১০টি যুগান্তকারী ভিডিও গেম
প্রতিবছর হাজার হাজার নতুন কম্পিউটার গেম বাজারে আসছে৷ কিন্তু ভিডিও গেমের হালহকীকৎ বদলে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের সবার নেই৷ ছবিঘরে থাকছে ১০টি সেই ধরনের ‘যুগান্তকারী’ ভিডিও গেম৷
দ্য সিমস: কল্পজগৎ
সিম-রা হলো এক কাল্পনিক জগতের বাসিন্দা৷ তারা ‘সিমলিশ’ ভাষায় কথা বলে ও ‘সিমোলিয়ান’ টাকা দিয়ে জিনিসপত্র কেনে৷ বিভিন্ন চরিত্র সৃষ্টি করে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে সাহায্য করাটাকে চিত্তবিনোদনের সেরা পন্থা বলে মনে করার কোনো কারণ নেই – অথচ এই গেমটাই কিন্তু চিরকালের বেস্টসেলিং কম্পিউটার গেম এবং ফ্যাঞ্চাইজ৷ এ ধরনের গেমকে বলা হয় ‘স্যান্ডবক্স’, যেখানে প্লেয়াররা কচিকাঁচাদের মতো যা প্রাণ চায়, তাই করতে পারেন৷
কাইন্টার-স্ট্রাইক: শুট-’এম-আপ
১৯৯৯ সালে সৃষ্ট গেমটিকে যাবতীয় ‘ফার্স্ট পার্সন শুটার’ (নিজে গুলি চালিয়ে লক্ষ্যভেদ করার) গেমের আদিপুরুষ বলে ধরে নেওয়া হয়ে থাকে৷ ‘পালটা আক্রমণ’ গেমটিতে সন্ত্রাসী আর সন্ত্রাস প্রতিরোধীরা নিজেদের মধ্যে কাজিয়া চালাচ্ছে৷ গেমটি বিপুলভাবে জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও, এই পরিমাণ গুলিগোলা বিশেষ করে স্কুলের ছাত্রদের পক্ষে স্বাস্থ্যকর কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে৷
জিটিএ: গ্যাংস্টার গেম হলেও বিবেকহীন নয়
মার্কিন মুলুকের রাস্তায় গাড়ি চুরি, সশস্ত্র ডাকাতি, পলায়ন – এই আগ্রাসী গেমটির একাধিক সংস্করণ শুধুমাত্র ‘প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য’৷ জিটিএ কথাটি হলো ‘গ্র্যান্ড থেফ্ট অটো’ বা ‘গাড়ি চুরি’ কথাগুলির আদ্যক্ষর৷ ফ্যানরা বলেন, জিটিএ শুধু সহিংসতা নিয়ে নয়: ‘অ্যামেরিকান ড্রিম’ ব্যর্থ হবার পর মানুষজন কীভাবে ছিঁচকে চুরি থেকে গ্যাংস্টারবৃত্তির দিকে যায়, সেটাই হলো এই গেমের অন্তর্নিহিত বাণী৷
প্যাক-ম্যান: আর্কেড মানেই প্যাক-ম্যান
গোল মাথা আর বিরাট হাঁ সম্পন্ন এই লোভী দানবটির জন্ম জাপানে, ১৯৮০ সালে৷ গেমটির লক্ষ্য হলো রঙিন ভূতগুলোর হাত থেকে বেঁচে যতগুলো সম্ভব পয়েন্ট গলার্ধ করা৷ প্যাক-ম্যানের নেশা হয়ে যেতে বেশি সময় লাগে না – বলেন ভুক্তভোগীরা৷ সেক্ষেত্রে আর্কেডে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পন্থা আছে কি?
