1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের গরমে আমাদের কথা

এম আবুল কালাম আজাদ
এম আবুল কালাম আজাদ
২৭ এপ্রিল ২০২৪

কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি, এপ্রিল মাস এলেই তীব্র গরম পড়া নিয়ে আমরা আলোচনা শুরু করি৷ অসহনীয় গরমের কারণ ও এর ফলে বিপর্যস্ত জনজীবন নিয়ে সংবাদমাধ্যম নিয়মিত খবর প্রকাশ করে৷ সামাজিক মাধ্যমেও এটা প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠে৷

https://p.dw.com/p/4fCnp
গামছা দিয়ে মুখ মুছছেন এক রিকশাওয়ালা
গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে সারা বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় অবদান রাখছে বলে মনে করা হয়ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

এ বছরের পরিস্থিতি যেন আরও ভয়াবহ৷ গত কয়েকদিন ধরে চলছে হিটওয়েভ৷ দাবদাহে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত, থমকে যাওয়ার উপক্রম৷ বিপদের কথা হচ্ছে, এবার তা বেড়েই চলছে৷

কিন্তু আবহাওয়া কেন উষ্ণ হয়ে উঠছে? এর কারণগুলো কি সব বৈশ্বিক বা প্রাকৃতিক? নাকি আমাদের গাফিলতিও এর জন্য দায়ী?

উষ্ণতা, খরা, বন্যা ইত্যাদির জন্য অনেকে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনকে বড় করে দেখেন৷ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে সারা বিশ্বে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ায় অবদান রাখছে বলে মনে করা হয়৷

এছাড়াও বছরের এই সময় সূর্যের অবস্থান, অনাবৃষ্টি ও বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ জলীয়বাষ্প বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার বিষয়ও থাকে৷ এসবকিছু আমাদের আবহাওয়াকে চরমভাবাপন্ন করছে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই৷ তবে এসবের উপর সকল দায় চাপালে ভুল হবে৷ গত তিন দশকে দেশের অভ্যন্তরে যা ঘটেছে সেটা পরিস্থিতিকে অসহনীয় করে তুলেছে৷

অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে একদিকে যেমন কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত হুহু করে গড়ে উঠেছে৷ অন্যদিকে, ধ্বংস করা হয়েছে বনজঙ্গল, দখল হয়ে হারিয়ে গেছে জলাশয়, নদীনালা ও খালবিল, যেগুলো পরিবেশকে সহনীয় রাখতে ভূমিকা রাখে৷

সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন রকম অবকাঠামোর জন্য হাজার হাজার একর ভুমির বন ধ্বংস ও কেটে ফেলা হয়েছে গাছপালা৷ এর একটি বড় উদাহরণ হচ্ছে, তিনটি অভয়ারণ্যের সাত লাখ গাছ কেটে ১০২ কিলোমিটার চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ৷ আরেকটি হচ্ছে, কয়েক লাখ গাছ কেটে মিরসরাই ইকোনমিক জোন করা৷ এমন অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে৷

এছাড়াও সারাদেশে সংরক্ষিত বন ইতিমধ্যে অনেকটাই উজাড় হয়ে গেছে৷ অন্তত ২৫ শতাংশ বন থাকার কথা থাকলেও আছে অর্ধেক বা তারও কম৷ সরকারি হিসেবে ১৭ শতাংশ আছে বলে দাবি করা হয়, কিন্তু বাস্তবে বনের পরিমাণ ১০ শতাংশেরও কম৷ আর এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আবহাওয়ার উপর৷

আমাজন বনকে যেমন পৃথিবীর ফুসফুস মনে করা হয় তেমনি আমাদের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল অক্সিজেনের প্রধান উৎস, যা আমরা অনেকটাই নষ্ট করে ফেলেছি৷

এদিকে, অপরিকল্পিত নগরায়ন কিভাবে পরিবেশকে বিপন্ন করছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে ঢাকা৷ রাজধানীতে যত খাল, জলাশয়, পুকুর, পার্ক, খেলার মাঠ, খোলা যায়গা ছিল তার অধিকংশই গত ২৫-৩০ বছরে বেদখল করে ইমারত তৈরি করা হয়েছে৷ শুধু তাই না, দখলে ও দূষণে বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশেপাশের সব নদীরও বেহাল অবস্থা৷ ফলে বছরের এসময় ঢাকায় বসবাস করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷

অন্যসব বড় শহরের চিত্রও একই রকম৷ আবার দেশের যেসব জেলার মধ্যে দিয়ে নদী বয়ে গেছে সেগুলো হয় মরে গেছে অথবা মৃতপ্রায়৷ ফলে বর্ষা মৌসুমে বন্যার সৃষ্টি হয়, দেখা দেয় জলাবদ্ধতা৷

শহরে চলছে হরদম নির্মাণ কাজ, মোটরযানের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন৷ ফলে বাতাস দুষিত থাকছে, যা উষ্ণতা বৃদ্ধি করে৷ শহরাঞ্চলের গাছপালার পরিমাণও কমে গিয়ে সংকটাপন্ন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷

গ্রামের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানকার চিত্রও দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে৷ জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন দালানবাড়ি তৈরি হচ্ছে মুলত কৃষি জমিতে অথবা বনজঙ্গল কেটে৷ এতে সবুজের পরিমাণ ও অক্সিজেনের উৎস দুটোই কমছে৷

এভাবে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে এর ভারসাম্য নষ্ট করা হয়েছে, যার প্রভাব আবহাওয়ায় পড়বে সেটাই স্বাভাবিক৷ আর সে কারনেই উষ্ণতা বেড়েছে৷

তাই গরম পড়লেই আমাদের গাছের কথা মনে পড়ে, মনে পড়ে বিলীন হয়ে যাওয়া নদীনালা আর জলাশয়ের কথা৷ কিন্তু আমরাই তো সেগুলো ধ্বংস করেছি নিজেদের স্বার্থের কাছে!

যে বিষয়টা সবচেয়ে ভয়ংকর তা হচ্ছে, পরিবেশ ও প্রকৃতির যে ক্ষতি সাধন আমরা করে চলেছি সেটা বন্ধের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷ এই প্রবণতা বন্ধ করে আমাদের বেশি বেশি গাছ লাগাতে হবে, দখল হয়ে যাওয়া নদীনালা উদ্ধার করে পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, নতুন নতুন পার্ক নির্মাণ ও খোলা জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে৷

উন্নয়ন হবে, নগরায়নও হবে, তবে তা হতে হবে পরিবেশের দিকে খেয়াল রেখে৷ কোন অবস্থাতেই আমরা আর পরিবেশ বা প্রকৃতির ক্ষতি সাধন করতে পারিনা৷ নতুবা আগামীতে আমাদের আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে৷ আর এজন্য দায়ী থাকবো আমরা নিজেরাই৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য