হুইল চেয়ারে চড়ে ৫,৭০০ কিলোমিটার
১৯ জুন ২০১২সার্বিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভাকিয়া, অস্ট্রিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, ইটালি আর সুইজারল্যান্ড পেরিয়ে ৪৭ বছরের মাইল স্টোইকস্কি এখন জার্মানিতে৷ সুদূর ম্যাসিডোনিয়া থেকে যাত্রা শুরু করেছেন তিনি হুইল চেয়ারে চড়ে৷ গন্তব্য লন্ডন অলিম্পিক৷ ম্যাসিডোনিয়া সরকার সামান্য অর্থ সাহায্য দিয়েছে, কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত নয়৷ তাই পথের মানুষজন, যারা মাইকের এই উদ্যোগকে সমর্থন করছেন, তাদের কাছে সাহায্য, পাথেয় সংগ্রহ করে নিচ্ছেন এই মানুষটি৷ সকলকে বলছেন তিনি প্রতিবন্ধীদের চ্যালেঞ্জে ভর্তি জীবনের কথা৷ প্রচার করছেন এই বার্তা যে ‘আমরাও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ৷ আমাদের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷'
তারপরেও সকলের দৃষ্টিভঙ্গি তো আর সমান হয়না৷ মাইলের সঙ্গে রয়েছে একটি সাহায্যকারী গাড়ি৷ তাতে দুজন সহকারী৷ পথে দায়ে বিপদে মাইলের দেখাশোনা তাঁরাই করে থাকেন৷ এই ছোট্ট একটি দল জার্মানি বা ইউরোপের ঝোড়ো গতির হাইওয়েতে টুকটুক করে হুইল চেয়ারে চলছে, দৃশ্যটা মোটেই সুবিধের নয়৷ বিশেষ করে পুলিশের কাছে৷ এই তো ক'দিন আগে, ‘আইটোবান' বা হাইওয়ে দিয়ে জার্মানিতে ঢোকার সময়ে পথে এক পুলিশকর্মী মাইলকে থামান৷ সে সময়ে পুলিশকর্মীটি তাঁর ডিউটিতে ছিলেন না৷ কিন্তু পুরো দৃশ্যটা অদ্ভুত লেগেছিল পুলিশটির৷ মাইল তাঁকে নিজের পরিচয়পত্র দেখিয়ে এই আশ্চর্য যাত্রার কারণটি জানালে পুলিশকর্মী সৌভাগ্যবশত মাইলকে গ্রেপ্তার করেন নি৷ তবে সামনের আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের মোড়গুলো বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে চলে যান সেই পুলিশটি৷
‘পুলিশ আমাকে সর্বত্রই থামাচ্ছে৷' জানান অকুতোভয় মাইল৷ লাল শাদা উজ্জ্বল পোশাক তাঁর শরীরে৷ যাতে দূর থেকেও দেখা যায় সহজে৷ হাতে পাতলা সিলিকনের গ্লাভস৷ সেটা আসলে হুইল চেয়ারটাকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য৷ প্রতিদিন খুব ভোরে উঠে সকাল আটটার মধ্যে যাত্রা শুরু করা৷ রোজের লক্ষ্য ৭০ কিলোমিটার পথ পার হওয়া৷
‘এভাবেই লন্ডন পৌঁছে যাব৷ লন্ডন অলিম্পিকে আসবেন গোটা বিশ্বের কত দেশের মানুষ৷ তাঁদের কাছে বলব আমাদের লড়াইয়ের কথা৷ বলব, প্রতিবন্ধী মানেই অবজ্ঞা বা উপহাসের পাত্র নয়৷' দৃঢ় স্বরে কথাগুলি বলেন মাইল স্টোইকস্কি ডয়চে ভেলেকে৷ তারপর তাঁর হুইল চেয়ারের চাকাগুলো আবারও ঘুরতে থাকে৷ সময়ের মধ্যে যে লন্ডন পৌঁছতে হবে এই সহজে হার না মানা মানুষটিকে৷ থামলে তো তাঁর চলবে না!
প্রতিবেদন: ইয়োহানা ইম্পে / সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন