1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আর্মাডিলো শিকারের বদলে ‘মাটে' চা

আনিয়া কিমিশ/এসি১৩ অক্টোবর ২০১৪

প্যারাগুয়ের উত্তরে অ্যাটলান্টিক রেন ফরেস্ট৷ সেই ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্যের মাঝখানে চলেছে এই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা আচে রেড ইন্ডিয়ান উপজাতির মানুষদের বাঁচার সংগ্রাম৷ মূল প্রশ্নটা হলো: মাটে চা, নাকি সয়াবিন?

https://p.dw.com/p/1DUEs
ছবি: Irna.ir

অ্যাটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে প্যারাগুয়ের রেন ফরেস্ট অর্থাৎ বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের বনানী, যার মাত্র স্বল্পই অবশিষ্ট রয়েছে: সাবেক অরণ্যভূমির মাত্র ১৩ শতাংশ, সাকুল্যে ৫০০ হেক্টর বনভূমি৷ ‘আচে' উপজাতির মানুষরা আর শুধু শিকার করে কিংবা ফলমূল কুড়িয়ে বেঁচে থাকতে পারছেন না৷ কাজেই তারা আগের মতো ‘মাটে' চায়ের চাষ শুরু করেছেন, তাদের পূর্বপুরুষরা যেমনটা করতেন৷

এক্টর রিভারোলা তাদের দেখান, কোথায় ‘মাটে' ভালোভাবে বাড়ে৷ এক্টর ডাব্লিউডাব্লিউএফ পরিবেশ সংগঠনের হয়ে কাজ করেন৷ এক্টর পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু চাষবাস আর জঙ্গলের কাজও বোঝেন৷ জঙ্গলের মাটিতে আর কোনো পুষ্টি নেই৷ মাটে গাছগুলো জঙ্গলের মাটিকে পুনরুজ্জীবিত করে৷ প্যারাগুয়ের মানুষদের কাছে বুনো মাটে, জঙ্গলের মাটে আবার বিশেষ উপাদেয়৷ সারা দেশে মাটে চা খাওয়া হয়৷ এখানকার এই মাটে গাছগুলো আচে-দের একটা রোজগারের পথ খুলে দেবে৷

পুয়ের্তো বারা পল্লিতে ৪০টি পরিবারের বাস – এবং লোকসংখ্যা আরো বেড়েই চলেছে৷ পশুপালন ও ভুট্টা চাষ থেকে প্রধানত উপার্জন হয়৷ সেজন্য তাদের খানিকটা জঙ্গল কাটতে হয়েছে – স্রেফ বাঁচার প্রয়োজনে৷ পুয়ের্তো বারা আচে পল্লির হোসে কুয়াতেগি বলেন: ‘‘এই চাষবাস দিয়ে আমরা আমাদের পেট ভরাতে পারি৷ শুধু খাদ্য নয়, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা৷ এ ভাবে আমরা আমাদের পল্লির জন্য নানা উদ্যোগ নিতে পারি৷''

অন্যরা জমি বেচে দিয়েছে বড় খামারচাষি কিংবা কোম্পানিগুলোর কাছে৷ সে জমিতে আজ শুধু সয়াবিনের চাষ হয়৷ এক্টর রিভারোলা-র ভাষ্যে: ‘‘জমি বিক্রি করার জন্য উপজাতি মানুষদের সয়া উৎপাদনকারীদের চাপের মুখে পড়তে হয়৷ তারা আরো বেশি জমি কিনে নেয়, আরো দ্রুত বন কেটে আবাদ করে – আবার সেই টাকাতেই আরো জমি কেনে৷''

সপ্তাহে দু'দিন শিকার

অ্যাটলান্টিক রেন ফরেস্টের মোট ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে আজও এমন সব সংরক্ষিত এলাকা আছে, যেখানকার পরিবেশ আজও অক্ষত, সেখানে আজও অনেক জীবজন্তু দেখতে পাওয়া যায়৷ আচে রেড ইন্ডিয়ান উপজাতির যে চার হাজার ছ'শো হেক্টর জঙ্গল আছে – সেই জঙ্গল থেকেই তারা বাঁচে৷ সপ্তাহে দু'দিন করে পুরুষেরা শিকারে যায়৷ তারা ঠিক জানে, কখন কোন জন্তুটিকে মারা চলবে৷ বহু শতাব্দী ধরে তারা এভাবেই শিকার করে আসছে৷ ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার-এর পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা সবে কিছুদিন হলো আচে উপজাতির মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ এখানকার আচে-রা আজও প্রকৃতির কোলে বাস করেন৷ পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা সে কাজে তাদের সাহায্য করতে চান৷

আচে-রা যাতে আগের মতোই জঙ্গলে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর কর্মীরা তাদের চেনাচ্ছেন: কোন গাছগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, কোনগুলো কাটা চলবে: শুধু বড় বড় সয়া কোম্পানিগুলোর কাছে জমি বিক্রি না করলেই হলো৷ ডাব্লিউডাব্লিউএফ-এর প্যারাগুয়ে শাখার লুসি আকিনো বলেন:

‘‘মানুষরা যে নির্বিকারে গাছ কেটে চলে, পরিবেশের জন্য কিছুমাত্র কিছু না করে – তাতে আমার ভীষণ রাগ হয়৷ এ দেশে শিল্প-কলকারখানার জন্য রাজনৈতিক কর্মসূচি আছে, যার বলে ক্রমেই আরো বেশি প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে৷ যাদের টাকা আছে, তারা আরো বেশি চায়, আর গরিবরা ক্রমেই আরো বেশি গরিব হয়ে পড়ছে৷''

আচে-রা বড় বড় সয়া উৎপাদনকারীদের হাত থেকে তাদের জঙ্গল বাঁচাতে চায়৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা, তা নির্ভর করবে পরবর্তী প্রজন্মের উপর৷