আরজি কর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ড : ন্যায়ের দাবিতে রোগীরাও চিকিৎসকদের পাশে
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে সারা দেশে আন্দোলন চলছে৷ পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে আন্দোলন তুঙ্গে৷ জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে রোগীরা সমস্যায় পড়লেও তারা সংহতি জানাচ্ছেন আন্দোলনে৷
বিচার চাই
আরজি কর হাসপাতাল চিকিৎসকদের আন্দোলনের ভরকেন্দ্র৷ শুধু খুনের বিচার ও অপরাধীর শাস্তি নয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়নের দাবিকে সামনে রেখে আন্দোলন চলছে৷
পাশে আছি
কর্মবিরতির ফলে রোগী পরিষেবা অনেকটাই বিপর্যস্ত৷ তাই আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েও নাগরিক সমাজের একটি অংশ চিকিৎসকদের কাছে কাজে ফেরার আবেদন জানিয়েছে৷ তবে চিকিৎসকদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন আছে রোগী ও তার পরিবারের বড় অংশের৷
নিরাপত্তার দাবি
কলকাতার উপকণ্ঠে রাজারহাট থেকে আরজি করে এসেছিলেন শেখ সোহরাবউদ্দিন৷ হৃদযন্ত্রে অস্ত্রোপচার হয়েছে মাসখানেক আগে৷ তার মতে, ‘‘শুধু স্বাস্থ্যকর্মী নন, হাসপাতালের ভিতর অপরাধ ঘটলে তার শিকার হতে পারি আমরাও৷ চিকিৎসক নিরাপদ নয় মানে রোগী ও তার পরিবারও নয়৷’’
লক্ষ্য স্থায়ী সমাধান
তবে সকলে এমন ভাগ্যবান নন৷ বহু রোগীকে চিকিৎসা পেতে শুয়ে বসে থাকতে হচ্ছে দীর্ঘ ক্ষণ৷ জয়েন্ট অ্যাকশন ফোরামের সর্বভারতীয় সমন্বয়ক ডা. প্রাজ্ঞ অনির্বাণ বলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে যোগ দিলেও অপেক্ষার সময় কমবে না৷ সারা বছর এভাবেই চলে৷ এর স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যেই আন্দোলন৷’’
উভয়ের অধিকার
যখন রোগীরা চিকিৎসার প্রত্যাশায়, সেই সময় হাসপাতালের ধর্না মঞ্চে জুনিয়র চিকিৎসকদের জটলা৷ এখনই তারা কাজে ফিরছেন না৷ মানবাধিকার কর্মী রঞ্জিত শূর বলেন, ‘‘উভয় পক্ষ তাদের অধিকারের জায়গা থেকে সঠিক দাবি করছে৷ বল এখন সরকারের কোর্টে৷ প্রতিবাদীদের সঙ্গে কথা বলতে হবে রাজ্যকে৷’’
ব্যক্তিগত অসুবিধা তুচ্ছ যখন
সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা চলে বড় সংখ্যক জুনিয়র চিকিৎসকের তৎপরতায়৷ তারা না থাকায় আহত কাদের মোল্লার মতো অনেকে চিকিৎসা পেতে সমস্যায় পড়ছেন৷ তবু কাদেরের বাবা বলেন, ‘‘অসুবিধা হচ্ছে ঠিকই৷ তবে হাসপাতালকে আরো ভালো করা দরকার৷ তাই দাবি পূরণ হলে আমাদেরও লাভ৷’’
রোগী কম
পরিষেবা ঘিরে অনিশ্চয়তার জন্য রোগীরাও হাসপাতালে আসছেন কম৷ কোনো কোনো বহির্বিভাগের কাউন্টার ফাঁকা৷ এসএসকেএম হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসক ঋজু মণ্ডল বলেন, ‘‘ক্রনিক অসুখে ভোগা রোগীরা কমই আসছেন৷ হঠাৎ সমস্যা হলে অনেকে স্থানীয় স্তরে চিকিৎসা করাচ্ছেন৷ তাই ভিড় কম৷’’
ক্রেতার অভাব
হাসপাতাল চত্বরে নানা দ্রব্য ফেরি করে অনেকে জীবনধারণ করেন৷ বিরতির পর বৃহস্পতিবার থেকে আবার আরজি কর হাসপাতালে পণ্য নিয়ে বসছেন গোবরডাঙার শ্যামল বন্দ্যোপাধ্যায়৷ তার বক্তব্য, ‘‘বিক্রি অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ রোগীরা ফিরলে আবার বাড়বে৷ সব কিছু ভালোভাবে মিটে যাক, এটাই চাই৷’’
সমাধানের আশায়
চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে শিশু ও বৃদ্ধদের সমস্যা হচ্ছে বেশি৷ একই কাজে বারবার হাসপাতালে আসতে হচ্ছে৷ সেই হয়রানি সয়ে প্রবীণ রণবীর সাহা বলেন, ‘‘অনেক উত্থান-পতন দেখেছি৷ কিন্তু এমন আন্দোলন দেখিনি৷ কষ্ট হলেও মানিয়ে নিচ্ছি৷ সরকার ও প্রতিবাদীরা মিলে একটা সমাধান নিশ্চয়ই করবে৷’’
একদিকে দুই পক্ষ
শ্যামনগরের বাসিন্দা গীতা আচার্য ক্যান্সার আক্রান্ত৷ নির্ধারিত কেমোথেরাপি করাতে পারেননি কর্মবিরতির জন্য৷ এর মূল্য কে দেবে? ডা. অনির্বাণ বলেন, ‘‘এভাবে এটাকে চিকিৎসক বনাম রোগীর দ্বন্দ্ব হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ আসলে এটা দুই পক্ষেরই লড়াই৷ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত করা উভয়েরই লক্ষ্য৷’’