক নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেন৷ পরবর্তীতে টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে তিনি জানান, ২৪ জুলাই থেকে সেখানে নামাজ আদায় করা যাবে৷ তবে সবার প্রার্থনার উপযোগী করে তুলতে ছয় মাস সময় লাগবে৷
আয়া সোফিয়াকে কী কাজে ব্যবহার করা হবে তার সিদ্ধান্ত নেয়া তুরস্কের সার্বভৌম অধিকার বলেও উল্লেখ করেন এর্দোয়ান৷ জানান, মসজিদে পরিণত হলেও এটি সব ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে৷ ‘‘আমাদের অন্য সব মসজিদের মতই আয়া সোফিয়ার দুয়ার স্থানীয় বা বিদেশি, মুসলিম বা অমুসলিম, সবার জন্যই উন্মুক্ত থাকবে,’’ বলেন তিনি৷
শুক্রবার তুরস্কের অনেক মুসলিম আয়া সোফিয়ার সামনে সমবেত হন৷ নতুন সিদ্ধান্ত জানার পর তারা স্থাপনার বাইরে প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন এবং সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন৷
আয়া সোফিয়ার ইতিহাস
আয়া সোফিয়া মূলত ছিল গির্জা৷ ষষ্ঠ শতকে বাইজেন্টাইন সম্রাট জাস্টিনিয়ানের সময়ে তৈরি করা হয় এটি৷ ১৪৫৩ সালে অটোমানরা কনস্টান্টিনোপল জয়ের পর দ্বিতীয় সুলতান মেহমেদ এই ক্যাথিড্রালটিকে মসজিদে রূপান্তর করেন৷ আধুনিক তুরস্কের স্থপতি মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এটিকে জাদুঘরে পরিণত করেন ১৯৩৫ সালে৷ এরপর থেকে অসাম্প্রদায়িক তুরস্কের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছিল আয়া সোফিয়াকে৷
আয়া সোফিয়ার স্ট্যাটাস নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তুরস্কের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে টানাপড়েন চলছে৷ ধর্মীয় কট্টরপন্থিরা অনেকদিন ধরে ইউনেস্কো ঘোষিত এই বিশ্ব ঐতিহ্যকে মুসলিমদের নামাজ পড়ার জন্য খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছে৷
অটোমানদের কনস্টান্টিনোপল (বর্তমানে ইস্তানবুল) জয়ের বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়া সোফিয়ার ভেতরে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থাও করা হয় গত মাসে৷ শুক্রবার তুরস্কের প্রশাসনিক আদালত এবং এর্দোয়ানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে ৮৬ বছর পর আবারও মসজিদে ফিরছে আয়া সোফিয়া৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
সবচেয়ে বিখ্যাত
দুটি মহাদেশের ছোঁয়া পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত শহর তুরস্কের ইস্তাম্বুল৷ সেখানে ঐতিহ্যের সঙ্গে আধুনিকতা আর ধর্মনিরপেক্ষ লাইফস্টাইলের সঙ্গে ধর্মের যে সংঘাত সেটি বোধ হয় আর অন্য কোনো শহরে পাওয়া যাবে না৷ অনেকে মনে করেন, ঠিক এ কারণেই ইস্তাম্বুল এত আকর্ষণীয়৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
ইতিহাস
ইস্তাম্বুলের ইতিহাস ২,৬০০ বছরের পুরনো৷ পার্সিয়ান, গ্রিক, রোমান, অটোমান– সবাই বিভিন্ন সময়ে এই শহর নিয়ন্ত্রণ করেছে৷ ফলে তার নামও একেক সময় একেকরকম ছিল৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত নাম বোধহয় কনসট্যান্টিনোপল৷ ১৯৩০ সালে শহরটির নাম হয় ইস্তাম্বুল৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
বসফরাস পাড়ি
ইস্তাম্বুলের ইউরোপ অংশের কারাকয় আর এশিয়ার কাদিকয়ের মধ্যে আছে বসফরাস প্রণালী৷ প্রতিদিন ফেরিতে করে হাজার হাজার মানুষ এক পার থেকে আরেক পারে যায়৷ সময় লাগে ২০ মিনিট৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
গালাতা সেতু
ইস্তাম্বুলের একটি বিখ্যাত সেতু৷ সেখানে দাঁড়িয়ে নৌকা চলাচল দেখা যায়৷ শহরের অনেকে সেখানে যান মাছ ধরতে৷ আর আছেন খুচরা বিক্রেতারা৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
নতুন মসজিদ
২০১৯ সালে শহরের বিখ্যাত তাকসিম চত্বরের কাছে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়৷ সমালোচকরা বলছেন, এর মাধ্যমে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান চত্বরটিকে একটি নতুন পরিচয় দিতে চাইছেন৷ সেটি হচ্ছে, ধর্মনিরপেক্ষ ও ইউরোপীয় পরিচয়ের পরিবর্তে রক্ষণশীল ও নিউ-অটোমান পরিচয়৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
ধর্মপ্রাণদের এলাকা
ইস্তাম্বুলের ফাতিহ এলাকাটি ইউরোপীয় অংশ পড়েছে৷ তুলনামূলকভাবে যাঁরা বেশি রক্ষণশীল, তাঁরা সেখানে বাস করেন৷ অনেকে ফাতিহকে ‘ধর্মপ্রাণদের শহর’ বলে ডাকেন৷ তুর্কি প্রেসিডেন্টের একেপি দলের অনেক সমর্থক আছেন সেখানে৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
ছোট্ট সিরিয়া
সাম্প্রতিক সময় ফাতিহতে অনেক সিরীয় বসবাস শুরু হয়েছে৷ যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ থেকে পালিয়ে অনেক সিরীয় নাগরিক ফাতিহতে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তুরস্কের সরকার এই সিরীয়দের নাগরিকত্ব দেয়ার অঙ্গীকার করেছে৷ সমালোচকরা বলছেন, এটি ভোটার বাড়ানোর একটি উদ্যোগ মাত্র৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
নাইটলাইফ
রাতের বেলায় পার্টি কিংবা কিছু পানীয় পান করতে চাইলে যেতে হবে ইস্তাম্বুলের কাদিকয় এলাকায়৷ সেটি পড়েছে শহরের এশীয় অংশে৷
-
ইস্তাম্বুল কতটা ইউরোপীয়?
পরিবর্তন
শহরের গালাতা এলাকার একটি ডিজাইনার স্টোরে কাজ করেন আয়সেগুল সারাকোগলু৷ এলাকাটি পর্যটকদের প্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম৷ তবে ইদানীং ইউরোপীয় পর্যটকদের সংখ্যা কমেছে বলে জানান তিনি৷ এখন শুধু আরব পর্যটকরা সেখানে যাচ্ছেন৷ তাঁর আশা, শিগগিরই এই অবস্থার পরিবর্তন হবে৷
বিশ্বের প্রতিক্রিয়া
মসজিদে রূপান্তরের বিরোধীতা আগে থেকে করে আসছিল অর্থডক্স খ্রিস্টানরা৷ তুরস্কের সঙ্গে গ্রিসের সম্পর্কের আরেক দফা অবনতি ঘটারও সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে এ কারণে৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিতসোটাকিস সিদ্ধান্তটির নিন্দা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, যারা আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অপরিহার্য হিসেবে বিবেচনা করেন এটি তাদের সবার জন্যই ক্ষোভের৷ ‘‘এই সিদ্ধান্তে শুধু গ্রিসের সঙ্গে নয়, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউনেস্কো এবং গোটা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে,’’ বলেন তিনি৷
নিন্দা জানিয়েছে সাইপ্রাসও৷ দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোস ক্রিস্টোডুলাকিস টুইটে তুরস্ককে আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি রক্ষার আহবান জানিয়েছেন৷
রাশিয়ার সংসদের উচ্চ কক্ষের উপ-প্রধান ভ্লাদিমির জাবারোভ তুরস্ক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘এটিকে মসজিদে রূপান্তর মুসলিম বিশ্বের জন্য কোন কিছু বয়ে আনবে না৷ এর মাধ্যমে দেশগুলোর কোন ঐক্য তৈরি হবে না৷ বরং উলটো দিকে তাদের সংঘাতের পথে ঠেলে দিল৷’’
তুরস্কের এই সিদ্ধান্তকে হতাশাব্যাঞ্জক বলে উল্লেখ করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মর্গান অর্টাগুস বলেন,‘‘তুরস্কের সরকার আয়া সোফিয়াকে সব দর্শানার্থীর জন্য উন্মুক্ত রাখার কথা বলেছে৷ সেখানে কারো প্রবেশেই যাতে বাধা তৈরি না হয় সে বিষয়ে কী করা হবে যুক্তরাষ্ট্র সেই পরিকল্পনা জানার অপেক্ষায় আছে৷ এর আগে গত সপ্তাহে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও তুরস্ককে এমন সিদ্ধান্ত না নেয়ার আহবান জানিয়েছিল৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
নাউমবুর্গ ক্যাথেড্রাল, জার্মানি
তেরোশ’ শতাব্দীতে এই ক্যাথেড্রাল নির্মাণ করা হয়৷ মধ্যযুগের অন্যতম নিদর্শন এটি৷ উটা ফন নাউমবুর্গ (ছবিতে)-কে মধ্যযুগের সবচেয়ে সুন্দরী নারীর মতো মনে করা হতো৷ ক্যাথেড্রালটা যিনি নির্মাণ করেছিলেন, তিনি কি আর জানতেন একদিন তাঁর সৃষ্টি বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান পাবে!
