অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস নিয়ে নাগরিকদের ভাবনা
৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের এক মাস পূর্ণ হল৷ এই সময়ে সরকারের কাজ নিয়ে ডিডাব্লিউ বাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন কয়েকজন নাগরিক৷
মোঃ আব্দুল লতিফ, ডিম বিক্রেতা
আমি চাই এই সরকার সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করবে যেন গরিব-ধনী সবাই শান্তিতে বাস করতে পারে৷ সব জনগণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয় করতে পারেন৷ দ্রব্যমূল্যে যেন কোনো সিন্ডিকেট না থাকে৷ সরকার এরইমধ্যে এই বিষয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে, তবে সরকারকে আরো সময় দিতে হবে৷
জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
সরকারের কাজে তেমন অগ্রগতি দেখছি না৷ যদিও এত দ্রুত বলা ঠিক না৷ তারপরও পূর্বের স্বৈরাচারী সরকারের কর্মকাণ্ডের বিচারে পদক্ষেপ তেমন সন্তোষজনক নয়৷ মামলা যেগুলো হচ্ছে, সেগুলো আদৌ টিকবে কিনা জানি না৷ আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসায় কার্যকর পদক্ষেপ নেই৷ চাঁদাবাজি এখনো আগের মতো চলছে৷ ঘুস আগের মতো ব্যাপকহারে না হলেও থেমে নেই৷ আপনি বলবেন পুলিশ অ্যাক্টিভ না৷ কিন্তু এগুলো জনগণ শুনবে না৷
আদিবা সায়মা খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
এই সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন৷ তাদের পদক্ষেপ পছন্দ না হলে আমরা সমালোচনা করার সুযোগ পাচ্ছি৷ স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে যেহেতু নারীদের ভূমিকা ছিল, তাই নারীর ক্ষমতায়ন করতে হবে, নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে, তাদের সুযোগ দিতে হবে যেন তারা যোগ্যতা দেখাতে পারে৷ কিন্তু আমি এখন পর্যন্ত সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম দেখছি না৷
নাজিয়া ওহাব, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
অন্তর্বর্তী সরকারের দোষ-গুণ বিচার করার আগে যুক্তিসঙ্গত সময় দেয়া প্রয়োজন৷ কয়েকটা ভালো কাজ আছে, যেমন, এই সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বসেছে, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে স্বাক্ষর করেছে, আন্দোলনের কারণে দুবাইতে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের মুক্তির ব্যবস্থা করেছে৷ বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার এবং সহযোগীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়৷
লুৎফর রহমান, কেন্দ্রীয় সময়ন্বক
বিগত ১৫ বছরের যে অন্যায়, অবিচার জুলুম হয়েছে সেগুলোর ক্ষতচিহ্ন এখনও বিদ্যমান৷ এটা একমাসে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়৷ তবে আমি মনে করি, এই সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টাটুকু করেছে, ক্ষতে প্রলেপ দিতে পেরেছে৷ রাষ্ট্র সংস্কার, ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা বিলোপ ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি বেগবান করতে হয়ত তারা উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি৷ তবে এই বিষয়ে তাদের মধ্যে পজিটিভ অ্যাপ্রোচ দেখেছি, তাদের আন্তরিক ইচ্ছা রয়েছে৷
মাইশা মালিহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী
কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, যেমন বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতে বড় ধরনের রদবদল দেখতে পাচ্ছি৷ এই সরকারের কাছে আমরা সরাসরি পৌঁছাতে না পারলেও অনেকক্ষেত্রে আগের সরকারের চেয়ে আমরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছি৷ প্রত্যাশা হিসেবে প্রথমে যেটা চাই সেটা হলো রাষ্ট্রের ভেতর থেকে সংস্কার, সংবিধানকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে, প্রতিটি নাগরিকের অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে৷
সরদার নাদিম মাহমুদ শুভ, সহ-সমন্বয়ক
আমরা যে বাংলাদেশ চেয়েছি তা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে আমি মনে করি৷ আমাকে যদি সরকার সম্পর্কে দশ এর মধ্যে রেটিং করতে বলা হয় আমি নয় দিব, কারণ, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরেরা বাধা দিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, তারপরও এই সরকার বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে৷
ড. জাহিদ হোসেন, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ
সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ইতিবাচক৷ যেমন কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিল করেছে, এটা সুশাসনের ইঙ্গিত বহন করে৷ এছাড়া আহসান এইচ মনসুরের মতো ব্যক্তিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর নিয়োগ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ অনেকগুলো ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে হাত দিয়েছেন৷ যেগুলো আগে দুর্বৃত্তদের হাতে ছিল৷
নূর মোহাম্মদ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক
যে প্রক্রিয়ায় মামলাগুলো হচ্ছে সেটা কি সঠিক হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘একটা অভ্যুত্থানের পর আপনি চাইলেই সবকিছু সঠিকভাবে করতে পারবেন না৷ কেউ মামলা করতে গেলে পুলিশ যদি সেই মামলা না নেয় তাহলে তারা নিজেদের বঞ্চিত মনে করবে৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যে বলা হয়েছে মামলা মানেই গ্রেপ্তার নয়৷ এই মামলাগুলো তদন্ত হবে, তারপর পুলিশ চার্জশিট দেবে৷ এরজন্য সময় লাগবে৷ মনে হয় তদন্তে এগুলো ঠিক হয়ে যাবে৷’’