1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রায়ের জন্য আর কত অপেক্ষা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২২ আগস্ট ২০১৭

১৩ বছর আগে ঢাকায় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হাত্যাচেষ্টা ও আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যা মামলার রায় কবে হবে তা নিশ্চিত নয়৷ তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আশা করেন, সব ঠিক থাকলে এ বছরই হতে পারে৷

https://p.dw.com/p/2iZk4
শেখ হাসিনা
ছবি: Reuters

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট৷ তখন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলীয় নেত্রী৷ ঐ দিন বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়৷ তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন৷ আহত হন প্রায় চার শতাধিক মানুষ৷

সেই দিন মঞ্চের পেছনেই ছিলেন ফটো সাংবাদিক আবু তাহের খোকন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা বক্তৃতা শেষে মঞ্চ থেকে নামতে যাবেন, ঠিক তখনই আমরা তাঁকে অনুরোধ করি কয়েক সেকেন্ডে দাঁড়ানোর জন্য ছবি তুলবো বলে৷ তিনি দাঁড়ান আর এরপরই ছোট একটি শব্দ শোনা যায়৷ আমরা ভাবলাম হয়ত তেমন কিছু না৷ কিন্তু তারপর আবার তিনটি৷ তখন আমরা সামনে তাকিয়ে দেখলাম পরিস্থিতি ভয়াবহ৷ এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতারা মানব ঢাল তৈরি করে শেখ হাসিনাকে ঘিরে ধরেন৷'' 

Abu Taher Khokon - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা চলে যাওয়া পর আমরা গিয়ে দেখি লাশ আর লাশ৷ আমরা যত দূর পারলাম উদ্ধার করে হামপাতালে পাঠাতে শুরু করলাম৷ আমার গায়ে কিছু লাগেনি তারপরও আমি রক্তে ফিজে গেলাম৷ আমার পুরো শরীর রক্তাক্ত হলো আহত নিহতদের রক্তে৷''

খোকন বলেন, ‘‘সেই ভয়াবহ পরিস্থিতি আমাকে এখনো দুঃস্বপ্নের মতো তাড়া করে ফেরে৷ সারা জীবন তাড়া করবে৷''

এই হামলার পর ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছে৷ মামলার আলামত নষ্ট এবং ‘জজ মিয়া'-র সাজানো সাক্ষ্য দিয়ে কল্পকাহিনি ফাঁদার চেষ্টা করা হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি-র এসপি আব্দুল কাহহার আখন্দ৷ 

২০০৮ সলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর নতুন করে এ মামলার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়৷ ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় কাহহার আখন্দকে৷ সম্পূরক অভিযোগপত্রে মোট ৫২ জনকে আসামি করা হয়৷ এর মধ্যে পলাতক ১৯ জন আর কারাগারে বন্দি ২২ জন৷ জামিনে আছে আটজন৷ পলাতক আসামিরা হচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, ডিজিএফআই-এর সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন আহমদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক সংসদ সদস্য কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, পুলিশের সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক ডিসি (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান৷

এছাড়া কারাগরে আটক আছেন, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদের নেতা মাওলানা তাজ উদ্দিন, মাওলানা মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, জাহাঙ্গির আলম বদর, ইকবাল, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ লোকমান হাওলাদার, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, মুফতি শফিকুর রহমান, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু পলাতক রয়েছেন৷ পলাতক দুই আসামি হুজি সদস্য আনিসুল মোরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আটক রয়েছেন বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন৷

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ শাহেদুল বিপুলের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে৷ তাই এ মামলার আসামির তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়া হয়৷ হত্যা মামলার সঙ্গে একটি বিস্ফোরক মামলাও হয়, যার আসামি একই ব্যক্তিরা৷ দু'টি মামলারই বিচার চলছে ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে দ্রুত বিচার আদালতে৷ রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী (পিপি) সৈয়দ রেজাউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় এখন আসামি পক্ষের সাফাই সাক্ষ্য চলছে৷ ২২৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে৷ ২৭ জন সাফাই সাক্ষীর মধ্যে ১২ জনের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে৷ সবার সাফাই সাক্ষ্য শেষ হলে শুরু হবে যুক্তিতর্ক৷'' 

Rezaur Rahman - MP3-Stereo

তিনি বলেন, ‘‘আমি আশা করি বছরই মামলার কার্যক্রম শেষ হবে রায়ও হবে৷ কিন্তু আমি আশা করলেই তো হবে না৷ আসামি পক্ষ শুরু থেকেই নানা ভাবে এই মামলা দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেছে৷ এখনো করছে৷ ফলে রায় কবে হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই মামলাটি নষ্ট করতে নানা ষড়যন্ত্র করা হয়েছে৷ আলামত নষ্ট করা হয়েছে, সাজানো জবানবন্দি নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু তা সবই কাটিয়ে ওঠা গেছে৷ আশা করি ন্যায় বিচার পাবো৷''

কাহহার আখন্দ বলেন, ‘‘যারা আলামত নষ্ট করেছে সেই পলিশ কর্মকর্তাদেরও আইনের আওতায় আনা হয়েছে শেষ পর্যন্ত৷ তদন্তের মাধ্যমে হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কেও জানা গেছে৷ মামলা প্রমাণে যা যা দরকার সবই করা হয়েছে৷''