অজ্ঞাত স্থান থেকে তৎপরতা
শনিবার ভোরে বিএনপির নয়াপল্টনের অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয় বিএনপি মুখপাত্র ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে৷ এরপর দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয় আরেক যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদকে৷ কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না৷ তিনি প্রকাশ্যে সংবাদ মাধ্যমে কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেননি, যাননি কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও৷
তবে সংবাদ মাধ্যমে বক্তব্য বা বিবৃতি পাঠাচ্ছেন অজ্ঞাত স্থান থেকে লিখিত বা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে৷ সেখান থেকেই পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টা অবরোধের সময়সীমা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে৷
এদিকে রহুল কবির রিজভী আটক হওয়ার আগে থেকেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন৷ বিশেষ করে শাহবাগে বাসে আগুনের ঘটনায় তাদের আসামী করার পর তাদের আর প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না৷ এরপরও তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ আর ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদসহ আরো ৭ শীর্ষ নেতা এখন কারাগারে আছেন৷ তাই অবরোধ কর্মসূচি সফল করতে বিএনপির প্রথম সারিরতো দূরের কথা, তৃতীয় সারির কোনো নেতাকেও ঢাকার রাজপথে দেখা যাচ্ছে না৷ মাঝেমধ্যে বিএনপি ও জামায়াতের অপরিচিত নেতা-কর্মীদের ঝটিকা মিছিল ছাড়া ঢাকায় তেমন কোনো তৎপরতা নেই৷ তবে ঢাকার বাইরে কোনো কোনো নেতাকে তৎপর দেখা যাচ্ছে৷
অনেকদিন ধরেই রহুল কবির রিজভী বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয় আগলে রেখেছিলেন৷ দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই তিনি সেখানে থাকতেন৷ ঘোষণা করতেন দলের কর্মসূচি, দিতেন বক্তব্য-বিবৃতি৷
এই বিষয়ে কথা বলার জন্য বিএনপির অন্তত ১০ জন নেতাকে টেলিফোন করে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷ তবে বিএনপি নেতাদের আত্মগোপন নিয়ে গত সপ্তাহে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু৷ তিনি জানিয়েছিলেন কৌশলগত কারণেই বিএনপির শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে আছেন৷ তারা আত্মগোপনে থেকেই আন্দোলন পরিচালনা করছেন, দিচ্ছেন দিক নির্দেশনা৷ আর সে কারণেই অবরোধ কর্মসূচি সফল হচ্ছে৷ তিনি বলেছিলেন সময়মতো নেতারা প্রকাশ্যে আসবেন৷ তবে সোমবার শামসুজ্জামান দুদু'র মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়৷
অবশ্য ডয়চে ভেলে কথা বলতে সক্ষম হয়েছে বিএনপির সংস্কারবাদী নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী মেজর (অবঃ) হাফিজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে৷ তিনি মনে করেন সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কারণেই শীর্ষ নেতারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছেন৷ তিনি বলেন বর্তমান মুখপাত্র সালাউদ্দিন আহমেদের ঢাকা ও গ্রামের বাড়িতে পুলিশ হামলা চালিয়েছে৷ সে কারণেই তিনি অজ্ঞাত স্থান থেকে বক্তব্য, বিবৃতি দিচ্ছেন৷
তবে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব চাইলে প্রকাশ্যে এসে কথা বলতে পারেন বলে মনে করেন হাফিজ৷ তিনি বলেন, ‘‘হয়তো কৌশলগত কারণে তিনি (মির্জা ফখরুল) প্রকাশ্যে না এসে চেয়ারপার্সনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আন্দোলন পরিচালনা করছেন''৷
তাহলে কি বিএনপি আন্ডারগ্রাউন্ডের কোনো দল? এমন প্রশ্নের জবাবে হাফিজ বলেন, বিএনপি কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড দল নয় বলেই দেশের সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি সফল করছেন৷ সরকারের দুঃশাসনের কারণে বিএনপি নেতারা আত্মগোপনে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন বলে মনে করেন তিনি৷