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
গ্যোবেকলি টেপে, তুরস্ক
মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাচীন মন্দিরটি কি এখানেই অবস্থিত? পাথরের স্তম্ভ আর ক্রসগুলো ১২শ’ বছরের পুরনো৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
পাহাড়ি বৌদ্ধ মঠ, দক্ষিণ কোরিয়া
শত শত বছরের নিপীড়নের পরও পাহাড়ের উপর চারটি স্বতন্ত্র মঠ– তংদোসা, বুসিওস্কা, বেওপজুসা এবং দাইহেউংগসা সপ্তম শতাব্দী থেকে কোরিয়ার বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও প্রথা সংরক্ষণ করে চলেছে৷ পাঁচ তলা বিশিষ্ট প্রধান প্যাগোডা বেওপজুসা মন্দিরের ল্যান্ডমার্ক৷ সেখানে তিন হাজার সন্ন্যাসী আছেন৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
মেদিনা আজাহারা, স্পেন
কর্দোবার খলিফা ৯৩৬ খ্রীষ্টাব্দে অসাধারণ এই শহর নির্মাণের নির্দেশ দেন এবং তাঁর উপপত্নী আজ-জাহরার নামে এটি উৎসর্গ করেন৷ এটি নির্মাণে সময় লেগেছিল ৪০ বছর৷ এর ৪৪ বছর পর শত্রুপক্ষের সেনাবাহিনী এটি ধ্বংস করে৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
হাইথাবু অ্যান্ড ডানেভিরকে, জার্মানি
ঠিক একই সময়ে জার্মানির উত্তরাঞ্চলে ভিন্ন ধরনের এক স্থাপত্য নির্মাণ করেছিল জলদস্যুরা৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
কালহাত-এর প্রাচীন শহর, ওমান
ওমানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই শহরটি ১৪ থেকে ১৫ শতক পর্যন্ত বাণিজ্যের ঘাঁটি ছিল৷ এখানকার বন্দরটি শহর থেকে একটু বাইরে অবস্থিত, যেটি দিয়ে ওমানের তরল গ্যাস অন্যত্র যায়৷
-
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে নতুন সংযোজন
ভিক্টোরিয়ান অ্যান্ড আর্ট ডেকো কোয়ার্টার, ভারত
ইউরোপীয় স্থাপত্যশিল্পের সঙ্গে ভারতীয় নকশার সম্মিলন: যেটি মুম্বইয়ের একটি ল্যান্ডমার্ক৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই ভিক্টোরিয়ান ভবনগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল৷
ইউনেস্কোর উদ্বেগ
১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়া জাতিসংঘের ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়৷ স্থাপনাটিকে মসজিদের রূপান্তরের পদক্ষেপ ১৯৭২ সালের আইনের বরখেলাপ বলে উল্লেখ করেছে সংস্থাটি৷
ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অদ্রে আজুলে বলেছেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত স্থাপনার কোনো ধরনের সংস্কার যাতে এর বৈশ্বিক মূল্যবোধকে নষ্ট না করে তা মানার বাধ্যবাধকতা রাষ্ট্রের রয়েছে৷ এই বিষয়ে প্যারিসে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের কাছেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি৷ আয়া সোফিয়াকে ইউরোপ ও এশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অনন্য উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাদুঘর হিসেবে স্থাপনাটি তার এই ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে এবং মতবিনিময়ের প্রতীক হিসেবে টিকে রয়েছে৷ নতুন ঘোষণায় যার বরখেলাপ ঘটেছে৷
এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ইউনেস্কোকে অবহিত করার বাধ্যবাধকতার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি৷
এফএস/জেডএ (এপি, রয়টার্স, এএফপি)
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
এর্দোয়ানের উত্থান
তুরস্কে এবং বিদেশে রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান সম্পর্কে নানা ধরনের মতামত রয়েছে৷ তাঁকে নব্য-অটোমান ‘সুলতান’ হিসেবে যেমন বিবেচনা করা হয়, তেমনি কারো কারো চোখে তিনি একজন স্বৈরাচারী নেতা৷ রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই ইসলামপন্থিদের বিভিন্ন দাবিদাওয়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তিনি৷ পাশাপাশি ন্যাটোতে তাঁর নেতৃত্বে বড় ধরনের অবদান রাখছে তুরস্ক৷ এর্দোয়ানের উত্থান নিয়ে এই ছবিঘর৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইস্তানবুলের কারাবন্দি মেয়র
