1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও বীরাঙ্গনারা অবহেলিত!

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৫ নভেম্বর ২০২২

বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হলেও তারা এখনো সমাজে সম্মানের আসন পাননি৷ আর্থিকভাবেও ভালো অবস্থায় নেই তারা৷ নারীপক্ষের এক আয়োজনে উঠে এসেছে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাদের বঞ্চনার জীবনের কথা৷

https://p.dw.com/p/4K2pA
বীরাঙ্গনাদের সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান এখনো হয়নি বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷
বীরাঙ্গনাদের সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান এখনো হয়নি বলে ‘নারীপক্ষের’ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়৷ ছবি: Harun Ur Rashid Swapan/DW

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যৌন সহিংসতার শিকার বীরাঙ্গনা নারীদের পাশাপাশি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যৌন নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গা নারীরাও নারীপক্ষের ‘সংহতি সমাবেশ’-এ অংশ নেন৷ বৃহস্পতিবার সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে৷ সম্মীলনে কুড়িগ্রাম, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের বীরাঙ্গনা নারী এবং মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা নারীরা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে অংশ নেন৷

দুই দিনের এ আয়োজনে স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও অংশ নেন৷

আলোচনায় বীরাঙ্গনা নারীরা তাদের ওপর অত্যাচারের ক্ষতিপূরণের দাবি জানান৷ তারা সমাজে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকার প্রত্যাশার কথা বলেন৷

সমাজে বীরাঙ্গনা শব্দটি এখনো ভালো চোখে দেখা হয় না: শিরীন হক

বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্মীলন শেষ হওয়ার পর বিকেলে ধানমন্ডির নারীপক্ষের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন হয়৷ সেখানে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান নারীপক্ষের সদস্য শিরীন হক৷

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বীরাঙ্গনাদের সরকার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও তাদের দুঃখ-কষ্টের অবসান এখনো হয়নি৷ সরকারি তালিকাভুক্ত বীরাঙ্গনা নারীরা ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা পেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের ছেলে-মেয়েরা না জানিয়ে তা থেকে কিছু টাকা রেখে দেয়৷ কিন্তু যারা সরকারি তালিকাভুক্ত নন তারা নিয়মিতভাবে নারীপক্ষ থেকে মাসিক ভাতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম৷ তাই সব বীরাঙ্গনা নারীকে দ্রুত সরকারি তালিকাভুক্ত করার জোর দাবি জানানো হয়৷ যে বীরাঙ্গনাদের বয়স ৭০-৮০ বছর তারা অভাবের কারণে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং নিয়মিতভাবে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনতে পারেন না৷

তাদের ভালো বাসস্থান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করার দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে৷

বীরাঙ্গনাদের নারী মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার সরকারি প্রজ্ঞাপন গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার করা দরকার- এমন বক্তব্য উঠে আসে নারীপক্ষের আয়োজনে৷ কারণ, এটা অনেকেই জানেন না৷তাদের চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার দাবিও জানানো হয়৷

এছাড়া জাতীয় পাঠ্যক্রমে বীরাঙ্গনাদের বিষয়ে আরো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা, স্থানীয় পর্যায়ে প্রয়াত বীরাঙ্গনাদের জন্য স্মৃতিসৌধ, রাস্তা কিংবা পার্কের নামকরণ, স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবসের মতো জাতীয় কর্মসূচাতে বীরাঙ্গনাদের অন্তর্ভুক্ত করে সম্মানিত করার দাবিও জানানো হয়৷

শিরীন হক বলেন, ‘‘ছয়শ'র মতো বীরাঙ্গনা এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন৷ কিন্তু আরো অনেকে আছেন যারা তালিকাভুক্ত হননি৷ তালিকাভুক্ত হতে গেলে অনেক প্রমাণ দিতে হয়, নানা সমস্যায় পড়তে হয়৷ কিন্তু তারা যে একাত্তরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন এটা তো সবার জানা৷ এই প্রমাণই কি যথেষ্ট নয়? কিন্তু এমন ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে যে, তাদেরকেই প্রমাণ করতে হবে যে, তারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন৷’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘আরেকটা সমস্যা হচ্ছে, সমাজে বীরাঙ্গনা শব্দটি এখনো ভালো চোখে দেখা হয় না৷ এটাকে গালি মনে করা হয়৷ কিন্তু তাদেরকে বীরাঙ্গনা বলা হয়েছিল সম্মান জানাতে৷ বীরাঙ্গনা শব্দটিকে সেই সম্মানের জায়গায় নিয়ে যেতে হবে৷’’

সংবাদ সম্মেলনের আগে নারীপক্ষ প্রযোজিত একেএম মাহাদী সোমেন পরিচালিত প্রামান্য চিত্র 'বীরাঙ্গনা আখ্যান’ প্রামাণ্যচিত্রটি দেখানো হয়৷ সম্মেলন শেষে নারীপক্ষ প্রযোজিত রেহানা সামদানী কনা পরিচালিত বীরাঙ্গনা বিষয়ক একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়৷