ব্যর্থতা
২১ মে ২০১২হাফ সেকেন্ড
শনিবার ফ্লোরিডায় অবস্থিত কেপ ক্যানাভেরাল এয়ার ফোর্স স্টেশনের নির্ধারিত প্যাডে অপেক্ষা করছিলো রকেট নাইন৷ স্থানীয় সময় ভোর চারটা ৫৫ মিনিটে এটি ছাড়বে৷ কন্ট্রোল রুমে বসা অনেক বিজ্ঞানীরাও রকেটটির উৎক্ষেপণ দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিলেন৷ শেষ মুহূর্তে রকেট উৎক্ষেপণের জন্য ক্ষণ গোনা শুরু হয় কন্ট্রোল রুম থেকে৷ টেন, নাইন, এইট......এভাবে জিরো পর্যন্ত, কিন্তু ঠিক হাফ সেকেন্ড আগে কি যেন হয়ে গেল, কম্পিউটার সংকেত দিলো কোন একটি কিছু গড়বড় হয়েছে৷ সঙ্গে সঙ্গে অপারেশন অ্যাবোর্ট, মানে উৎক্ষেপণ স্থগিত৷ জানা গেলো, ফ্যালকন নাইনের সেন্ট্রাল ইঞ্জিনের প্রেসারে কোন সমস্যা হয়েছে৷ একটি রকেট উৎক্ষেপণের জন্য নয়টি ইঞ্জিনের সবগুলোকেই ঠিকঠাক কাজ করতে হয়৷ কিন্তু একটি ঠিকমত কাজ না করায় এই তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা৷
ইঞ্জিনে গোলমাল
এই ঘটনার পর সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎক্ষেপণ স্থগিত করার ঘোষণা দেয় স্পেসএক্স কোম্পানি৷ তাদের প্রেসিডেন্ট গোয়েন শটওয়েল জানান, ইঞ্জিনে তেমন কোন গোলমাল হয়নি৷ বরং তারা ইচ্ছে করেই যাত্রা স্থগিত রেখেছেন৷ এটাকে ব্যর্থতা বলতে নারাজ তিনি, কারণ তাঁর মতে উৎক্ষেপণের পরে এই ধরণের সমস্যা হলে সেটি হতো ব্যর্থতা৷ এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ঠিক শূন্য দশমিক পাঁচ সেকেন্ড আগে উৎক্ষেপণ স্থগিত করা হয় কারণ ঠিক সেই সময় পাঁচ নম্বর ইঞ্জিনটি নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ তার আগে পর্যন্ত নয়টি ইঞ্জিনই ঠিকঠাকভাবে কাজ করছিলো বলে তাঁর দাবি৷
আবার চেষ্টা
এদিকে যাত্রা স্থগিতের পর প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞানীরা ফ্যালকন নাইনের পরীক্ষা নিরীক্ষা শুরু করে দিয়েছেন৷ ধারণা করা হচ্ছে পাঁচ নম্বর ইঞ্জিনটিতে ঠিকমত জ্বালানি প্রবেশ করছিলো না বলে সেটি বেশি গরম হয়ে গিয়েছিলো৷ তবে আবারও রকেট উৎক্ষেপণের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলেছে স্পেসএক্স৷ গোয়েন শটওয়েল জানান, মঙ্গলবার অথবা বুধবার তাঁরা আবারও চেষ্টা করে দেখবেন৷
সোয়ুজের বিকল্প
ফ্যালকন নাইনের মাথায় বসে থাকা ড্রাগন ক্যাপসুলটিতে ছিলো হাফ টন খাদ্য এবং যন্ত্রপাতি৷ উদ্দেশ্য ছিলো নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রসদ জোগানো৷ মূলত এই উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছিলো বেসরকারি নভো প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স৷ কারণ এই প্রথমবারের মত বেসরকারি কোন নভোযান আইএসএস এ রসদ সরবরাহের কাজটি সম্পন্ন করতো৷ এতগুলো দশক ধরে মার্কিন নভোযানগুলো এই দায়িত্ব পালন করে আসছিলো৷ কিন্তু সেই পুরোনো নভোযানগুলোকে অবসরে পাঠিয়ে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ প্রতিষ্ঠান নাসা৷ আর ইদানিং নাসাও স্পেস শাটল আর তৈরি করছে না৷ বরং এজন্য রুশ নভোযান সয়ুজ তাদের একমাত্র ভরসা৷ তবে প্রতি নভোচারীর ‘টিকিট' বাবদ তাদেরকে ব্যয় করতে হয় ৪৭ মিলিয়ন ইউরো৷ এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছে বেসরকারি সংস্থা স্পেসএক্স৷ তারা জানিয়েছে, আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে তারা নভোচারী পাঠানোর মত উপযুক্ত যান তৈরি করবে আর তার টিকিটের দাম পড়বে ১৬ মিলিয়ন ইউরো করে৷ তাই নাসাও এখন স্পেসএক্স এর নভোযান তৈরিতে সহায়তা করছে বলে জানা গেছে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম (এএফপি, ডিপিএ)
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন