1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আত্মপ্রেম মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে

১৮ নভেম্বর ২০১৯

হামবড়া ভাব, নিজেকে নিয়েই মগ্ন মানুষের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া মোটেই সহজ নয়৷ কিন্তু এমন ‘নার্সিসিস্ট’ প্রকৃতির মানুষের মনের মধ্যে ভালোবাসা ও স্বীকৃতির বিপুল চাহিদা থাকে৷

https://p.dw.com/p/3TDhv
প্রতীকী ছবিছবি: imago/Westend61

এক ব্যক্তি নিজের এই চরিত্র বদলে বাকিদের সাহায্য করার চেষ্টা করছেন৷

সবাই ভাবেন, সবজান্তা স্বভাবের ব্যক্তিরা আসলে আত্মপ্রেমেই মগ্ন৷ কিন্তু খোলসের আড়ালে অন্য এক চিত্র পাওয়া যায়৷ যেমন লেওনার্ড আন্ডার্স আত্মপ্রেমী ব্যক্তিত্বের ব্যাধিতে ভুগছেন৷ ফলে তিনি আশেপাশের মানুষকে বেশ চটিয়ে ফেলেন৷ নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তিনি বলেন, ‘‘অন্যের কাছে আমার জোরালো চাহিদা ছিল, বিশাল প্রত্যাশা জাগতো৷ সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলেই আমি দ্রুত হতাশ হয়ে পড়তাম৷ কথা কাটাকাটি হতো, অভিযোগ করতাম, একেবারেই প্রশংসা শুনতে পারতাম না৷ নিজেকে ভালোবাসার যোগ্য মনে না করায় মনে হতো, বাকিরা আমাকে বোকা বানাচ্ছে৷’’

শৈশবে লেওনার্ড বাবা-মা-র কাছ থেকে উষ্ণতা ও স্বীকৃতি পাননি৷ তাঁর বাবা পরিবার ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন৷ মা ছোট বোনকে বেশি ভালবাসতেন৷ ফলে লেওনার্ড নিজেকে পরিত্যক্ত মনে করতেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি আমার মায়ের জন্য সবকিছু ঠিক করার চেষ্টা করতাম৷ মায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাবার চেষ্টা করতাম৷ কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী সে সব পাইনি৷’’

আত্মপ্রেম যখন ক্ষতির কারণ

স্কুলেও সহপাঠীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক সম্ভব হয়নি৷ তাঁকে প্রায়ই হয়রানির শিকার হতে হয়েছে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লেওনার্ড বলেন, ‘‘তখনই আমার মধ্যে আত্মরতিমূলক প্রবণতা গড়ে উঠছিল৷ পয়সা খরচ করে বন্ধুত্ব কেনার চেষ্টা করতাম৷ আমাকে খেলায় না নিলে জন্মদিনে আমন্ত্রণ অথবা টফির লোভ দেখিয়েছি৷ ভেবেছিলাম এভাবে হয়তো বন্ধুত্ব পাতাতে পারবো৷’’

লেওনার্ড আন্ডার্স স্বীকৃতি চাইলেও বাস্তবে তাঁর ঠিক এর বিপরীত অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ প্রশিক্ষণের সুযোগ হাতছাড়া হবার পর তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন৷ পরে হাসপাতালে গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন যে, তাঁর সাহায্যের প্রয়োজন রয়েছে৷ সে সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, ‘‘কারণ, আমি সত্যি বড় কষ্ট পেয়েছি৷ আর সহ্য করতে চাইছিলাম না৷ জীবনটা গুছিয়ে নিয়ে আর সবাইকে চটাতে চাইছিলাম না৷ আশেপাশের মানুষের সঙ্গে এই সংঘাতই আমার মূল সমস্যা ছিল৷’’

কয়েক বছরের চিকিৎসার পর নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও জীবন সম্পর্কে তাঁর ধারণা বদলে গেছে৷ নিজের সমস্যার মূল কারণগুলি বুঝতে পেরেছেন তিনি৷ লেওনার্ড আন্ডার্স বলেন, ‘‘নার্সিসিস্টরা সবসময় ভালোবাসা চান এবং সে জন্য তারা সবকিছু করতে প্রস্তুত৷ সেই লক্ষ্য পূরণ না হলে তাদের মনে ক্রোধ, ঘৃণা বা আগ্রাসী মনোভাব জেগে ওঠে৷ এই আচরণ আসলে মরিয়া হয়ে সাহায্যের আকুতির মতো৷ সেটা না জানা থাকলে নার্সিসিস্টদের খারাপ মানুষ মনে হতে পারে৷ জানা থাকলে বুঝতেন যে, ভালোবাসা পেতেই তারা এমন আচরণ করে৷ অন্য কোনো পথ সম্পর্কে তারা সচেতন নয়৷’’

লেওনার্ড আন্ডার্স নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখেছেন৷ বর্তমানে তিনি ন্যাচারোপাথ হিসেবে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন৷ কোচিংয়ের মাধ্যমে তিনি নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জ্ঞান বিতরণ করেন৷ এভাবে তিনি নার্সিস্টদের সম্পর্কে ভুল ধারণাও কমাতে চান৷ তাঁর মতে, ‘‘আমার অজস্র অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জানি, কতটা খারাপ লাগে যখন মনে হয় কেউ আমাকে বোঝে না, সবাই আমার বিরুদ্ধে৷ যা ভাবি সবই ভুল৷ তাদের অনুভূতি বুঝতে পারি৷ নিজের সাফল্যের ভিত্তিতে বাকিদেরও সাহায্য করতে চাই৷’’

লেওনার্ড আন্ডার্স মনে করেন, চিকিৎসা শেষ হয়ে গেছে৷ এবার তিনি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা করতে পারেন৷

মিরা ফ্রিকে/এসবি