একদিকে মানুষের খাদ্যের অভাব অন্যদিকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের গতি কমতে থাকায় আফগানিস্তানের পরিস্থিতি ক্রমশই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল সংস্থা ইউনিসেফ৷ তাদের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান সামান্থা মর্ট ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, দেশটির দুই কোটি ৩০ লাখ মানুষের এখন সহায়তা প্রয়োজন৷ এই বিরাট জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানো অনেকটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে থাকা সংকটে পরিণত হচ্ছে৷
বিশেষ করে শীত আসতে থাকায় ইউনিসেফসহ মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোকে এখন রীতিমত সময়ের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘চার্টার্ড ফ্লাইটে করে ইউনিসেফ সহায়তা নিয়ে আসছে, পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়েও সহায়তা আসছে, কিন্তু প্রতিদিনই ঠাণ্ডা বেড়ে চলছে৷''
এরই মধ্যে পার্বত্য ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বরফ পড়তে শুরু করেছে৷ কিছু কিছু জায়গার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে৷ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আগে মানুষকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছানো সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান সামান্থা৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট
গত আগস্টে কাবুলের দখল নেয় তালেবান৷ তারপর মোটামুটি সারা দেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলেও অর্থনীতি দ্রুত চরম বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে৷ আন্তর্জাদিক দাতা সংস্থাগুলো আফগানিস্তান ছেড়েছে৷ বিদেশি সৈন্যরা চলে যাওয়ার পর থেকে দৃশ্যত বিদেশের কোনো অর্থনৈতিক সহায়তাও পাচ্ছে না তালেবানের আফগানিস্তান৷ প্রসঙ্গত, আফগানিস্তানের নাগরিক সেবা সংশ্লিষ্ট খরচের তিন চতুর্থাংশই বিদেশি সহায়তা নির্ভর৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
ব্যাংকে টাকার অভাব
আশরাফ গনি সরকারের রেখে যাওয়া ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সম পরিমান অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পড়ে আছে৷ তালেবান সরকার তা তুলতে পারছে না৷ অন্যদিকে সরকার নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি টাকা তোলায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় অনেকে নিজের জমানো টাকাও প্রয়োজনমতো তুলতে পারছেন না৷ ওপরের ছবিতে এক ব্যাংকের সামনে টাকা তুলতে আসা মানুষদের দীর্ঘ লাইন৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
বেকারত্ব এবং বেতন-সমস্যা
গনি সরকারের আমলের অনেক সরকারি-বেসরকারি কর্মচারি তালেবান আমলে চাকরি হারিয়েছেন৷ এ কারণে আগে থেকেই ধুঁকতে থাকা আফগানিস্তানে বেকারত্ব আরো বেড়েছে৷ তাছাড়া কর্মরতদের অনেকেই বেতন নিয়মিত পাচ্ছেন না বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন৷ ছবিতে বেকারত্ব ও নারীদের ওপর আরোপিত নানা বিধিনিষেধের বিরুদ্ধে আফগানদের বিক্ষোভ মিছিল৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
খাদ্যের জন্য আসবাব বিক্রি, ভিক্ষা
খাদ্যপণ্যের তীব্র সংকট দেখা দিচ্ছে আফগানিস্তানে৷ দাম বাড়ছে হু হু করে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, খাবার কেনার টাকা জোগাড় করতে তারা এখন ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করছেন৷ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা আজমল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি এমন কয়েকজন সাবেক চাকুরিজীবীকে চেনেন, যারা ‘‘এখন বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করছেন, কিংবা দিনমজুরের কাজ করছেন৷’’
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা
খরা এবং করোনা মহামারির মাঝে আফগানিস্তান এখন এমন এক অবস্থায় যে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, সেখানে চরম মানবিক সংকট অত্যাসন্ন৷ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি)-র আফগানিস্তান শাখার প্রধান মেরি-এলেন ম্যাকগ্রোয়ার্টি মনে করেন, আফগানিস্তানের অন্তত ৮৭ লাখ মানুষ এ মুহূর্তে ‘‘অনাহার থেকে এক পা দূরে৷’’ এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আফগানিস্তানে অচিরেই ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিতে পারে৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
আইএমএফ-এর হুঁশিয়ারি
এদিকে আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারণে শরণার্থী সংকট চরম রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)৷ সংস্থাটি বলেছে, আফগানিস্তানের অর্থনীতি এ বছর ৩০ শতাংশ পর্যন্ত সঙ্কুচিত হতে পারে। এর প্রভাবে লাখ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যকে বরণ করে নিতে বাধ্য হবে৷ এর প্রভাব প্রতিবেশী দেশগুলোতেও নানাভাবে পড়বে বলে মনে করে আইএমএফ৷
-
আফগানিস্তানের সরকারি কর্মচারিরাও নামছেন ভিক্ষায়
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আশঙ্কা
