আসামে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের গুলিতে পাঁচ বাঙালি নিহত
২ নভেম্বর ২০১৮নাগরিকপঞ্জির নবায়ন ও নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিল নিয়ে চাপা উত্তেজনার মধ্যেই আসামে আবার সহিংসতা৷ বৃহস্পতিবার উত্তর আসামের তিনসুকিয়ার পাশে ধলা গ্রামে পাঁচ ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়৷ নিহত পাঁচজনই বাংলাভাষী৷
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, ইতিমধ্যে আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু হয়েছে৷ আসামে বাঙালি সংখ্যাগরিষ্ঠ বরাক উপত্যকার একাধিক শহর ছাড়াও গুয়াহাটি ও তিনসুকিয়ায় বিক্ষোভে শামিল হয়েছেন বহু মানুষ৷ পশ্চিমবঙ্গেও প্রতিবাদে পথে নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস, জাতীয় কংগ্রেস, বিজেপি ও বাম দল৷
ঘটনায় সন্দেহের তীর বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র-জাতীয়তাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অফ আসাম বা উলফা-র দিকে৷ প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই ‘আলোচনাপন্থি' উলফা নেতা মৃণাল হাজরিকা ও উলফা (স্বাধীন)-এর প্রধান পরেশ বড়ুয়া আসামে বাঙালি নিধনের ডাক দেন৷
এর আগে ১৩ই অক্টোবর গুয়াহাটির সুক্লেশ্বর ঘাটে একটি বিস্ফোরণে চারজন আহত হন৷ উলফা (স্বাধীন) পরে বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করে বলে যে, এই বিস্ফোরণ ‘আসামের স্বার্থবিরোধী' হিন্দু বাঙালি গোষ্ঠীগুলির জন্য একটি সতর্কবার্তা৷
২০১৬ সালে বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং প্রস্তাবিত নাগরিকত্ব (সংশোধনী) বিলে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে ‘অবৈধ' শব্দটি প্রযোজ্য হবে না বলে জানানো হয়৷ ফলে আসামের বহু পুরোনো ইস্যু ‘বাঙালি বা বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ' নতুন করে আলোচনায় উঠে আসে৷ সাথে যোগ করা হয় সাম্প্রদায়িক রঙ ও এরপর থেকেই উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদীদের হাত ধরে উত্তর আসামে বাড়তে থাকে বাঙালি বিদ্বেষ৷
এদিকে উলফাসহ আরো কয়েকটি অসমীয়া জাতীয়তাবাদী সংগঠন দায়ী করছে বিজেপির হিন্দু তোষণকে, যার কারণে ভারতে আসা অবৈধ হিন্দুদের নাগরিকত্ব লাভের পথ সহজ হয়ে পড়ে বলে তারা মনে করে৷
ইতিমধ্যে আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী, বিজেপি নেতা সর্বানন্দ সনোয়াল দোষীদের কড়া শাস্তি দাবি করেছেন৷ জনগণের প্রতি শান্তি বজায় রাখার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি৷
আসামে বহিরাগত-ভূমিপুত্র বিতর্ক অনেক পুরোনো হলেও ২০১৪ সালের নাগরিকপঞ্জি নবায়নের কারণে নতুন করে তা শিরোনামে উঠে আসে৷ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চের পর আসামে বাস করতে শুরু করা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে৷নতুন নাগরিকপঞ্জির অন্তর্ভুক্ত হতে আসামের নাগরিকদের নিজেদের বৈধতা প্রমাণ করতে বিভিন্ন নথি পেশ করার কথাও বলা হয় সেখানে৷ ২০১৮ সালের জুলাই মাসে সেই তালিকার খসড়া প্রকাশ হলে দেখা যায়, প্রায় চল্লিশ লাখ মানুষ বাদ পড়েছেন৷
এসএস/এসিবি (এএফপি)