হালকা অথচ মজবুত নির্মাণের উপাদান
৩০ মার্চ ২০২০স্টুটগার্ট শহরের দুই গবেষক ভাল্টার হাসে ও ডানিয়েল শ্মেয়ার আংশিকভাবে ফাঁপা এক কংক্রিট সিলিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ ফাঁপা হলেও পরীক্ষামূলক এই পাত কিন্তু বেশ স্থিতিশীল৷ তাঁরা যতটা কম সম্ভব উপাদান ব্যবহার করে নির্মাণের কাজে প্রয়োজনীয় কংক্রিটের অংশ তৈরি করতে চান৷
আপাতদৃষ্টিতে এই পদ্ধতি বেশ সহজ৷ প্রথমে নিজের তৈরি সিমেন্টের মিশ্রণ একটি ছাঁচে ঢালতে হয়৷ ভিতরটা ফাঁপা, এমন এক সিমেন্টের গোলা তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য৷ ছাঁচের আবর্তনের ব্যবস্থা করে বিজ্ঞানীরা সেটা সম্ভব করেছেন৷
সিমেন্ট শক্ত হয়ে গেলে হ্যান্ডবলের মাপের গোলকটি তাঁরা বার করে নিতে পারেন৷ গবেষক হিসেবে ভাল্টার হাসে বলেন, ‘‘নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অংশের মধ্যে এমন ফাঁপা গোলক ভরে দিয়ে আমরা ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ উপাদানের ব্যবহার কমাতে পারি৷''
উপাদানের মধ্যে ফাঁপা গোলক ভরতে গবেষকরা এক কৌশল কাজে লাগান৷ কারণ গোলকের উপর সিমেন্ট ঢালা সম্ভব নয়৷ কারণ সে ক্ষেত্রে আরও হালকা হওয়ায় গোলক ভেসে উঠবে৷ বাম দিকে একটি গোলক আগে থেকেই সিমেন্টে গেঁথে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে সেটি উপাদানের ভেতরেই আটকে রয়েছে৷ একমাত্র তীব্র চাপের মুখে কাঠামোটি ভেঙে যায়৷
লাইটওয়েট কনস্ট্রাকশন ইনস্টিটিউটের ছাদ ডিজাইন ও নির্মাণের কাজ মিউনিখের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ছাদ তৈরির আগেই হয়েছিল৷ এমন হালকা অথচ মজবুত নির্মাণের কাঠামো স্টেফানি ভাইডনার ও ইয়ুলিয়া ভাগনারের গবেষণার জন্য আদর্শ৷
তথাকথিত অ্যাকচুয়েটর-এর সাহায্যে এই দুই গবেষক হালকা ও কম পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করেও মজবুত নির্মাণ সম্ভব করতে চান৷ বিপজ্জনক শক্তি অ্যাকচুয়েটর-এর মাধ্যমে নীচে নেমে যাবে, ঠিক যেমন করে কোনো ভবনের আর্থিং করা হয়৷
যে সব ভবনকে তীব্র বাতাস ও খারাপ আবহাওয়া সামলাতে হয়, এই প্রণালী সেখানেও প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ অ্যাকচুয়েটর চালু থাকলে সেটিই বিপজ্জনক কম্পনের ধাক্কা সামলে নেয়৷ গবেষক হিসেবে স্টেফানি ভাইডনার বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে৷ যেমন বহুতল অট্টালিকা বা অফিস ভবন, যেগুলির বিশাল সারফেস রয়েছে এবং বিশাল পরিমাণ উপাদান দিয়ে যেগুলি তৈরি হয়েছে৷ বিশেষ এই উপাদানের মাধ্যমে এবং জলবাহী, নিউম্যাটিক বা তরল অ্যাকচুয়েটরের মতো ‘ইন্টেলিজেন্ট সিস্টেম' কাজে লাগিয়ে উপাদানের পরিমাণ কমানো সম্ভব৷ আমার মতে, এভাবে ভবিষ্যতে নির্মানক্ষেত্রে বিপ্লব আনা সম্ভব৷''
‘ইনটেলিজেন্ট' প্রযুক্তির সাহায্যে পাতলা অথচ স্থিতিশীল কাঠামোর মাধ্যমে একইসঙ্গে সম্পদও সাশ্রয় করা যায়৷ ভবিষ্যতের বাড়িঘর অনেকটা আজকের গাড়ির মতো হয়ে উঠতে পারে৷ ভবনের আয়ুও গাড়ির মতো কমে চলায় সেটির উপাদান পুনর্বব্যবহারযোগ্য হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে৷ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ও স্থপতি ভ্যার্নার সোবেক বলেন, ‘‘মানুষ ঘন ঘন বাসা বদল করলে আমরা হয় গাড়ির মতই বাড়ি কিনবো কিংবা গাড়ির মতোই বাড়ি তৈরি করে ভাড়া অথবা লিজ দেবো৷ আমার মতে, মানুষ আগের তুলনায় আরও গতিশীল হয়ে ওঠায় গত শতাব্দীর তুলনায় আরও ঘনঘন শহর বা বাসা বদলাচ্ছে৷''
ভবিষ্যতের নির্মাণ আরও দ্রুত, সস্তা ও পরিবেশবান্ধব হয়ে উঠবে বটে, তবে বাড়িঘর আর অনন্তকাল ধরে টিকে থাকবে না৷
ক্রিস্টিয়ান ফ্রিডেল/এসবি