1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরজি কর কাণ্ড: চিকিৎসকদের প্রশ্ন, কেন এতদিন পর সিট

২০ আগস্ট ২০২৪

আরজি করের আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। কেন এতদিন পর, প্রশ্ন চিকিৎসকদের একাংশের।

https://p.dw.com/p/4jfUs
আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদ
প্রতিবাদে উত্তাল শহর কলকাতাছবি: Ritesh Shukla/Getty Images

২০২১ সাল থেকে আরজি কর মেডিক্য়াল কলেজ ও হাসপাতালে কী কী আর্থিক অনিয়ম হয়েছে, তা নিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি বা সিট তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যার মাথায় থাকছেন আইপিএস অফিসার প্রণব কুমার। সহকারী হিসেবে কাজ করবেন ডিআইজি ওয়াকার রেজা, সিআইডির ডিআইজি সোমা দাস মিত্র এবং কলকাতা পুলিশের ডিসি সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কী কী অনিয়ম হয়েছে হাসপাতালে তা নিয়ে তদন্ত করবে এই বিশেষ তদন্তকারী দল। চিকিৎসকদের একাংশের প্রশ্ন, এতদিন পর কেন এই তদন্ত কমিটি তৈরির কথা মাথায় এলো রাজ্য় সরকারের? এতদিন কেন এই তদন্ত হয়নি? চিকিৎসকদের বক্তব্য, আরজি করের অনিয়ম নিয়ে এর আগে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি, এমন নয়। কিন্তু পুলিশ বা সরকার তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কাকে আড়াল করার চেষ্টা হয়েছে তখন?

চলতি আন্দোলনে চিকিৎসকদের তরফে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পূণ্য়ব্রত গুণ। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''আরজি করের প্রিন্সিপাল সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন ওই হাসপাতালেরই ডেপুটি সুপার আখতার আলি। সরকারের কাছে জমা দেওয়া সেই অভিযোগপত্রের কপি আমি দেখেছি। কিন্তু সরকার সন্দীপের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টে ওই ডেপুটি সুপারকেই সরিয়ে দেওয়া হয়। আজ এতদিন পর রাজ্য সরকার কেন সিট গঠন করল, তা নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই।''

পূণ্যব্রত জানিয়েছেন, গুরুতর অভিযোগ ছিল সন্দীপের বিরুদ্ধে। আরজি করের মেডিক্যাল ওয়েস্টের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়া, ক্যান্টিনের টেন্ডার পাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি টাকা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশ-ফেল করানোর ঘটনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সরকার এমন অভিযোগ পাওয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একবার তাকে আরজি কর থেকে সরিয়ে অন্য কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। আরেকবার তাকে অধ্যক্ষের পদ থেকেই সরানো হয়েছিল। কিন্তু দু'বারই কয়েকদিনের মধ্যেই আরজি করে ফিরে এসেছিলেন সন্দীপ। ক্ষমতার হাত খুব বড় না হলে এমনটা সম্ভব না বলে জানিয়েছেন পূণ্যব্রত।

পূণ্যব্রতের মতোই সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসক সাত্যকি হালদার। তার প্রশ্ন, ''এতদিন পর রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে, সরকার আইওয়াশের চেষ্টা করছে। সন্দীপকে শেষ পর্যন্ত বাঁচানোর চেষ্টা হয়েছে। সাম্প্রতিক ঘটনার পরেও তাকে আরজি কর থেকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে একই পদে পাঠানো হয়েছে। ফলে বোঝাই যায়, তার পিছনে আরো বড় ক্ষমতার হাত আছে। কাদের মদত আছে সন্দীপের পিছনে, তা প্রকাশ করতে হবে।''

নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের এক জুনিয়ার চিকিৎসক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নিতেন সন্দীপ এবং তার দলবল। আরজি করে এক বিরাট চক্র গড়ে উঠেছিল তাকে ঘিরে। এই ঘটনার সঙ্গে আরো অনেকে যুক্ত। রাজ্য সরকার বরাবরই বিষয়গুলি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।'' ওই চিকিৎসকের আরো প্রশ্ন, সিবিআই যখন তদন্তে নেমেছে, গোটা দেশ যখন উত্তাল, তখন বিশেষ তদন্ত কমিটি গড়ে মূল তদন্তে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইছে না তো রাজ্য সরকার?

চার দফা দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। দোষাীদের শাস্তি, চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা-সহ একাধিক বিষয় সেখানে ছিল। এর মধ্যে পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবিও ছিল। কিন্তু আইনি কারণে সেই দাবি থেকে তারা সরে এসেছেন। তবে তাদের সংগঠনের চিকিৎসকেরা ইতিমধ্যেই ওই রিপোর্ট দেখেছে। তা থেকে স্পষ্ট, নিহত নারীর উপর একজনের বেশি অত্যাচার চালিয়েছে। রাজ্য পুলিশ এবিষয়ে যে তথ্য প্রকাশ করেছে এখনো পর্যন্ত তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে দাবি করেছেন পূণ্যব্রত। একই অভিযোগ করেছেন সাত্যকিও। গোটা বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট যে নির্দেশ দিয়েছে, তা আশাব্যাঞ্জক বলে মনে করেন সাত্যকি।

আরজি করের জুনিয়র চিকিৎসকের দাবি, এই ঘটনার সঙ্গে রথিমহারথিদের যোগ আছে। তদন্তে তাদের সকলের মুখোশ খুলতে হবে। না হলে এই আন্দোলন বন্ধ হবে না।

বস্তুত, এক বছর আগে আরজি করের ডেপুটি সুপারের যে অভিযোগ সরকারের কাছে জমা পড়েছিল, সেখানে আরো অনেক বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সেই সমস্ত বিষয়ের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি করেছে চিকিৎসা মহল।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ৷
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