আরজি কর: তিন প্রধান ক্লাবের সমর্থকদের প্রতিবাদ, পুলিশের লাঠি
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে রাস্তায় নামলেন ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান ও মহামেডান সমর্থকরা। পুলিশের লাঠি।
ডার্বি বাতিল
রোববার কলকাতায় ডুরান্ড কাপে মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের মরসুমের প্রথম ডার্বি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ জানায়, শহরজুড়ে নানান কর্মকাণ্ড চলছে, তারা যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশ কর্মী মোতায়েন করতে পারবে না। সেই ম্যাচ বাতিল হয়। ডুরান্ড কাপে কলকাতার বাকি ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা জানান, তারা একসঙ্গে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ করবেন। তাতে সামিল হন মহামেডান সমর্থকেরাও।
বিরল দৃশ্য
ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান ক্লাবের মধ্যে রেষারিষি ভয়ংকর। দুই ক্লাবের সমর্থকেরা তাই একযোগে কোনো বিষয়ের প্রতিবাদ করছেন, সেরকম ঘটনা খুব বেশি ঘটে না। এই দুই ক্লাবের সঙ্গে ময়দানের আরেক প্রধান মহামেডানের সমর্থকেরা যোগ দিয়েছিলেন। ফলে যুবভারতীর সামনে দেখা গেল এক বিরল ছবি, তিন প্রধানের সমর্থকদের প্রতিবাদের ছবি।
দুপুর থেকেই সমর্থকদের আসা শুরু
রোববার সকাল থেকে কলকাতা বৃষ্টিতে ভেসেছে। অনেক রাস্তায় জল জমে যায়। বেলা চারটের পর থেকে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা যুবভারতীর সামনে আসতে শুরু করেন। পাঁচটায় স্টেডিয়ামের সামনে থেকে মিছিল শুরুর কথা ছিল। তার আগে প্রচুর সমর্থক জমায়েত হন। পরে মহামেডান সমর্থকরা তাতে যোগ দেন।
ন্যায়ের দাবিতে মিছিল
তিন প্রধানের সমর্থকদের দাবি ছিল, আরজি কর-কাণ্ডের ন্যায়বিচার করতে হবে। ডার্বি বাতিলের জন্য যে তারা রাস্তায় নামছেন না, তা আগে থেকেই তারা স্পষ্ট করে দেন। মূলত সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদের ডাক দেয়া হয়। তাতেই সাড়া দেন হাজার হাজার মানুষ। ফুটবল মাঠের রেষারেষি সরিয়ে রেখে হাতে হাত ধরে তারা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।
পুলিশের ১৬৩ ধারা
পুলিশ জানায়, তারা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৬৩ ধারা জারি করছে। এই ১৬৩ ধারা হলো আগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৪ ধারার সমতুল্য। সেখানে চার বা তার বেশি মানুষের জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। পুলিশ জানায়, কিছু দুষ্কৃতী অস্ত্র হাতে ঢুকে পড়তে পারে। তারা একটি অডিও শোনায়। পুলিশ বলে, এই মিছিলে অশান্তির আশংকা করছেন।
পুলিশের কথায় কাজ হয়নি
পুলিশের এই কথায় কাজ হয়নি। ফুটবল পাগল মানুষরা যেভাবে তাদের প্রিয় দলের সমর্থনে ময়দানে জড়ো হন, তেমনভাবেই আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদে সামিল হওয়ার জন্য তারা যুবভারতীর সামনে জড়ো হতে থাকেন। মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। মিছিল থেকে আওয়াজ ওঠে, উই ওয়ান্ট জাস্টিস বা আমরা ন্যায় চাই।
পুলিশের লাঠি
পুলিশ প্রথম থেকেই চেয়েছিল, ফুটবল সমর্থকদের এই প্রতিবাদ মিছিল যেন দানা বাঁধতে না পারে। সেজন্য তারা জমায়েতকে উল্টোডাঙ্গার দিকে সরিয়ে দিতে চায়। পাঁচটার পর পুলিশ মিছিলকারীদের উপর ব্যাপক লাঠিচার্জ করে সাময়িকভাবে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়।
আবার মিছিল শুরু হয়
পরে আবার সমর্থকরা চলে আসেন যুবভারতী স্টেডিয়ামের সামনের রাস্তায়। আবার শুরু হয় মিছিল। শুরু হয় সেই একই স্লোগান। এই প্রতিবাদের জেরে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাস চার ঘণ্টার উপর বন্ধ থাকে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, লাঠির ঘায়ে অনেকে আহত হয়েছেন।
মিছিলে সামিল অনেকেই
ফুটবল সমর্থকদের মিছিলে অনেকেই আসেন। অভিনেতা ও নাট্যকর্মী সৌরভ পালোধি, অভিনেত্রী উষসী চক্রবর্তী, ফুটবল কর্তা কল্যাণ চৌবেদের সেখানে দেখা যায। কল্যণ চৌবে। এবার শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। তাতে গলা মেলান মিছিলে সামিল সকলে। কিছুক্ষণ তারা রাস্তায় বসে পড়েন। তারপর আবার শুরু হয় মিছিলের পথ চলা। ভিড় বাড়তে থাকে।
প্রতিবাদ হতে থাকে
বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে ছিল। কিন্তু তারা অপেক্ষা করতে থাকে। পর্যাপ্ত পুলিশ দিতে না পারায় ডার্বি বাতিল হয়েছিল, কিন্তু সমর্থকদের মিছিল সামালাবার জন্য অবশ্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করতে হয়।
সুখেন্দু শেখরের বক্তব্য
তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় আরজি কর নিয়ে প্রথম থেকেই প্রতিবাদে নেমেছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ লালবাজারে ডেকেছে। তিনি যাননি। সুখেন্দু শেখর এই ফুটবল সমর্থকদের বলেছেন, তাদের মিছিলে লাঠি চালানোর প্রতিবাদে তারা যেন সোমবারও রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ দেখান।