আন্দোলন কোন পথে, আলোচনায় চিকিৎসকরা
৩ অক্টোবর ২০২৪সাগর দত্ত মেডিক্যালে নারী চিকিৎসকদের হেনস্থার প্রতিবাদে আর জি করের আন্দোলন নতুন পর্বে এসে পৌঁছেছে। কাজে ফেরার পরও ফের লাগাতার কর্মবিরতির পথে যেতে চাইছেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। তবে একটি অংশ অন্য পন্থায় আন্দোলন পরিচালনা করতে চাইছেন বলে সূত্রের খবর। প্রতিবাদের সঙ্গে থাকা সিনিয়র চিকিৎসকরা এই ভাবনাকে সমর্থন করছেন।
আন্দোলনের দিশা
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি শুরু করেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ৪২ দিন লাগাতার কর্মবিরতি চলার পর রাজ্যের আশ্বাসের ভিত্তিতে কাজে যোগ দেন তারা। কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বর সাগর দত্ত হাসপাতালে বহিরাগতদের ফিমেল ওয়ার্ডে ঢুকে হামলা পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলেছে। ফের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির পথে জুনিয়র চিকিৎসকরা।
প্রথম দফার কর্মবিরতিতে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সিনিয়র চিকিৎসকরা বাড়তি চাপ সামলানোর চেষ্টা করলেও হাজার হাজার জুনিয়রের অনুপস্থিতি সেটা পূরণ করতে পারেনি। ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন গরিব মানুষ। রাজ্য শীর্ষ আদালতে দাবি করেছে, এই কর্মবিরতির ফলে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে চিকিৎসার অভাবে।
২১ সেপ্টেম্বর কাজে যোগ দিলেও দ্বিতীয় দফায় গত সোমবার থেকে ফের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ডাক দিয়েছিল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট। সেদিন সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি ছিল। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় নির্দেশ দেন, শুধু জরুরি নয়, হাসপাতালের সব বিভাগে পরিষেবা দিতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের।
এরই মধ্যে রাজ্যের কয়েকটি জেলা বানভাসি। উৎসবের সময় সিনিয়র চিকিৎসকদের ছুটিতে যাওয়ার কথা। ফলে জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দিলে সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আবার পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, তা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
সমাবেশে ভিন্ন স্বর
মহালয়ার দুপুরে জুনিয়র চিকিৎসকরা মহামিছিলের ডাক দিয়েছিলেন। এরপর ছিল মহাসমাবেশ। রানি রাসমণি রোডের সমাবেশে ফ্রন্টের নেতৃত্বের মুখে এমনই বার্তা ছিল যে, সাধারণ মানুষকে সমস্যায় না ফেলে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।
এই আন্দোলনের অন্যতম মুখ দেবাশিস হালদার বলেন, "আমরা আন্দোলন থেকে সরব না। আরো তীব্র হবে প্রতিবাদ। প্রয়োজনে দিল্লি যাব। যদি আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করি, সেটা কারো চাপে নয়, জনতার স্বার্থে করব। এতে আন্দোলনের ঝাঁজ কমবে না।"
জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের মতে, কাজ চালিয়ে আন্দোলন তীব্র করে তোলা সম্ভব। একদিকে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিচার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে পরিষেবায় সামিল হলে জনতার সহানুভূতি তাদের সঙ্গে থাকবে।
সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক জনপ্রতিনিধি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে কড়া মন্তব্য করেছেন। তারা এভাবে যে জনমত তৈরি করতে চাইছেন, তা চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষকে আরো বিরূপ করে তুলবে বলে মত আন্দোলনকারীদের একাংশের।
এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে চিকিৎসক সংগঠনের নেতা ডা. পুণ্যব্রত গুণ সমাবেশে বলেন, মানুষ যাতে আন্দোলনের পাশে থাকেন, সেটা ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জুনিয়র চিকিৎসকদের। সিনিয়র চিকিৎসক কুণাল সরকারের মতে, এই আন্দোলন মানুষের বিরুদ্ধে নয়। বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সাংবাদিক প্রসূন আচার্য ডিডাব্লিউকে বলেন, "বিভিন্ন দলের নেতারা আন্দোলনের নেতৃত্বে আছেন। তাদের মতের অমিল রয়েছে। নভেম্বরে পরের সেমিস্টার। এর মধ্যে মাস দুয়েক পড়াশোনা শিকেয় ওঠায় জুনিয়রদের একাংশ অসন্তুষ্ট। সরকারি বা করপোরেট হাসপাতালের সিনিয়র যে চিকিৎসকরা আন্দোলনের সমর্থক, তারা কাজ চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছেন। এসব কারণে বিভাজিত হয়ে পড়ছে আন্দোলন।"
ডা. গুণ ডিডাব্লিউকে বলেন, "চিকিৎসকদের মধ্যে বিভাজন হয়েছে এটা সম্পূর্ণ অপপ্রচার। সাধারণ মানুষ গোড়া থেকে এই আন্দোলনের পাশে রয়েছেন। এখনো তারা সমর্থন জানাচ্ছেন। জুনিয়র চিকিৎসকরা কাজে ফিরেছিলেন। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় দেখা যাচ্ছে তাদের সুরক্ষা এখনো নেই। তারা ইচ্ছে করে কাজে ফিরছেন না, রোদে পুড়ে জলে ভিজে আন্দোলন করছেন, এমন নয়।"
মামলার অগ্রগতি নিয়ে খুশি নন আন্দোলনকারীরা। প্রসূনের বক্তব্য, "বুধবার যে সেটিং তত্ত্ব জুনিয়র চিকিৎসকরা সামনে রেখেছেন, সেটা ভয়ঙ্কর। শীর্ষ আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু মামলা নিয়ে বিরোধীরাও সেটিংয়ের কথা বলেনি। পরের শুনানিতে এ নিয়ে আদালত কিছু বলে কিনা দেখতে হবে।"