সারা বিশ্বে করোনায় মারা গেছেন প্রায় ২৫ লাখ মানুষ। তার মধ্যে পাঁচ লাখই অ্যামেরিকায়। দুই বিশ্বযুদ্ধ ও ভিয়েতনাম যুদ্ধ মিলিয়ে যত মানুষ মারা গেছিলেন, তার থেকে বেশি মানুষ অ্যামেরিকায় করোনায় মারা গেছেন। সোমবার জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির দেয়া তথ্য জানাচ্ছে, অ্যামেরিকায় করোনায় মৃতের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন, এই মাইলস্টোন খুবই ভয়ঙ্কর ও হৃদয়বিদারক। তিনি বলেছেন, প্রত্যেক মানুষকে একটি সংখ্যা হিসাবে দেখা উচিত নয়। হোয়াইট হাউসে আবেগতাড়িত ভাষণে বাইডেন বলেছেন, ''জাতি হিসাবে আমরা ভাগ্যের এই এই নিষ্ঠুরতা মেনে নিতে পারি না। আমি সকলকে অনুরোধ করছি, যাঁরা চলে গেছেন, তাঁদের স্মরণ করুন। সতর্ক থাকুন, মাস্ক পরুন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন এবং টিকা নিন।''
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
যে টিকা দেওয়া হবে
মার্কিন-জার্মান যৌথ গবেষণার ফসল ফাইজার-বায়োনটেকের করোনা টিকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের দেওয়া শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার থেকে৷ জরুরি ভিত্তিতে এই টিকা দেওয়া শুরু হবে দেশের ৬৩৬টি টিকাপ্রদান কেন্দ্রের ১৪৫টিতে৷ এই ধাপে টিকা পাবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক নাগরিকরা৷ শেষ পরীক্ষার ফলাফল অনুযায়ী, এই টিকাটি ৯৫ শতাংশ কার্যকর হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে৷
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
যেভাবে পৌঁছাচ্ছে টিকা
ফাইজারের টিকাসংরক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে মিশিগানের কালামাজু শহরে৷ সেখান থেকে বিশেষ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত ট্রাকে করে টিকাগুলি পৌঁছাবে লানসিং ও গ্র্যান্ড র্যাপিডসের বিমানবন্দরে৷ কুরিয়ার সংস্থা ইউপিএস ও ফেডএক্সের বিশেষ বিমানে করে তা যাবে লুইসিয়ানা ও মেমফিসের কার্গো কেন্দ্রে৷ সেখান থেকে টিকাগুলি পৌঁছে যাবে দেশের নানা জায়গায়৷ এরপর, মঙ্গলবার ও বুধবার দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার টিকা যাবে এই একই পথে৷
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
কেন ফেডএক্স ও ইউপিএস?
ইউএস মার্শালের কড়া প্রহরায় এই টিকাগুলি সারা দেশে পৌঁছাবার দায়িত্বে রয়েছে অ্যামেরিকার শীর্ষ দুই কুরিয়ার সংস্থা ইউপিএস ও ফেডএক্স৷ এই দুই সংস্থা অন্য আরো কয়েকটি সংস্থার সাথে মিলে এর আগেও সফলভাবে কেমোথেরাপি ও অন্যান্য ওষুধ সরবারহ করে আসছে বহুদিন ধরে৷ প্রচুর পরিমাণে ড্রাই আইস ও বিশেষ ফ্রিজারে -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই টিকাগুলি সারা দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হবে এই দুই সংস্থা বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ৷
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
কর্মীরা যা বলছেন
ইউপিএসের সহকারী সংস্থা বয়েল ট্রান্সপোর্টেশনের প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু বয়েল বলেন, ‘‘আজ আমরা সাধারণ কুরিয়ার নয়, জীবনের আশা পৌঁছাচ্ছি৷ এই অনুভূতি অতুলনীয়৷’’ ক্রিসমাসের ছুটির মধ্যেও উপহারের কুরিয়ার ছাড়া সারা দেশে টিকা পৌঁছানোর কাজ করে যাচ্ছেন ইউপিএস ও ফেডএক্সের কর্মীরা৷
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
কবে কত টিকা
ড. মনসেফ স্লাওউই, যিনি টিকাপ্রদান কর্মসূচির মুখ্য উপদেষ্টা, জানান যে মার্চ মাসের মধ্যে দশ কোটি মানুষ টিকা পাবেন৷ ডিসেম্বর শেষ হবার আগেই মডার্না ও ফাইজারের টিকা মিলিয়ে মোট ৪ কোটি করোনা টিকার ডোজ পাওয়া যাবে, যা দুই কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত৷
-
অ্যামেরিকায় করোনা টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি তুঙ্গে
টিকা হারানোর সম্ভাবনা
দেশজুড়ে এই বিশাল আকারে টিকা পোঁছানোর কাজ বেশ অনেকটাই জটিল৷ তাই মাঝপথে টিকা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রুখতে প্রতিটি টিকাবাহী বাক্স, ট্রাক ও বিমানে বসানো আছে ট্র্যাকার, যার সাহায্যে কর্তৃপক্ষের নজরে সবসময়েই থাকবে বহু প্রতিক্ষিত এই করোনা টিকা৷ একটি টিকাও হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তাই নেই বললেই চলে, দাবি দু’টি সংস্থারই৷
এই দুঃখের সময়ে একটা আশার আলোও আছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমছে। ২১ জানুয়ারি থেকে এক সপ্তাহে করোনায় গড়ে মারা গেছিলেন চার হাজার মানুষ। ২১ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন এক হাজার ৮৯০ জন। ছয় কোটি ৪২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মতে, করোনায় মৃত্যু কমেছে ঠিকই, টিকা দেয়ার কাজও চলছে, তা সত্ত্বেও জুন পর্যন্ত আরো ৯০ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)