1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

অস্থিরতার কারণ শ্রমিক অসন্তোষ, নাকি গুজব?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ অক্টোবর ২০২৪

তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতা কমছেই না। গত এক মাসে কয়েক দফা সংঘর্ষে জড়িয়েছেন শ্রমিকরা৷ সোমবার যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের সময় গুলিতে নিহত হন একজন৷ গত দুই সপ্তাহে সংঘর্ষে শ্রমিকের মৃত্যুর এটি দ্বিতীয় ঘটনা৷

https://p.dw.com/p/4lInF
গাজীপুরে রাস্তার উপর পোশাক শ্রমিকদের অবস্থান
মঙ্গলবার আশুলিয়া ও গাজীপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন পোশাক শ্রমিকেরা ছবি: Md Rocky

শ্রমিক নিহত হওয়ায় মঙ্গলবার আশুলিয়া এলাকায় পোশাক শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন৷ বকেয়া বেতন ও বোনাস পরিশোধের দাবিতে তারা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করেন৷ সোমবার রাত ৯টা থেকে ২৪ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু করা হয়৷

মঙ্গলবার গাজীপুরে পোশাক কারখানার জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়৷ সংঘর্ষে পাঁচ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে৷ গাজীপুরের কোনাবাড়িতে এসট্রো নিটওয়্যারের জুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওই সংঘর্ষ হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ এই বরিরাগত জুট ব্যবসায়ীরাই গত মাসের শেষ দিকে পোশাক কারখানা অস্থির করে তুলেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে৷

শ্রমিক নিহত হলেও মঙ্গলবার আশুলিয়ায় অনেক পোশাক কারখানাই খুলেছে। তবে কিছু কারাখানার শ্রমিকরা এখন সবেতন ছুটিতে আছেন, কিছু কারখানায় লে অফ চলছে৷

পোশাক কারখানায় চলমান অস্থিরতা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সরোয়ার হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুরুতে পোশাক কারখানার জুট ব্যবসা নিয়ে বহিরাগতরা পোশাক কারখানায় নানা অস্থিরতায় ইন্ধন দিলেও এখন এর সঙ্গে নানা উপাদান যুক্ত হয়েছে। গুজব ছড়িয়েও পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরি করা হয়েছে৷’’

গত মাসের ১০ তারিখের মধ্যে বকেয়া বেতন দেয়ার কথা ছিল কিন্তু সবাই দিতে পারেনি: শামস মাহমুদ

তিনি বলেন, ‘‘সোমবার আশুলিয়ায় গুজবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে একজন পোশাক কর্মী সেনা সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছেন৷ দুপুরে মণ্ডল গ্রুপের পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে প্রশাসনের লোকজন শ্রমিক ও মালিক পক্ষের লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করছিলেন৷ ওই কারখানা থেকে একটু দূরে ন্যাশনাল ডেনিম নামে আরেকটি কারখানা আছে৷ সেই কারাখানায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে ওই (মণ্ডল) কারখানায় একজন শ্রমিককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে৷ এরপরই ওই কারখানার শ্রমিক ও ম্যাঙ্গো নামে আরেকটি কারখানার শ্রমিক এক হয়ে মণ্ডল গ্রুপের কারখানার সামনে জড়ো হয়ে সেনাবাহিনীর গাড়ির ওপর আক্রমণাত্মক হয়৷ তারপর সংঘর্ষ হয়। একজন নিহত হয়৷’’

‘‘ওই গুজবের ঘটনা না ঘটলে সোমবারের দুঃখজনক ঘটনা ঘটতো না, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছিল,” বলেন তিনি৷

তার দাবি, ‘‘এর আগেও নানা ধরনের গুজব ছাড়ানো হয়৷ এআরবি নামে একটি ফ্যাক্টরিতে আগুন দেয়ার আগে সেখানে আগে থেকেই মশাল ও পেট্রোল মজুত রাখা হয়েছিল৷’’

শ্রমিক নেতারা জানান, ‘‘৫ আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন খাতের মতো পোশাক কারখানার শ্রমিকরাও না বৈষম্য অবসানের দাবিতে আন্দোলনে নামেন৷ এরমধ্যে চারটির মতো দাবি আছে কমন৷ সেগুলো হলো: টিফিন, হাজিরা বোনাস, নিয়মিত বেতন পরিশোধ ও কিছু কিছু কারখানায় শ্রমিকদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টি৷ এর বাইরে বিভিন্ন পোশাক কারখানায় নিজস্ব সমস্যাও আছে৷ মালিকরা মোট ১৮ দফা দাবি বিভিন্ন পর্যায়ে মেনেও নেন। কিন্তু তারপরও শ্রমিকরা বকেয়া বেতন না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ আছে৷ আর সুযোগসন্ধানীরা সেটাকে ব্যবহার করছে৷ শুরুতে নারী শ্রমিক বেশি নিয়োগ করা যাবেনা- এমন অদ্ভুত দাবিও ছিল৷’’

তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক শামস মাহমুদ বলেন, ‘‘আসলে পোশাক কর্মীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেয়া হলেও আমরা সব কারখানার মালিক তো তাদের বকেয়া বেতন দিতে পারছি না৷ গত তিন মাস ধরে আমাদের রপ্তানি কমে গেছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে পাঁচ ভাগ রপ্তানি কমে গেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও কমেছে৷ গত মাসের ১০ তারিখের মধ্যে আমরা তাদের বকেয়া বেতন দেয়ার কথা বলেছিলাম, কিন্তু সবাই দিতে পারিনি৷ তিন মাসের বেতন বকেয়া আছে৷ এখন হয়তো বলছি ১০-২০টা কারখানা দিতে পারেনি৷ এটা মনে হতে পারে সংখ্যায় কম৷ কিন্তু ওই ১০টি কারখানায় যদি আনরেস্ট হয় তার প্রভাব কিন্তু অন্য কারখানায়ও পড়ে৷’’

তিনি জানান, ‘‘আমরা সরকারের কাছে স্বল্প সুদে ঋণ চেয়েছিলাম৷ কিন্তু সেটা সরকার দেয়ার কথা বললেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি৷ ব্যাংক ইচ্ছে করলে দিতে পারে, না-ও দিতে পারে৷ আমরা লোনটা পেলে তাদের বকেয়া বেতনটা দিতে পারতাম৷’’

তার কথা, ‘‘শুরুতে নানা ইস্যু ছিল৷ জুট ব্যবসা নিয়ে দ্ব্ন্দ্ব ছিল৷ অযৌক্তিক দাবি ছিল৷ যৌক্তিকগুলো অ্যাড্রেস করা হয়েছে৷ কিন্তু এখন যা হচ্ছে বকেয়া বেতনের দাবিতেই হচ্ছে৷ আর সেটার সুযোগ নিচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা৷’’

তিনি বলেন, ‘‘সোমবার যে একজন শ্রমিক নিহত হলেন এটা আমাদের পোশাক খাতের জন্য ভালো হয়নি৷ এরও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে৷’’

বিজিএমইএ নিহত পোশাক শ্রমিকের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেবে৷ আর সেনাবাহিনীও সহয়তা দেবে৷ আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে বিজিএমইএ দাবি করেছে৷

বহিরগতরা পোশাক কারখানায় নানা অস্থিরতায় ইন্ধন দিলেও এখন এর সঙ্গে নানা উপাদান যুক্ত হয়েছে: সরোয়ার হোসেন

পোশাক শ্রমিক নেতা ও মালিকরা বলেন, ‘‘আগে শিল্প পুলিশের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক অনেক স্ট্রং ছিল৷ তবে সরকার পতনের পর সেই নেটওয়ার্ক তেমন আর নেই৷ ফলে তারা আগাম তথ্যও পান না৷ সেনাসদস্যরা নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা দেখছেন৷ কিন্তু পুলিশের কাজ তো আর তাদের দিয়ে হচ্ছে না৷’’

এক তৈরি পোশাক কারখানার মালিক আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আসলে তৈরি পোশাক খাত এখন বড় সংকট পার করছে৷ তাই সরকারের উচিত সব পক্ষকে নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ করা৷’’

গুজব ছড়িয়ে গার্মেন্টসে অস্থিরতা সৃষ্টির কথা শোনা গেছে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের কণ্ঠেও৷ জড়িতদের অনেককেই চিহ্নিত করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি৷ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা  বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গার্মেন্টসে অস্থিরতায় একটা গ্রুপ উসকানি দিচ্ছে। একজন শ্রমিক নিহতের ঘটনায় শ্রমিকদের ভেতর থেকে প্রথম কেউ একজন গুলি ছুঁড়েছিল৷ এরপর পরিস্থিতি সহিংস হয়ে যায়৷ গুজব ছড়িয়ে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করানো হয়৷ পুলিশ গুলি ছুঁড়তে বাধ্য হয়েছে৷ যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে৷’’

শ্রমিক নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ১৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে৷

শ্রম উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘‘যেসব মালিক বেতন দিচ্ছে না, তাদের আইনের আওতায় এনে বকেয়া বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ অনেক মালিক পলাতক আছে৷ তাদের অনেক ঋণ আছে৷ সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে৷ প্রতিদিনই ঘটনা ঘটছে৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হলে সব পক্ষের সহযোগিতা করতে হবে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য