‘স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ' এই ছবিঘরটি পোস্ট করা হয়েছিল ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায়৷ এতে মন্তব্য করেছেন শতাধিক পাঠক৷ অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশ সরকারে স্বৈরাচারী সব লক্ষণ রয়েছে৷
পাঠক কাউসার রনি লিখেছেন, ‘‘এই পোস্টের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি শতকরা ১০০ভাগের ওপর সঠিক! এখানে যে দশটি লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে তার একটিও বর্তমান বাংলাদেশের কম নেই বরঞ্চ অনেক বেশি ! সুতরাং বাংলাদেশ অবশেষে একটি স্বৈরতান্ত্রিক দেশ৷
ছবিঘরের বক্তব্য ভালো লেগেছে পাঠক মেহেদি চৌধুরীর কাছেও৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘সাংবাদিক হিসেবে যদি আপনারা এই সাহস না দেখান, তাহলে জাতি আরো অসহায় হয়ে যাবে৷''
আর হাশেম তুলন লিখেছেন, ‘‘স্বৈরাচারীর ১০ লক্ষণ এর সবগুলোই আমাদের দেশে আছে, আমরা গণতন্ত্রের দেশে আছি বটে!''
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
গণমাধ্যমকে ভয় দেখানো
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে গণমাধ্যম বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকে৷ সরকারের সমালোচনা ও ভুল ধরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক৷ ফলে সমালোচনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সাংবাদিকদের দূরে রাখতে স্বৈরাচারী শাসকরা পত্রিকা, টেলিভিশনকে ভয় দেখিয়ে কোণঠাসা করতে চান৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
সরকারপন্থি গণমাধ্যম সৃষ্টি
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ক্রমশ বাড়ছে৷ ফলে গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করা সবক্ষেত্রে সম্ভব হয় না৷ পালটা ব্যবস্থা হিসেবে স্বৈরশাসকরা সরকারপন্থি গণমাধ্যম নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন৷ এর ফলে ব্যাপক হারে সরকারের নানা প্রোপাগান্ডা ছড়ানো সহজ হয়৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
রাষ্ট্রীয় সংস্থার দলীয়করণ
রাষ্ট্রের সকল স্তরে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে স্বৈরাচারী শাসকরা পুলিশ, সেনাবাহিনী থেকে শুরু করে সরকারি আমলাদের মধ্যেও দলীয়করণ প্রতিষ্ঠা করে থাকেন৷ এর ফলে রাষ্ট্রের ভেতর থেকে ক্ষোভ দেখা দিলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে সুবিধা হয়৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
বিরোধীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নজরদারি
রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে সরকারের রাজনৈতিক বিরোধীতাকারীদের ওপর নজরদারির কাজে লাগানো হয়৷ গোয়েন্দা মারফত পাওয়া তথ্য কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে নানাভাবে হেয় করা ও কোণঠাসা করতে অপব্যবহার করা হয় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
বিশেষ সুবিধা ও দমনপীড়ণ
স্বৈরাচারী সরকার বা সরকারপ্রধানকে যেসব কর্পোরেট সংস্থা বা ব্যক্তি নানাভাবে সহায়তা করে থাকেন, তাদের বিশেষ রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেয়া হয়৷ বেআইনি উপায়ে কাজ পাইয়ে দেয়া থেকে শুরু করে নানাভাবে সহায়তা করা হয়৷ অন্যদিকে, যেসব সংস্থা সহায়তা করে না, তাদের ক্ষেত্রে চলে যে-কোনো উপায়ে দেউলিয়া বানানোর প্রক্রিয়া৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ
আদালত স্বাধীন থাকলে স্বৈরাচারী শাসকদের নানা সময়ে আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়৷ ফলে শুরু থেকেই স্বৈরাচারী শাসকরা সুপ্রিম কোর্টকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করেন৷ অনুগত বিচারক নিয়োগ দেয়া, বিরোধীদের ছাঁটাই করা থেকে শুরু করে, নানাভাবে চেষ্টা চলে এ নিয়ন্ত্রণের৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
একপাক্ষিক আইন প্রয়োগ
স্বৈরাচারী শাসকদের শাসনামলে ‘আইন সবার জন্য সমান’ বাক্যটি থাকে শুধু কাগজে-কলমে৷ বাস্তবে প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য পাস করা হয় নতুন নতুন আইন৷ বিরোধীদের নানা উছিলায় গ্রেপ্তার নির্যাতন করা হলেও, নিজের সমর্থকদের রাখা হয় আইনের আওতার বাইরে৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
‘জুজুর ভয়’ দেখানো
বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে ভয়াবহ অবস্থা হবে, দেশ রসাতলে যাবে, বিরোধীরা কত খারাপ, ক্রমাগত সে প্রচার চালানো হয়৷ এর ফলে এমন অবস্থা তৈরির চেষ্টা হয় যাতে জনগণের মনে প্রতিপক্ষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করা যায়৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
দৃষ্টি সরাতে ভীতি সৃষ্টি
ভিন্ন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ধরনের ভীতি তৈরি করে থাকেন স্বৈরাচারী শাসকরা৷ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, গণতন্ত্রহীনতা ও দুঃখ-দুর্দশা থেকে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে রাখতে কোথাও জঙ্গি সংকট, কোথাও মাদকবিরোধী যুদ্ধ, কোথাও অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করা হয়৷
-
স্বৈরাচারী সরকারের ১০ লক্ষণ
নির্বাচনে কারচুপি
আগে জোর করে ক্ষমতায় থাকার উদাহরণ থাকলেও, এখন স্বৈরাচারী শাসকরাও নিয়মিত বিরতিতে নির্বাচন দিয়ে থাকেন৷ ‘গণতন্ত্র আছে’ জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে এমন ধারণা দেয়ার জন্য তারা নির্বাচন দেন৷ কিন্তু সে নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের আয়োজন আগে থেকেই করা থাকে৷
লেখক: অনুপম দেব কানুনজ্ঞ
‘‘যেই দেশটা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেলো সেই দেশটা আজ পরাধীনতায় ভুগছে৷'' এই মন্তব্য আতিক হাসান রুবেলের৷
‘‘শতভাগস্বৈরাচারী সরকারের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেবাংলার জনগণ!'' এই মন্তব্যটি করেছেন ডয়চে ভেলের পাঠক মহসিন আরাফাত৷
আর সাইফুল ইসলাম দুঃখ করে লিখেছেন, ‘‘মানুষের মৌলিক অধিকার বলে কিছু নেই, আমি নতুন ভোটার কিন্তু জীবনের প্রথম ভোট দিতে পারলাম না৷''
ডয়চে ভেলেকে ধন্যবাদ দিয়েছে পাঠক নাজমুল ইসলাম৷ তিনি লিখেছেন ঠিক এভাবে, ‘‘ডয়চে ভেলেকে ধন্যবাদ মানুষের সামনে স্বৈরাচারী সরকার কেমন তা তুলে ধরার জন্য৷ এতে অনেকের মুখোশ খুলে দেওয়া হয়েছে৷''
তবে এসব থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ কীভাবে আরো উন্নত হবে, কীভাবে আরও উন্নয়ন সম্ভব সেসব কথা ডয়চে ভেলের কাছে জানতে চেয়েছেন পাঠক শাওন রেজা৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: অমৃতা পারভেজ