1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অলিম্পিকের বাইরে কুস্তিগীর বিনেশ, বিতর্ক তুঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৮ আগস্ট ২০২৪

আশা জাগিয়েও বিনেশ ফোগতকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। ওজন বেশি থাকায় ফাইনালে নামতে পারলেন না বিনেশ ফোগত।

https://p.dw.com/p/4jFCS
প্যারিস অলিম্পিকে জাপানের প্রতিযোগীকে হারাবার পর বিনেশ ফোগতের উচ্ছ্বাস।
ফাইনালে ওঠার পর বিনেশের এই আনন্দ ক্ষণস্থায়ী হলো। বাড়তি ওজনের জন্য তাকে বাতিল ঘোষণা করা হলো। ছবি: LUIS ROBAYO/AFP/Getty Images

প্যারিস অলিম্পিকে ৫০ কেজি বিভাগের কুস্তিতে ফাইনালে উঠেছিলেন বিনেশ। বুধবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে ফাইনালে নামার কথা ছিল তার। কিন্তু সকালেই দুঃসংবাদ আসে ফ্রান্স থেকে।

ওজনের জন্য বাতিল

অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী কুস্তিগীরদের প্রতিযোগিতায় নামার আগে ওজন নেয়া হয়। ওজন পরীক্ষা করা হয় দুইবার। প্রথম ও দ্বিতীয় দিন সকালে। প্রথম দিনে বিনেশের ওজন ছিল ৪৯ কেজি ৯০০ গ্রাম। কিন্তু দ্বিতীয় দিনে ওজন কিছুটা বেড়ে যায়। ৫০ কেজি ১০০ গ্রাম ওজন হওয়ায় প্রতিযোগিতায় নামার অনুমতি পাননি ভারতীয় কুস্তিগীর। 

প্রথম দিন প্রতিযোগিতায় যথেষ্ট কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন বিনেশ ফোগত। বিশেষ করে কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি হারিয়ে দেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন জাপানের ইউ সুজাকিকে। সেমিফাইনালে কিউবার বিরুদ্ধে লড়াইও সহজ ছিল না। 

এই পর্ব চুকে যাওয়ার পর পর্যাপ্ত আহার সেরেছিলেন বিনেশ। এতে তার ওজন প্রায় দুই কেজি বেড়ে যায়। সেই ওজন আর কমিয়ে উঠতে পারেননি বিনেশ।

সাধারণভাবে বিনেশের ওজন ৫৬ কেজির মধ্যেই থাকে। তাই তিনি ৫৩ কেজি বিভাগে লড়বেন, এমনই সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু এই বিভাগের জন্য অন্য এক ভারতীয় কুস্তিগীর যোগ্যতা অর্জন করায় ৫০ কেজিতে নামতে হয় বিনেশকে। প্রায় পাঁচ কেজির বেশি ওজন কমানো কঠিন হয়ে পড়ে। তবু মাত্র ১০০ গ্রামের জন্য পদক হাতছাড়া হল তার।

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য গত ২-৩ দিনে নামমাত্র জল খেয়েছিলেন বিনেশ। এর উপর একের পর এক কুস্তির পরিশ্রমে তার শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায়। সে কারণে বুধবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। বিনেশকে গেমস ভিলেজের ক্লিনিকে চিকিৎসা করেন স্থানীয় চিকিৎসকরা।

সারারাতের চেষ্টা ব্যর্থ

খাওয়া-দাওয়ার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়া কুস্তিগীর বা বক্সারদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। চিকিৎসক ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা দলের সঙ্গে থাকেন এই বাড়তি ওজন কমিয়ে দেয়ার জন্য। সেই অনুযায়ী মঙ্গলবার রাতভর না ঘুমিয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করে যান বিনেশ।

