1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাক্রোঁর চমকে ম্লান ম্যার্কেল?

২৯ ডিসেম্বর ২০১৭

২০১৭ সালের শেষ পাদে এসে বোঝা যাচ্ছে যে, জার্মান চ্যান্সেলরের প্রতাপ কমতে বসেছে৷ ইউরোপ প্রেমীদের নতুন হিরো হলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷

https://p.dw.com/p/2q673
এমানুয়েল মাক্রোঁ ও আঙ্গেলা ম্যার্কেল
ছবি: Reuters/E.Vidal

গত মে মাসে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট প্রতিদ্বন্দ্বী মারিন ল্য পেনকে হারিয়ে এলিজে প্রাসাদে অধিষ্ঠিত হন মাক্রোঁ৷ সেপ্টেম্বর মাসে ‘ইকনমিস্ট' পত্রিকার প্রচ্ছদে তরুণ মাক্রোঁকে পাদপ্রদীপের আলোয় দেখানো হয় – প্রবীণা ম্যার্কেল মাক্রোঁর পিছনে আধা-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ কারণ? সেপ্টেম্বরের শেষে জার্মানিতে সংসদীয় নির্বাচনে ম্যার্কেলের দল বিপুল ভোট হারায়, অপরদিকে জার্মানির দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট দল এএফডি (‘জার্মানির জন্য বিকল্প') প্রথম আবির্ভাবেই ১২ শতাংশ ভোট দখল করে৷

ব্রাসেলেসে বছরের শেষ শীর্ষবৈঠকেও একই দৃশ্য৷ তাঁর ‘‘ভালো বন্ধু'' আঙ্গেলার সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাক্রোঁ বলেন, ‘‘এই শীর্ষ বৈঠকের আন্তরিকতা থেকে বোঝা যায় যে, হতাশার মনোভাব দূর হয়েছে এবং বস্তুত একটা সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখা দিয়েছে, আমরা যার আরো বিকাশ ঘটাতে চাই৷''

অপরদিকে ম্যার্কেলকে খুব সংযত দেখা যায়, বিশেষ করে যখন তিনি আপাতত জার্মানির তত্ত্বাবধায়ক চ্যান্সেলর ছাড়া আর কিছু নন – কাজেই তাঁর পক্ষে মাক্রোঁর উৎসাহের জোয়ারে ভেসে যাওয়া সম্ভব বা সমীচিন, দু'টোর কোনোটাই নয়৷ তবে মাক্রোঁ তথা ইউরোপীয় কমিশন ইইউ-এর সংস্কার সম্পর্কে যে সব সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা বলেছেন, ২০১৮ সালের মার্চ কিংবা বড়জোর জুনের মধ্যে তিনি সে বিষয়ে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাবেন, বলে ম্যার্কেল প্রতিশ্রতি দেন – এবং আরেকটি বিষয় স্পষ্ট করে দেন: ‘‘ফ্রান্স এবং জার্মানির যদি একটি যৌথ অবস্থান না থাকে, তাহলে ইউরোপও এগিয়ে যেতে পারবে না৷''

‘ইউরোপীয় রেনেসাঁ'

নির্বাচনে জয়লাভের পর মাক্রোঁ স্বদেশে ও বিদেশে তাঁর সংস্কার সংক্রান্ত নতুন ধ্যনধারণা প্রচার করতে থাকেন৷ জার্মানির সংসদীয় নির্বাচনের ঠিক দু'দিন পরে, ম্যার্কেল যখন তাঁর মহাজোটের ভাঙা টুকরো-টাকরা জোড়াতালি দিতে সচেষ্ট, ঠিক তখন মাক্রোঁ পুনরায় একটি ‘‘সার্বভৌম, ঐক্যবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক ইউরোপ'' গঠনের ডাক দেন, যে ইউরোপের একটি যৌথ সামরিক বাহিনী, একটি যৌথ আর্থিক নীতি ও একটি ক্রমবর্ধমান ইউরো এলাকায় এক যৌথ অর্থমন্ত্রী থাকবে৷

সবাই যে মাক্রোঁর স্বপ্নে উদ্বুদ্ধ, এমন নয়৷ পূর্ব ইউরোপের ভিসেগ্রাড দেশগুলি – অর্থাৎ পোল্যান্ড, চেক প্রজাতন্ত্র, স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি – বা অস্ট্রিয়ার নতুন চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুর্ৎস – যিনি বয়সে মাক্রোঁর চাইতেও বেশি তরুণ – আদৌ ইউরোপ নিয়ে বাড়াবাড়ি চান না৷ নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে খোলা বাজারের অর্থনীতিতে বিশ্বাসী; তিনিও যে মাক্রোঁর প্রস্তাবে প্রতীত, এমন মনে হয় না৷ ম্যার্কেলের মতো রুটেও মনে করেন যে, মাক্রোঁর পরিকল্পনায় উচ্চাশার বাড়াবাড়ি৷ এছাড়া রুটে একজন ইউরোপীয় অর্থমন্ত্রী নিয়োগের পক্ষপাতী নন৷

২০১৭ সালের মার্চ মাসে নেদারল্যান্ডসের সংসদীয় নির্বাচনে দক্ষিণপন্থি গ্যার্ট উইল্ডার্সকে পরাজিত করেন মার্ক রুটে৷ তখন চ্যান্সেলর ম্যার্কেল রুটেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন: ‘‘নেদারল্যান্ডস আমাদের বন্ধু, সহযোগী ও প্রতিবেশী৷ কাজেই আমি খুব খুশি যে, বিপুল সংখ্যায় ভোট পড়ার পর একটি অতীব ইউরোপপন্থি ফলাফল হয়েছে – যা একটি স্পষ্ট সংকেত৷''

