1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হিজাব-বিতর্কে কর্ণাটক উত্তাল, স্কুল-কলেজ বন্ধ

৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২

কর্ণাটকের একটি কলেজে হিজাব পরে ক্লাসে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে বিতর্ক ও গোলমাল শুরু হয়। তিনদিন ধরে স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের।

https://p.dw.com/p/46j9t
কলেজে হিজাব নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ছাত্রীরা। ছবি: Anushree Fadnavis/REUTERS

হিজাব বিতর্কে অগ্নিগর্ভ কর্ণাটক। উদুপির সরকারি কলেজে মেয়েদের হিজাবপরে ক্লাসে ঢোকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গোলমাল শুরু হয়। ছাত্রীদের হিজাবের পাল্টা হিসাবে বেশ কয়েকটি জায়গায় ছাত্ররা গেরুয়া স্কার্ফ বা শাল গায়ে ক্লাসে আসে। বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হিজাব বনাম গেরুয়া শাল বা স্কার্ফ নিয়ে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে।। মধ্যপ্রদেশ ও পুদুচেরিতেও এই বিতর্ক ছড়িয়েছে।

উদুপিতে কলেজ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ছাত্রীদের ড্রেস কোড মানতে হবে। কলেজের ড্রেস কোডে কোথাও হিজাব পরার কথা নেই। তাই তারা হিজাব পরতে পারবেন না। আর ছাত্রীদের দাবি, এটা তাদের ধর্মীয় অনুশাসনের অঙ্গ। তাই তাদের হিজাব পরতে দিতে হবে।

বিতর্ক শুরু

উদুপির এই বিতর্ক ক্রমশ কর্ণাটকের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। কুন্দারপুতাতে একটি কলেজে কয়েকজন ছাত্রী হিজাব পরে কলেজে আসছিলেন। তার প্রতিবাদে কিছু ছাত্র গেরুয়া শাল জড়িয়ে ক্লাসে যায়। শুরু হয় বিতর্ক ও গোলমাল। কর্ণাটকের বিভিন্ন কলেজে হিজাব ও গেরুয়া শাল, স্কার্ফ বিতর্ক তীব্র হতে শুরু করে। উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

এরপরই কর্ণাটক সরকার তিনদিন রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আদালতে আবেদন

হিজাব পরার অধিকার চেয়ে ছাত্রীরা কর্ণাটক হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছে। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন। বিচারপতি জানিয়েছেন, তিনি যতদিন রায় না দিচ্ছেন, ততদিন যেন রাজ্যে শান্তি বজায় থাকে। সব পক্ষ যেন ধৈর্য ধরেন।

সরকারের বক্তব্য

রাজ্য সরকার জানিয়েছে, তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো ড্রেস কোড চালু করেনি। তবে রাজ্যের নিয়মানুযায়ী, স্কুল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজস্ব ড্রেস কোড চালু করতে পারে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ড্রেস কোড চালু আছে।

অন্য রাজ্যে ছড়াচ্ছে

এই হিজাব বিতর্ক মধ্যপ্রদেশ ও পুদুচেরিতেও ছড়িয়েছে। মধ্যপ্রদেশের শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ''হিজাব স্কুল বা কলেজ ইউনিফর্মের অঙ্গ নয়। স্কুলে এলে ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে। বাড়িতে যে যার মতো পোশাক পরতে পারেন।'' মধ্যপ্রদেশেও সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হিজাবকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে।

কংগ্রেস মুখপাত্র আব্বাস হাফিজ বলেছেন, ''এভাবে স্কুলে ও কলেজে সাম্প্রদায়িকতার বিষ ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। কয়েকশ বছর ধরে মুসলিম মেয়েরা হিজাব ও শিখরা পাগড়ি পরেন। তাতে কোনো অসুবিধা হয়নি। এখন কেন হবে?'' পুদুচেরিতেও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হিজাব পরতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে সেখানেও বিতর্ক শুরু হয়েছে।

কেন এই বিতর্ক?

উডুপির ছাত্র মাসুদ মুন্না ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''ছাত্রীদের হিজাব পরতে দেয়া হচ্ছে না। একটা ভুল ধারণা রয়েছে, ছাত্রীরা বোরখা পরে কলেজে আসছিলেন। সেটা ঠিক নয়। তারা শুধুমাত্র মাথা ঢেকে ছিলেন।'' তার দাবি, ''হিজাব পরে আসতে পারবে না বা মাথা ঢাকা যাবে না, কলেজের ড্রেস কোডে এমন কোনো নিয়ম নেই। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে, হিজাব পরলে ধর্মীয় অসাম্য হবে। কিন্তু তার পিছনে কোনো যুক্তি নেই।'' মুন্নার বক্তব্য, ''সরকারি কলেজে নিয়ম অনুসারে সবকিছু চলা উচিত। সরকার কোন আইনের বলে এই নিয়ম চালু করেছে তা বলা হোক। ছাত্রীদের ক্লাসে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। কলেজ চত্বরে তারা আসতে পারছে। ছাত্রীরা ইউনিফর্মের রঙের হিজাবই পরছে।''

মুন্নার অভিযোগ, ''স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বিষয়টির রাজনীতিকরণ করছেন।''

প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''কর্ণাটকে এক বছর পরেই বিধানসভা নির্বাচন। মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ পুন্নিয়া কিছুদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছেন। তারপর পুর নির্বাচনে কংগ্রেস ও জেডিএস ভালো ফল করেছে। ফলে এই বিতর্কের পিছনে রাজনীতি কাজ করছে।'' সৌম্য মনে করেন, ''যা অবস্থা, তাতে মেরুকরণ না হলে বিজেপি আগামী বছর জিততে পারবে না। আর কর্ণাটক কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্য নয়, যেখানে প্রচুর মুসলিম থাকেন। তা সত্ত্বেও এই রকম বিতর্ক তুলে হিন্দু ভাবাবেগ উসকে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এর প্রভাব উত্তরপ্রদেশের ভোটেও পড়তে পারে।''

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এনডিটিভি)