হেলিগোল্যান্ড ঘুরে দেখার ১০ কারণ
জার্মান নর্থ সাগরের উপকূল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে, হেলিগোল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ৷ যেখানে কোনো যানবাহন নেই, নেই সাইকেলের টুংটাং কিংবা হৈ হুল্লোড়, আছে শুধু শান্তি আর সতেজ বাতাস৷ এই দ্বীপে আকাশ আর সাগরের মিতালী, আবেশ ছড়িয়ে রাখে৷
তীরে ভিড়ে তরী
প্রতিদিন কমবেশি হাজার তিনেক পর্যটকের আনাগোণায় মুখর থাকে হেলিগোল্যান্ড৷ দ্বীপে পৌঁছাতে, সাগরের বুক চিড়ে তিন ঘণ্টার যাত্রা৷ মজার কথা হলো, জাহাজ কিন্তু তীরের বদলে সমুদ্রের বুকেই নোঙর করা হয়৷ সেখান থেকে ওক গাছের তৈরি শক্তপোক্ত এক নৌকায় করে যাত্রীদের নেয়া হয় মূল দ্বীপে৷ এটা দ্বীপের দুইশ বছরের রীতি৷ যাকে অস্পৃশ্য সংস্কৃতি হিসেবে তালিকাভূক্ত করেছে ইউনেস্কো৷
বর্ণিল অভ্যর্থনা
নানা রঙে শোভিত বন্দর পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত৷ ছোটো ছোটো এসব ঘরগুলোকে স্টোরহাউজ হিসেবে ব্যবহার করতো জেলেরা৷ এখন সেখানে গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁ, দোকান-পাট আর স্যুভেনির শপ৷ তবে, হ্যাঁ, উত্থাল সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে, অনেকেই হালকা অসুস্থবোধ করতে পারেন, তেমন কিছু হলে এখানেই কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়া যাবে৷
সামুদ্রিক রসনাবিলাস
সি-ফুডের জন্য হেলিগোল্যান্ড খুবই দুর্দান্ত৷ লবস্টার শিকারিরা তো আছেনই, সঙ্গে পাওয়া যাবে সমুদ্র থেকে তুলে আনা কাঁকড়া৷ কাঁকড়া নখরকে ‘ক্নিপার‘ নামে ডাকে তারা৷ দ্বীপবাসীর কাছে এটি খুবই সুস্বাদু খাবার৷ যদিও স্বাদ নিতে ভাঙতে হয় শক্ত খোলস৷ অবশ্য কাজটি সহজ করতে মিলবে হাতুড়ি৷
লালচে ল্যান্ডমার্ক
দ্বীপের উত্তর-পশ্চিমের সরু আকৃতির পাথরটি হ্যালিগোল্যান্ডের মাইলফলক৷ পায়ে হেঁটে পাথরের মালভূমি পেরিয়ে পৌঁছাতে হয় লাঙে আন্নায়৷ গোটা এলাকা জুড়ে উড়াউড়ি করে নানা প্রজাতির পাখি৷ জুন-জুলাইয়ের দিকে, সামুদ্রিক পাখিরও আনাগোনা বাড়ে৷ স্থানীয়ভাবে পাখিগুলো লুমেন নামে পরিচিত৷
পাথরের ভেতরে আরেক বিশ্ব
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নাৎসি বাহিনী তৈরি করেছিল পাথরের এই দুর্গ৷ ওই সময় হেলিগোল্যান্ড ছিল সামুদ্রিক ঘাঁটি৷ এখন এই দুর্গটিই কেবল টিকে আছে, আর কিছু নেই৷ পর্যটকদের জন্য এটি উন্মুক্ত৷ ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বিমান বাহিনী অন্য সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করে ফেলে৷
শুরুর গল্প
পোস্টকার্ডেই বেঁচে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগের হেলিগোল্যান্ড৷ ১৮২৬ সালে এই দ্বীপে সমুদ্র ঘেঁষে তৈরি করা হয় স্পা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে, মানুষের আনাগোনাও ছিল বেশ৷ দ্বীপ কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পটাও ছিল জমজমাট৷ বিশ্বযুদ্ধে সব শেষ হয়ে যায়৷ ১৯৫২ সালে আবারো নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় জার্মানি৷ তারপর স্থানীয়রাও ফিরে পায় নিজভূমে ফিরে যাওয়ার অধিকার৷ তখন থেকেই আবারো গতিশীল হেলিগোল্যান্ডের পর্যটন৷
শুল্কমুক্ত কেনাকাটা
ভ্রমণ পিয়াসীদের অবস্থান থেকে, হেলিগোল্যান্ডকে ভিনদেশ হিসেবে দেখা হয়৷ যার সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কর আইনের সম্পর্ক নেই৷ তাই পর্যটকরা শুল্কমুক্ত পণ্য যেমন কিনতে পারে, তেমনি গুণতে হচ্ছে না মূল্য সংযোজন কর৷ ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকার সময় এই প্রবিধান শুরু হয়৷ পরে জার্মানির কাছে ভূখণ্ডটি হস্তান্তর করা হলে, কর ছাড়ের বিধানটি আজো আগের মতোই আছে৷
মূল্যবান রত্ন
এই দ্বীপপুঞ্জের ছোট্টপ্রতিবেশি ডুনে৷ ফেরিতে চেপে যেতে হয় সেখানে৷ প্রায় তিনশো বছর আগে, ভয়ঙ্কর ঝড় ঝলোচ্ছ্বাসে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে ডুনে৷ এখানে আছে বিমানবন্দর, ক্যাম্পসাইট, অবকাশ যাপনের বাংলো আর বেলাভূমি৷ গ্রীষ্মে এই দ্বীপের কদর বেড়ে যায়৷ উত্তর সাগরীয় ধূসর সিলের সবচেয়ে বড় আবাসভূমিও ডুনে৷
ধূসর সিলের পরিচর্যা
শীতের সময়, ডুনেতে ভিড় জমায় আলোকচিত্রীরা৷ ধূসর সিলের আদুরে বাচ্চাগুলো এসময় জন্মায়৷ সিলের বাচ্চাগুলোর আনাগোণা বেশ মুগ্ধতা ছড়ায়৷ তবে কোনোভাবেই তাদের বিরক্ত করা যাবে না৷ এসময় ভ্রমনপিয়াসীদের নির্ধারিত দূরত্ব মেনে চলতে হয়৷
সন্ধ্যায় আলোর মূর্ছনা
লাঙে আনার রাস্তার ধরে, একেবারে আসতে হবে পশ্চিম প্রান্তে৷ কারণ, দ্বীপ থেকে সূর্যাস্ত দেখার এটাই সেরা জায়গা৷ সূর্য অস্ত গেলে আকাশ যেমন লাল রঙে ছেয়ে যায়, তেমনি লাল পাথরেও তৈরি হয় এক অপার্থিব আভা৷ তবে, দ্বীপে যারা রাত কাটাবেন তারা পাচ্ছেন এই সুযোগ৷ কারণ, যারা দিনে দিনে ফিরবেন, সূর্য ডোবার আগেই ফিরতে হয় তাদের৷