তুরস্কে ইসলামপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দল ওয়েলফেয়ার পার্টিতে নিজের অবস্থান দ্রুতই পাকাপোক্ত করেছিলেন এর্দোয়ান৷ ১৯৯৪ সালে তিনি সেই দল থেকে ইস্তানবুলের মেয়রও নির্বাচিত হন৷ কিন্তু এর্দোয়ান মেয়র হওয়ার চার বছরের মাথায় সেই দলটিকে সে দেশের সরকার তুরস্কের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় ঘোষণা দিয়ে নিষিদ্ধ করে৷ এরপর জনসমক্ষে বিতর্কিত কবিতা আবৃত্তির দায়ে জেলে যান এর্দোয়ান৷ চার মাস জেল খাটেন৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
নতুন দল, নতুন সম্ভাবনা
তুরস্কের একেপি পার্টির সহপ্রতিষ্ঠাতা এর্দোয়ান৷ ২০০২ সালের নির্বাচনে দলটি সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে৷ আর ২০০৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন৷ দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম বছরগুলোতে এর্দোয়ান দেশবাসীকে সামাজিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক সংস্কারের দিকে মনোযোগী হন৷ তবে কেউ কেউ এটাও মনে করেন যে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাজনীতিতে ধর্মের মিশ্রণ ঘটানোয় ভূমিকা রেখেছেন৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ইসলামপন্থিদের স্বার্থ রক্ষা
যদিও তুরস্কের সংবিধান দেশটির ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে সমর্থন করে, তারপরও এর্দোয়ান কট্টর ইসলামপন্থিদের মন জয়ের নানা চেষ্টা করেছেন৷ তুরস্কের এই শীর্ষনেতা একসময় বলেছিলেন যে, তাঁর লক্ষ্যগুলোর একটি হচ্ছে এক ‘ধার্মিক প্রজন্ম’ গড়ে তোলা৷ এর্দোয়ানের সমর্থকরা এই লক্ষ্যের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, কেননা, তাঁরা মনে করেন, ধর্মচর্চা করা মুসলমানরা তুরস্কে নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছিল৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ক্যু থেকে রক্ষা
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এর্দোয়ানের বিরুদ্ধে সে দেশের সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়৷ তবে সেই ঘটনায় দু’শ’র বেশি বেসামরিক নাগরিক এবং সেনা সদস্য নিহত হন৷ সেই ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানের পর এর্দোয়ান আরো ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি সেনাবাহিনীতে ‘শুদ্ধি অভিযান’ শুরু করেন৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
দেশজুড়ে অভিযান
ব্যর্থ সেই সেনা অভ্যুত্থানের পর দেশজুড়ে অভিযান পরিচালনা করে তুর্কি কর্তৃপক্ষ৷ এতে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার ব্যবস্থা, স্কুল এবং গণমাধ্যম থেকে পঞ্চাশ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এর্দোয়ান সেই সেনা অভ্যুত্থানের পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত ধর্মীয় নেতা এবং তাঁর প্রাক্তন সঙ্গী ফেতুল্লাহ গুলেনের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
বিভেদ সৃষ্টিকারী রাজনীতিবিদ
যদিও নিজের দেশে এবং বিদেশে বসবাসরত তুর্কিদের একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে এর্দোয়ানের প্রতি, তা সত্ত্বেও তিনি তাঁর কঠোর নীতি এবং কুর্দিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালানোয় কড়া সমালোচনার মুখে পড়েছেন৷ চলতি বছরের জানুয়ারিতে আফরিনে মারাত্মক আক্রমণ পরিচালনা করেন এর্দোয়ান, যার সমালোচনা করে মানবাধিকা সংস্থাগুলো৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
এক নতুন যুগ?
২০১৪ সাল থেকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর, কিছুদিন আগে নির্বাচনে জয়ী হয়ে এর্দোয়ান তাঁর অবস্থান আবারো মজবুত করেছেন৷ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুনের নির্বাচনের মাধ্যমে তুরস্কে এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে৷ তবে সেটা ভালো না মন্দ তা সময়ই বলে দেবে৷
-
তুরস্কের রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান কে?
ব্যাপক ক্ষমতাধর
২০১৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে দেশটির সংবিধান সংশোধন করা হয়৷ সংসদীয় গণতন্ত্র থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় তুরস্ক৷ ২০১৮ সালের ২৪ জুন নতুন করে ৫ বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি৷ দেশটির ইতিহাসে এতো ক্ষমতাবান প্রেসিডেন্ট এর আগে আসেননি৷ শপথ নেয়ার দিন নিজের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি- একেপির সদস্যদের এর্দোয়ান বলেন, ‘তুরস্ক নতুন যুগে প্রবেশ করেছে’৷