দীর্ঘক্ষণ কোনো খাবার ও জল না খেয়ে স্কিপিং করেছেন ভারতীয় প্রতিযোগী, জগিং করেছেন। ওজন কমানোর জন্য অন্যান্য অনুশীলনও করেছেন। তার চুল কিছুটা ছেঁটে ফেলা হয়। এর ফলে ওজন অনেকটাই এক রাতের মধ্যে কমিয়ে ফেলেন বিনেশ। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। 

বুধবার সকালে ওজন নেয়ার সময় দেখা যায়, ৫০ কেজির থেকে ১০০ গ্রাম ওজন বেশি হয়েছে বিনেশের। জামা কেটে ছোট করা হলেও লাভ হয়নি। অলিম্পিকের নিয়ম অনুযায়ী তাকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। 

ওজনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারায় ব্রোঞ্জ পদকের দাবিও করতে পারবেন না তিনি। বিনেশের বদলে সেমিফাইনালে পরাজিত কিউবার প্রতিযোগীকে ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র দেয় অলিম্পিক কমিটি। 

অন্তর্ঘাতের অভিযোগ

ভারতীয় কুস্তি সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে নারী কুস্তিগীরদের আন্দোলন সাম্প্রতিক অতীতে বিশ্বের নজর কেড়েছিল। এই আন্দোলনকারীদের মধ্যে ছিলেন বিনেশ ফোগত। দিনের পর দিন তিনি যন্তর মন্তরে ধরনা দিয়েছেন। এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই আন্দোলনের প্রধান দাবি ছিল জাতীয় কুস্তি সংস্থার প্রাক্তন প্রধান ও বিজেপি নেতা ব্রিজভূষণের শরণ সিংয়ের শাস্তি

বিরোধীদের অভিযোগ, বিনেশের সাফল্যে শঙ্কিত হয়ে উঠেছিল বিজেপি নেতৃত্ব। তিনি পদক জিতে ফিরলে সংবর্ধনা জানাতে হত। তাই পরিকল্পনা করে ফাইনালে খেলা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে বিনেশকে। যদিও এই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্র।

বিরোধীরা এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিবৃতি দাবি করেন সংসদে। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী মনসুখ মন্ডাভিয়া জানান, ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থা এনিয়ে কড়া প্রতিবাদ জানাচ্ছে ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড রেসলিং এর কাছে। মন্ত্রীর বক্তব্যে অসন্তোষ জানিয়ে সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেন ইন্ডিয়া ব্লকের সাংসদরা।

হতাশ ভারত

সোনার স্বপ্ন দেখা ভারতবাসীর কাছে ফোগতের এমন বিদায় কার্যত বজ্রপাতের মতো। বিনেশ হতাশায় অবসরের কথা ঘোষণা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমবেদনা জানিয়েছেন তাকে। তার কথায় ভারতীয় অলিম্পিক সংস্থার প্রধান পি টি ঊষা দেখা করেন ভারতীয় কুস্তিগীরের সঙ্গে। অলিম্পিক কমিটির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করা হয়। 

ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান, ব্রিজভূষণ ঘনিষ্ঠ সঞ্জয় সিং বলেন, ‘‘আমরা পি টি ঊষার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। তার সঙ্গে কথা বলার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব। আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।''

ফেডারেশনের সহ সভাপতি অসিতকুমার সাহা ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমি যদি বিনেশের প্রশিক্ষক হিসেবে থাকতাম, তাহলে পুরো চুল কেটে দিতাম। চুল গজাতে দিন ১৫ লাগত। তাতে হয়ত ও ফাইনাল খেলতে পারত। তবে এটাকে অন্তর্ঘাত বলে মনে করি না। তেমন হলে ফাইনালের আগেই হতে পারত।"

পশ্চিমবঙ্গ কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গৌতম ঘোষ ডিডাব্লিউকে বলেন, "খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমি বিনেশকে দীর্ঘদিন চিনি। একবেলা না খেয়ে থাকলেই যে কোনো মানুষের ১০০ গ্রাম ওজন কমে যায়। কিন্তু ফাইনালে আগে এটুকু ওজনের জন্য কাউকে বাতিল হতে দেখেছি বলে মনে পড়ে না।"