‘ইউরোপের জন্য একটা সুযোগ'

এমানুয়েল মাক্রোঁ তাঁর ‘অঁ মার্শ!' বা ‘ফরোয়ার্ড!' সংগঠনকে দল না বলে ‘আন্দোলন' আখ্যা দিয়েছেন৷ এই আন্দোলনের কেন্দ্রে ছিলেন তিনি নিজে৷ তিনি ও তাঁর দল দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট ‘ফ্রঁ নাসিওনাল' বা ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কে পরাজিত করতে সমর্থ হন বটে, তবে নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ে৷ যে কারণে জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিগমার গাব্রিয়েল স্মরণ করিয়ে দেন যে, ফরাসি ভোটারদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ল্য পেনের দলকে সমর্থন করেছে৷ তবে মাক্রোঁ ফ্রান্স তথা ইউরোপের পক্ষে একটি বিরাট সুযোগ – গাব্রিয়েল যোগ করতে ভোলেননি৷

ফরাসি প্রেসিডেন্টের বিভিন্ন সংস্কারের প্রস্তাব ইটালিতে সপ্রশংস সমর্থন পেয়েছে, বিশেষ করে সেই সব প্রস্থাব যখন দৃশ্যত সাবেক জার্মান অর্থমন্ত্রীর ঘৃণিত ব্যয়সংকোচ নীতির ঠিক বিপরীত৷ ইটালিতে নতুন নির্বাচন সংঘটিত হতে চলেছে৷ সব দলই আপাতত ব্যয়সংকোচের পরিবর্তে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পক্ষে৷ বেপ্পে গ্রিলো-র পপুলিস্ট ‘পাঁচ তারা' আন্দোলন আপাতত জরিপে এগিয়ে: তারা তো সরাসরি ইউরো এলাকা পরিত্যাগের ডাক দিয়েছে৷ কাজেই ইটালির সুবিশাল রাষ্ট্রীয় ঋণ ২০১৮ সালেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে একটি বোঝা হয়ে থাকবে৷

উদ্বাস্তু বণ্টন

ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরে উদ্বাস্তু বণ্টনের সমস্যারও আপাতত কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের তথাকথিত ভিসেগ্রাড দেশগুলি ইউরোপিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের রায় সত্ত্বেও এক চুল নড়তে রাজি নয়৷ এই প্রকাশ্য বিদ্রোহ সত্ত্বেও ইইউ-এর সর্বশেষ শীর্ষবৈঠকে এক আঙ্গেলা ম্যার্কেল ছাড়া অন্য কোনো নেতা এ বিষয়ে বিশেষ উচ্চবাচ্য করেননি৷ অর্থাৎ বিষয়টা কোনো না কোনো আপোশের দিকে এগোচ্ছে৷

অবশ্য ম্যার্কেলের হাতে একটি অস্ত্র আছে৷ ২০১৮-র মাঝামাঝি ইইউ-এর ২০২০ থেকে ২০২৭ সালের বাজেট নির্দিষ্ট হবে৷ ঐ বাজেটে পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির মতো দেশ অত্যন্ত বদান্য অনুদান পেয়ে থাকে৷ অপরদিকে ইইউ-এর কোষাগারে সাকুল্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে থাকে জার্মানি৷ কাজেই এখানে চাপ সৃষ্টি করার একটা সুযোগ ম্যার্কেলের রয়েছে – কিন্তু সেই চাপ প্রয়োগ করার মতো রাজনৈতিক ওজন অথবা মিত্র তাঁর থাকবে তো? মাক্রোঁ আপাতত এ বিষয়ে কিছুই বলছেন না৷

মাক্রোঁ যোগ ম্যার্কেল?

আপাতদৃষ্টিতে এখন পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও ইউরোপের মুখপাত্র হলেন এমানুয়েল মাক্রোঁ: বিশেষ করে তিনি যেভাবে বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বেঁধেছেন, অর্থাৎ নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে নরমে-গরমে খেলছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে৷ অপরদিকে ম্যার্কেলের মতো মাক্রোঁও অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের জন্য আফ্রিকার দেশগুলির সঙ্গে সহযোগিতার পক্ষপাতী; ম্যার্কেলর মতোই তিনি পশ্চিম বলকানের দেশগুলির কালে ইইউ-তে যোগদান সমর্থন করেন৷

তবে শেষমেষ মাক্রোঁও ইউরোপ তথা ইইউ বা ইউরোপীয় রাজনীতিতে ফরাসি-জার্মান জুড়ির গুরুত্বের কথা জানেন৷ তাই সর্বশেষ ইইউ শীর্ষবৈঠকে তাঁর মন্তব্য: ‘‘প্রগতি করার জন্য আমাদের একটি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল জার্মানির প্রয়োজন৷'' যার উত্তরে দৃশ্যত একটু ক্লান্ত ম্যার্কেলের পরিকল্পিত আশাবাদিত্ব: ‘‘আমি শুধু এইটুকু বলতে পারি যে, আমি তাই চাই৷ আর যেখানে ইচ্ছে আছে, সেখানে পথও থাকবে – আমরা জার্মানিতে যেরকম বলে থাকি৷''

ব্যার্ন্ড রিগ্যার্ট/এসি

আপনার মন্তব্য লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান