1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমদানি নয়, ভারতেই তৈরি হবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম

১০ আগস্ট ২০২০

দেশেই তৈরি হবে, তাই ১০১টি সামরিক সরঞ্জাম আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত। তার মধ্যে কামান, রাইফেল থেকে শুরু করে যুদ্ধবিমান পর্যন্ত আছে।

https://p.dw.com/p/3gicz
ছবি: picture-alliance/dpa/AP Photo

এই ১০১টি সামরিক সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি করতে প্রায় চার লক্ষ কোটি টাকা লাগে। সেই সব সামগ্রী এ বার দেশেই বানানোর সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার। তবে এখনই ওই সবকটি সামরিক সরঞ্জামের আমদানি বন্ধ করা হচ্ছে না। কয়েকটি ক্ষেত্রে অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে। বাকি সরঞ্জামের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ওই ১০১টি জিনিস ভারতে বানানো হবে। পরিকল্পনা হলো, বর্তমান সরকারের মেয়াদ যখন শেষ হবে, তখন এই ১০১টি সামরিক জিনিস ভারতে তৈরি হবে।

অবসরপ্রাপ্ত লেফটানান্ট জেনারেল উৎপল রায়চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এই চেষ্টা প্রথম করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। কিন্তু সেই সময় সরকারি প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিআরডিও-র যতটা দ্রুত কাজ করা উচিত ছিল, সেটা তারা করতে পারেনি। একটা অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে দশ বছর বা তার বেশি সময় নেয়া হলে প্রযুক্তি পুরনো হয়ে যায়। তখন উন্নত প্রযুক্তি নিয়ে অন্যরা চলে আসে। আমাদের ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছিল।''

রাজনাথ জানিয়েছেন, মোদী সরকার এই বিয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে। সরকার যেমন রাশিয়া থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকা দিয়ে অত্যাধুনিক ফাইটিং ভেহিকেল আনার কথা ভাবছিল। টাকাও বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু এখন ঠিক হয়েছে, সেগুলি দেশেই বানানো হবে। একইরকমভাবে নৌবাহিনীর ছয়টি সাবমেরিনও বিদেশে অর্ডার করা হবে না। সেগুলিও দেশে বানানো হবে। যে সব সমরাস্ত্র বা সরঞ্জাম বানানোর প্রযুক্তি এখনই দেশে আছে বা দেশের কোম্পানির কাছে আছে, সেগুলি আর বিদেশের থেকে আনা হবে না। রাজনাথের আশা, চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে সামরিক সরঞ্জাম বানানোর ক্ষেত্রে ভারতে চার লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে।

দীর্ঘদিন ধরে ভারত হলো বিশ্বের অন্যতম বড় অস্ত্র আমদানিকারী। সেই জায়গাটা থেকে সরে আসতে চাইছে সরকার। দীর্ঘদিন ধরে ভারতে কেবলমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থাগুলিই সামরিক সরঞ্জাম বানাতো। কিন্তু এখন সেই অবস্থা আর নেই। এখন বেসরকারি সংস্থাগুলিকেও প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে ঢুকতে দিয়েছে সরকার। যে ১০১টি সামরিক সরঞ্জাম বাইরে থেকে না আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেগুলি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি সংস্থা যে কেউ বানাতে পারবে। এর ফলে বেসরকারি সংস্থাগুলি নতুন কারখানা তৈরিতে উৎসাহী হবে। ভারতে একটা সুযোগ তৈরি হবে।

আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ভারত সব চেয়ে বেশি অস্ত্র আমদানি করত। পরে অবশ্য অ্যামেরিকা, ফ্রান্স, ইসরায়েল সহ অন্য দেশ থেকে ভারত প্রচুর আমদানি করা শুরু করে। এ বার সেই প্রবণতা কম করার চেষ্টা করা হবে।

প্রশ্ন হলো, ভারতের সংস্থাগুলির হাতে কি উন্নতমানের প্রযুক্তি আছে, যা দিয়ে তারা বিদেশে তৈরি হওয়া সামরিক সরঞ্জামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে? উৎপলবাবুর মতে, ''আমাদের আগে থ্রেট অ্যানালিসিস করতে হবে। চীন ও পাকিস্তানের চেয়ে আমাদের সমরাস্ত্র উন্নতমানের কি না, সেটা দেখা দরকার। আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ও বেসরকারি সংস্থা উন্নত মানের সামরিক সরঞ্জাম বানাতে পারে। এলঅ্যান্ডটি, ভারত ডাইনামিকসের মতো কোম্পানি আছে। তাদের স্পেসিফিকেশন দিলে তারা তা বানাতে পারবে। ঠিকভাবে পরিকল্পনা রূপায়িত হলে খুবই ভালো কথা।''

কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জামের জন্য বিদেশের মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতে হবে। যেমন, রাফাল যুদ্ধবিমান। কিন্তু তাই বলে সামরিক পণ্যবাহী বিমান দেশে না বানানোর কোনো কারণ নেই। আর প্রতিরক্ষা সামগ্রীর ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্থার প্রবেশে কোনো বাধা নেই। তাই ভারতীয় সংস্থাগুলি এখন বিদেশি সংস্থার সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধছে। টাটা, মহিন্দ্রা, রিলায়েন্স, আদানির মতো সংস্থাগুলি এই সুযোগ নিচ্ছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে পারলে তারা সব চেয়ে বেশি লাভবান হবে।

প্রাক্তন মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বলেছেন, ''এখন আমরা যে সব সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আনি, সেগুলিই ঘরে বানাবার চেষ্টা করব। তারপর আমদানি বন্ধ করা হবে।'' কিন্তু রাজনাথ যে সময়সীমা দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে, এই বছরের শেষ থেকেই কিছু সামরিক জিনিস আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়ে যাচ্ছে। কিছু জিনিসের আমদানি এখনই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বাকি জিনিসের আমদানি বন্ধ পর্যায়ক্রমে হবে।

প্রশ্ন হলো, সেরা প্রযুক্তির জিনিস পাওয়া নিয়ে। ভারতীয় কোম্পানিগুলি যদি বিদেশি বড় সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম বানাতে পারে, তা হলে ভারতের লাভ হবে এবং ভারতে জিনিস তৈরি হবে। না হলে এটা আরেকটা গিমিকের পর্যায়ে থেকে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)