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি নির্ধারণ কমিটির প্রধান ইয়োসেপ বোরেল-ও আফগানিস্তান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন৷ গত অক্টোবরে এক ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘‘ভয়ঙ্কর এক মানবিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান৷ সামাজিক-অর্থনৈতিক বিপর্যয় চরম রূপ নিচ্ছে৷ এ পরিস্থিতি আফগানদের এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্যও বিপদ ডেকে আনতে পারে৷’’
‘আফগানিস্তান মানবিক দুর্যোগের মুখে' রয়েছে বলে গত সপ্তাহে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূতও৷ তিনি জানান, প্রায় চার কোটি জনগোষ্ঠীর দেশটির ২২ শতাংশ মানুষ প্রায় দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছে৷ আরো ৩৬ শতাংশ প্রচণ্ড খাদ্যা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন, যাদের প্রয়োজনীয় খাবার কেনার সামর্থ্য নেই৷
এদিকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এফএও এর প্রতিনিধি রিচার্ড ট্রেনচার্ড ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে৷ গ্রাম ছাড়িয়ে প্রতি ১০ শহরের নয়টিতেই খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে৷ তিনি মনে করেন, দেশটিতে কাজ করা মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলো আগামী বছর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আফগানিস্তানের জন্য ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের আহ্বান জানাবে৷ এর আগে কোন দেশের মানবিক সহায়তায় এত বড় অঙ্কের অর্থের আবেদন জানানোর উদাহরণ নেই৷
গত আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর আফগানিস্তানের অর্থনীতি ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে৷ দেশটির ধ্বসে পড়া অর্থনীতি উগ্রবাদের শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
যেন পুরুষের দেশ
তালেবান দখল নেয়ার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবন ফিরছে আফগানিস্তানে ৷দোকান, অফিস-আদালত খুলছে৷ তবে কোনো জায়গাতেই নারীদের তেমন দেখা যায় না৷ ছবির এই রেস্তোরাঁতেও খেতে আসা সবাই পুরুষ৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
লিঙ্গবৈষম্য
কাবুলের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আফগানিস্তানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এখন ছেলে আর মেয়েদের বসতে হয় আলাদা৷ মাঝে পর্দা অথবা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দিয়ে আলাদা করা হয় তাদের৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারী-পুরুষের বৈষম্য এভাবে তুলে ধরতে চায় তালেবান৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তালেবান নেতা আব্দুল বাগি হাক্কানি বলেন, ‘‘সহশিক্ষা ইসলামের মূল নীতিমালা এবং আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ, রীতিনীতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
নারীর নিয়ন্ত্রিত অধিকার
হেরাতের মসজিদে এভাবেই এখন নামাজ আদায় করতে যান নারীরা৷ নারীদের শুধু নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকারই কেড়ে নেয়া হয়নি, তালেবানের সাংস্কৃতিক কমিশনের প্রধান আব্দুল্লাহ ওয়াসিক জানিয়েছেন, এখন থেকে খেলাধুলাতেও সীমিত পরিসরে অংশ নিতে পারবেন মেয়েরা৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
অলি-গলিতেও সশস্ত্র তালেবান
ছবির এই রাস্তার মতো আফগানিস্তানের সব শহরের সব রাস্তায়ই থাকে তালেবান পাহারা৷ সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধারা কেউ পশ্চিমা পোশাক পরেছেন কিনা, তালেবানবিরোধী কিছু করছেন কিনা এসব দিকে কড়া নজর রাখেন৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
বেকারত্ব বাড়ছে
কাবুলের রাস্তার পাশে বসে কোনো কাজের সুযোগের অপেক্ষায় কয়েকজন দিনমজুর৷ আফগানিস্তানে বেকারত্ব দ্রুত বাড়ছে৷ জাতি সংঘের আশঙ্কা, বিদেশি সহায়তা না পেলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেকারত্ব ভয়াবহ পর্যায়ে চলে যেতে পারে, দারিদ্র্যের হারও সর্বশেষ সমীক্ষার ৭২ শতাংশ থেকে বেড়ে শতকরা ৯৮ ভাগ হয়ে যেতে পারে৷
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানকে চ্যালেঞ্জ
প্রতিবাদ, বিক্ষোভ রোধে লাঠি, বেত, এমনকি আগ্নেয়াস্ত্রও চালায় তালেবান৷ এ বিষয়ে তালেবানকে সতর্কও করেছে জাতিসংঘ৷ তালেবানের হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে চারজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেক৷ তা সত্ত্বেও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে সোচ্চার নারীরা৷ ওপরের ছবিতে এক নারী বিক্ষোভকারীর হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের (নারীর) ক্ষমতার ফলাফল৷’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানের নারী সমর্থক
তালেবান দখল নেয়ার পর আফগানিস্তানে তালেবান সমর্থক নারীদেরও দেখা যাচ্ছে৷ ওপরের ছবিতে তালেবান সমর্থক নারীদের বিক্ষোভের এক প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘মুজাহিদিনের দৃষ্টিভঙ্গি ও ব্যবহারে আমরা সন্তুষ্ট৷ ’’
-
তালেবানের এই আফগানিস্তান
তালেবানের পক্ষপাত
তালেবানবিরোধীদের সমাবেশে হামলা হয়েছে, সেই খবর প্রকাশ করতে যাওয়া সাংবাদিকদেরও ধরে নিয়ে পিটিয়েছে তালেবান৷ অন্যদিকে তালেবান সমর্থকদের সমাবেশ কাভার করতে আহ্বান জানানো হয় সাংবাদিকদের৷
সউ-ই ফান ব্রুনেরসুম/এফএস