1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আট ঘণ্টা ঘুম স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী?

৩ মে ২০২২

রাতে আট ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকবেন, এটা নাকি ‘গোল্ডেন রুল'৷ তবে চীন এবং যুক্তরাজ্যের গবেষকদের একটি স্টাডি বলছে, প্রবীণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ঘুমের ব্যাপারটা একটু আলাদা৷

https://p.dw.com/p/4AlkX
BG Schlafende Senioren
ছবি: Shotshop/IMAGO

প্রাপ্তবয়স্কদের অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত, এটাকে প্রায় নিয়ম বলে মেনে নিয়েছি আমরা৷ তবে একটা বয়সের পর এই আট ঘণ্টা ঘুমের বিষয়টি মোটেও ঠিক নয়৷

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং চিনের ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের স্টাডি বলছে, মধ্যবয়সি এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সাত ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট৷ বার্ধক্য এবং ঘুম নিয়ে নেচারে একটি স্টাডি প্রকাশিত হয়েছে৷ সেখানে গবেষকরা দেখিয়েছেন, মানসিক স্বাস্থ্য ও অবধারণের কুশলতার জন্য সাত ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট৷

৩৮ বছর থেকে ৭৩ বছর বয়স পর্যন্ত পাঁচ লাখ ব্যক্তির তথ্য নিয়ে এই স্টাডি করা হয়েছে৷ গবেষণা বলছে, কম ঘুম বা অতিরিক্ত ঘুম–এই দুটিই মানসিক স্বাস্থ্য এবং জ্ঞানার্জন সংক্রান্ত দক্ষতার জন্য ক্ষতিকারক৷

এই স্টাডিতে অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের ঘুমের ধরন, শারীরিক সক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে  বিজ্ঞানীদের জানিয়েছিলেন৷ স্টাডির জন্য বেশ কিছু জ্ঞানভিত্তিক কাজ করতে দেয়া হয়েছিল তাদের৷ তাদের  দৃষ্টি সংক্রান্ত মনোযোগ ক্ষমতা (ভিস্যুয়াল অ্যাটেনশন) দেখেছেন বিজ্ঞানীরা৷ স্মৃতি এবং সমস্যা সমাধানে তারা কতটা দক্ষ, সেগুলিও দেখা হয়েছে৷ স্টাডি অনুযায়ী, যারা একটানা সাত ঘণ্টা ঘুমান, তাদের ক্ষেত্রে এ সব কাজ তুলনামূলকভাবে সহজ ছিল৷

টানা ঘুমাতে পারলেও ঘুমের ধরন অনেকের ক্ষেত্রে ওঠানামা করে৷ কেউ আবার একটানা সাত ঘণ্টা ঘুমাতে পারেন৷ এই দুই ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই ইতিবাচক ফল মিলেছে৷ তবে, জরুরি কোনো বৈঠকের আগে কেউ হয়তো চার ঘণ্টা ঘুমালেন৷ পরদিন তিনি ১০ ঘণ্টা ঘুমালেন৷ সেক্ষেত্রে কিন্তু কোনো লাভ হবে না৷

ঘুমে ব্যাঘাত, স্মৃতিলোপের ঝুঁকি?

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং এই স্টাডির কো-অথর বারবারা সাহাকিয়ান বলেন, ‘‘সব মানুষেরই সারা রাত ভালোভাবে ঘুমানো দরকার৷ বিশেষ করে, বয়স বাড়লে ঘুমের দরকার আরো বেশি৷''

গবেষকরা বলছেন, ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের বিষাক্ত পদার্থ অর্থাৎ টক্সিন বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া বাধা পায়৷ ‘স্লো-ওয়েভ' বা ‘ডিপ স্লিপ'-এ যে কোনো বাধা জ্ঞানার্জনের দক্ষতা কমিয়ে দিতে পারে৷ এর ফলে স্মৃতিশক্তিতে প্রভাব পড়তে পারে৷ এছাড়াও  মস্তিষ্কে অ্যামাইলয়েড নামের একটি প্রোটিন তৈরি হয়৷ এই অ্যামাইলয়েড ঠিকমতো কাজ না করলে মস্তিষ্কে জট তৈরি হয়৷ এর ফলে স্মৃতিলোপের (ডিমেনশিয়া) সম্ভাবনা রয়েছে৷

প্রবীণদের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত ঘুমে জ্ঞানার্জন সংক্রান্ত দক্ষতা কমে যায়৷ ফুডান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-গবেষক জিয়ানফেং ফেং বলেন, ‘‘আমরা যদিও জোর দিয়ে বলতে পারি না যে কম ঘুম বা অতিরিক্ত ঘুমের ফলে জ্ঞান সংক্রান্ত সমস্যা তৈরি হয়৷ কিন্তু স্টাডি করে এই বিষয়টি দেখা গিয়েছে৷''

কতক্ষণ ঘুম? মস্তিষ্কে কী প্রভাব?

গবেষকরা মস্তিষ্কের ইমেজিং এবং জিনসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করেছেন৷ ৪০ হাজারেরও কম মানুষের ক্ষেত্রে এই তথ্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা৷ সেই স্টাডি বলছে, ঘুমের পরিমাণ হিপ্পোক্যাম্পাসের (মস্তিষ্কের স্মৃতি এবং শিক্ষাকেন্দ্র) গঠনের পার্থক্যের জন্য দায়ী৷ এছাড়াও মস্তিষ্কের অন্য আরেকটি অংশ প্রি-সেন্ট্রাল কর্টেক্সের সঙ্গেও ঘুমের সম্পর্ক রয়েছে৷

বার্ধক্যের ফলে অ্যালঝাইমার্স এবং স্মৃতিলোপের ঝুঁকি বাড়ে৷ বয়স বাড়ার সঙ্গে জ্ঞান সংক্রান্ত ক্ষমতা কমে যাওয়া এবং ঘুমের সময়সীমার সম্পর্ক রয়েছে৷ এ বিষয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন, মনে করেন বিজ্ঞানীরা৷

সাহাকিয়ান বলেন, ‘‘প্রবীণদের জন্য একটানা ভালোভাবে ঘুমের উপায় খুঁজে বের করতে হবে৷ শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখাও জরুরি৷ বিশেষ করে মানসিক রোগী এবং ডিমেনশিয়ার রোগীদের বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে৷''

তবে এই স্টাডিতে অংশগ্রহণকারীদের ৯৪ শতাংশ ছিলেন শ্বেতাঙ্গ৷ তাই অন্য জাতি কিংবা সাংস্কৃতিক পটভূমিতে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিদের জন্য এই স্টাডি আদৌ কতটা কার্যকর তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি৷

আরকেসি/কেএম (কার্লা ব্লেইকার)