সুপার মারিও: নিন্টেন্ডোর ম্যাস্কট
নীল ডুঙ্গারি, লাল টুপি আর পুরু মোচধারী এই খুদে ইট্যালিয়ানটি সম্ভবত ভিডিও গেমের ইতিহাসে সর্বাধিক পরিচিত চরিত্র৷ পেশায় পানির মিস্ত্রি মারিও ও তার বন্ধু লুইজি হল ‘প্ল্যাটফর্ম’ ভিডিও গেমের পথিকৃৎ – যেখানে চরিত্রগুলি একটা ধাপ থেকে আরেকটা ধাপে লাফঝাঁপ দিয়ে গিয়ে পয়েন্ট সংগ্রহ করে ও বিপদের হাত থেকে বাঁচে৷
পোকেমন গো: ‘বর্ধিত বাস্তব’
‘পোকেমন গো’ (২০১৬) গেমেই প্রথম অকুস্থল ভিত্তিক ‘বর্ধিত বাস্তব’ (‘অগমেন্টেড রিয়্যালিটি’) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় – অর্থাৎ গেমের ডিজিটাল উপাদানগুলি যেন গেমারের বাস্তব পরিস্থিতির অঙ্গ হয়ে পড়ে৷ নিখর্চার অ্যাপটি প্রথম বছরেই ডাউনলোড করা হয় ৫০ কোটি বার৷ সমালোচকরা বলেন: পথেঘাটে পোকেমন সন্ধানীরা একটা নুইস্যান্স; গুণমুগ্ধরা বলেন: গেমটি কচিকাঁচাদের সোফায় না বসে থেকে, বাইরে যাওয়ার প্রেরণা যুগিয়েছে৷
মাইনক্র্যাফ্ট: অনন্ত সম্ভাবনা
এটি সম্ভবত সেরা ‘ওপেন ওয়ার্ল্ড’ গেম, যেখানে খেলোয়াড়রা একটি ভার্চুয়াল দুনিয়ায় যথেচ্ছ বিচরণ করতে পারেন, লিনিয়ার গেমগুলিতে যা করার উপায় নেই৷ ইউজাররা খনি থেকে নানা ধরনের ব্লক তুলে তাই দিয়ে একটি অনন্ত ত্রৈমাত্রিক দৃশ্যপটে যত খুশি বাড়ি বানাতে পারেন৷ এতোটা স্বাধীনতা যাদের ভালো লাগে না, তাদের জন্য নির্দিষ্ট কাজেরও ব্যবস্থা আছে৷
টেট্রিস: একটি সোভিয়েত ক্ল্যাসিক
আশির দশকে এই গেমটির জন্ম: নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্লকগুলিকে একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সাজাতে হয়৷ ১৯৮৪ সালে এক তরুণ সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়ার গেমটি সৃষ্টি করেন – যা আর্কেড থেকে শুরু করে হোম কম্পিউটারে ছড়াতে বেশি সময় লাগেনি৷ তবে গেমটি ‘অস্কার’ জেতে, যখন নিন্টেন্ডো তাদের হাতে-ধরা গেম বয় কনসোলের প্রথম গেমগুলির মধ্যে টেট্রিসকেও রাখে৷
ফিফা: সব খেলার রাজা ফুটবল
১৯৯৩ সাল থেকে প্রতিবছর ‘ফিফা’ গেমটির একটি নতুন সংস্করণ বাজারে আসছে, প্রতিবারেই আরো কিছুটা বাস্তবধর্মী, যার ফলে তথাকথিত ‘স্পোর্ট সিমিউলেশম গেমিং’-এ ‘ফিফা’-কে হারানোর ক্ষমতা কারো নেই৷ আর থাকবেই বা কী করে: ‘ফিফা’-র তারকারাও যে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো আর লিওনেল মেসির মতো পাঁচতারা!
অ্যাংরি বার্ডস: ‘রাগী পাখি’ ধরার খেলা
এই ‘ফ্রিমিয়াম’ (অর্থাৎ প্রিমিয়াম দিয়ে কেনা গেমগুলোর ঠিক উল্টো) গেমটি যতবার ডাউনলোড করা হয়েছে, গেমিং-এর ইতিহাসে অন্য কোনো গেম তার ধারেকাছে পৌঁছাতে পারেনি৷ মোবাইল অ্যাপটির সাফল্য থেকেই একটি টিভি সিরিজ ও একটি ফিচার ফিল্ম জন্ম নেয়৷ ওদিকে এনএসএ-র হুইসলব্লোয়ার এডোয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করে দেন যে, সরকারি নিরাপত্তা সেবা গেমটির ইউজারদের ডাটা সংগ্রহ করতে পারে – ফলে ইউজাররা নিজেরাই এবার অ্যাংরি বার্ডস!