1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আল জাজিরার প্রতিবেদন: যেসব প্রশ্নের জবাব মিলছে না

২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

অভিযোগ উঠলেই ‘জামাত-শিবিরের ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা থেকে বের হতে পারেনি সরকার৷ আল জাজিরার ডকুমেন্টারিতে অসঙ্গতি থাকলেও তা কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্মও দিয়েছে, সেগুলোর জবাব সরকারের পক্ষ থেকে আসেনি৷

https://p.dw.com/p/3olFf
Symbolbild | Italien nach Referendum
ছবি: imago/R. Peters

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পাতায় একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে এ প্রতিবেদন নিয়ে৷ সেটিকেই শুরুতে বিশ্লেষণের চেষ্টা করছি৷ পরের অংশে আল জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে থাকছে কিছু কথা৷

প্রেস রিলিজের শুরুতেই কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ সরকার৷ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রতিবেদন ‘ভুয়া’ এবং ‘মানহানিকর’৷ সংবাদে পরিবেশন করা নানা তথ্য ও যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে পালটা কোনো জবাব না দিয়ে প্রতিবেদনকে ‘ঠেস দেয়া’ ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ ইত্যাদি বলা হয়েছে৷ কিন্তু এই প্রতিবেদনে কী ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে সেসব নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই৷ যেসব প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে, সেগুলোর বিষয়েও কোনো বক্তব্য দেয়া হয়নি৷

একজন পলাতক আসামি কিভাবে নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করছেন, বিয়েতে যোগদান করছেন, সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য আমরা এখনও জানি না৷ কিন্তু বেশ কয়েকবার বিজ্ঞপ্তিতে smear campaign অর্থাৎ উদ্দেশ্য়প্রণোদিত অপপ্রচারের কথা বলা হচ্ছে৷ রাষ্ট্রের কোনো সংস্থার এর সঙ্গে সংযোগ থাকার কথা অস্বীকার করা হলেও যে ছবিগুলো তথ্যপ্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিবেদনে, সেগুলো নিয়ে কোনো বিস্তারিত বক্তব্য আমরা জানি না৷

একই সঙ্গে আল জাজিরার বিরুদ্ধেও কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে৷ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সরকারকে কক্ষচ্যূত করার লক্ষ্য নিয়ে সাজানো হীন রাজনৈতিক ছক বাস্তবায়নে আল জাজিরা নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে৷’ কিন্তু কী সেই চক্রান্ত? এই প্রতিবেদনের পেছনে জামাত-শিবির বা রাষ্ট্রবিরোধী চক্রের জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ ছাড়া নিশ্চয়ই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন অভিযোগ করছে না৷ সেই প্রমাণ দেখতে চাই৷

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, হারিস আহমেদ নাম পরিবর্তন করে হাঙ্গেরিতে ব্যবসা করছেন৷ তার কোটি কোটি টাকার লেনদেনের অভিযোগও দেয়া হয়েছে৷ আরেক ভাই আনিস আহমেদ নাম পরিবর্তন না করেই সিঙ্গাপুরে আছেন এবং তার সঙ্গে বাংলাদেশ দূতাবাসের সম্পর্ক রয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে প্রতিবেদনে৷ এ নিয়েও আমরা কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেখিনি৷

এই প্রতিবেদনকে বাংলাদেশ সরকার ‘প্রত্যাখ্যান’ করছে বলে জানানো হয়েছে৷ কিন্তু কোনো সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন তো প্রত্যাখ্যান বা গ্রহণের ব্যাপার না৷ সংবাদ মাধ্যমের কাজ তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে অভিযোগ ও অন্যায় তুলে ধরা৷ গণতান্ত্রিক সরকারের দায়িত্ব সেসব অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখা৷ এমন প্রতিবেদনকে রাষ্ট্র ও সরকারকে সঠিক পথে চলতে সহায়তা করে৷

সেনাবাহিনীর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর- আইএসপিআরও একটি বিবৃতি দিয়েছে৷ সেখানেও এই বিবৃতিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে৷ ডেভিড বার্গম্যান এবং সাংবাদিক তাসনিম খলীলের বিরুদ্ধে অতীতের বিভিন্ন কাজের কারণে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আচরণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷

অতীতে তারা কী করেছেন সেটার চেয়ে ডকুমেন্টারিতে কী তথ্য-প্রমাণ দেয়া হয়েছে, সেদিকে মনোযোগ দেয়া উচিত ছিল৷

প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন

আল জাজিরার প্রচারিত প্রতিবেদন নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে৷ হারিস আহমেদের মুখে আমরা শুনছি বাংলাদেশের পুলিশ-ব়্যাব, এমনকি মন্ত্রীরাও তার কথায় চলেন৷ কিন্তু সেটি তার দাবি, নাকি আসলেই ঘটনাটা এমন, তা প্রমাণ করার পক্ষে যথেষ্ট তথ্য প্রতিবেদনে দেখা যায়নি৷

লন্ডনে এক কোম্পানির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স দেখানো হয়েছে৷ সেখানে হারিস আহমেদ কমিশনের বিনিময়ে পাঁচ তারকা হোটেলের কাজ পাইয়ে দেয়ার কথা বলছেন৷ এমনকি চাইলে লন্ডন হাইকমিশনের কর্তাব্যক্তিরাও বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন, এমন প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে৷ কিন্তু আসলেই কি হাইকমিশনের কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত? সেটিরও প্রমাণ মেলেনি৷

HA Asien | Anupam Deb Kanunjna
অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

বুলেট কেনা থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর নানা কাজ হারিস আহমেদ নিয়ন্ত্রণ করেন, এমন দাবি করা হয়েছে৷ কিন্তু আসলেই কি তার কথামতো কাজ নিয়ন্ত্রণ হয়? এক জায়গায় হারিস আহমেদ ডিজিএফআইয়ের এক তথাকথিত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেন৷ ‘তথাকথিত’ বলা হচ্ছে এই কারণে যে অপর প্রান্তে কে রয়েছেন, তার পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি৷

সেনাপ্রধানের ভাইয়ের আওয়ামী লীগে ‘ব্যাপক প্রভাব' থাকা সত্ত্বেও ইউরোপ-অ্যামেরিকা-ক্যানাডায় বিশ্বস্ত আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে সামি নামের ব্যক্তির সঙ্গেই কেন সব লেনদেন করলেন, সেটাও স্পষ্ট নয়৷ জাল সার্টিফিকেট থেকে শুরু করে ভুয়া পাসপোর্টের বিষয়টিও প্রমাণ করা গেছে৷ কিন্তু বাংলাদেশ থেকে মানি লন্ডারিং করা হচ্ছে, বা এর সঙ্গে বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জড়িত, সেটির পর্যাপ্ত তথ্য নেই প্রতিবেদনে৷

প্রতিবেদনে এছাড়াও নানা ত্রুটি থাকলেও যেসব তথ্য সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা অস্বীকার করতে হলেও প্রয়োজন শক্তিশালী পালটা যুক্তির৷ আশা করছি, ‘ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দেয়ার আগে সেগুলো মিথ্যা প্রমাণ করে পালটা তথ্য হাজির করতে পারবে বাংলাদেশ সরকার৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য