স্বাদে আহ্লাদে বাঙালির পাতে
বাংলার খাদ্য সংস্কৃতিতের বৈচিত্র্য তুলনাহীন। ভাত-মাছ, মাংস নিত্যদিনের আইটেম। তবে শুধু রান্নার গুণে ভিন্নতা পাওয়া ভর্তা, ভাজির কদর কেবল বাঙালিই বুঝতে পারে৷ পোলাও-মাংস ছাপিয়ে বাঙালির রসনা তৃপ্ত করে এইসব ভর্তা-ভাজি।
ভর্তা-ভাত
মুঘল ঐতিহ্যের হাত ধরে এ দেশে পোলাও-কোরমা বিরিয়ানী প্রবেশ করেছে৷ সেসব খাবার বেশ তৃপ্তি নিয়েই বাঙালি খায়৷ তবে ভর্তা-ভাত হলে আনন্দ আর তৃ্প্তি সমান হারে বাড়ে৷ ভর্তা করা হয় না এমন সবজি, মাছ, শুঁটকি বোধহয় একদমই নেই৷ শুধু কী সবজি ভর্তা, এর খোসা পর্যন্ত ভর্তা করে খাওয়া হয়৷ তেল-লবণ, সরিষার তেল, দিয়ে হাত মাখা বা পাটা বা হামান দিস্তায় পিষে তৈরি ভর্তার জুড়ি নেই৷
ভাজা
ভর্তার সম্পূরক বা আলাদাভাবেই ভীষণ জনপ্রিয় ভাজা খাবার৷ বিশেষ উপলক্ষে পোলাও মাংসের সঙ্গে বেগুন ভাজা, মাছ ভাজা আলাদা বৈশ্যিষ্ট যোগ করে৷ আর নিত্যদিনের খাদ্য তালিকায় বেগুন, আলু, পটলসহ সব সবজিই ভাজা হয়৷ এমন কী শাক ভাজা প্রায় প্রতিদিনই৷ এসব ভাজার সঙ্গে যোগ হয় ভাজা শুকনো মরিচ৷ ডাল- এমন দুচারটে ভাজা আর ভাত হলে বাঙালি খেতে বসে কোনও অভিযোগই করবে না নিশ্চিত৷
এঁচোড়
কাঁচা কাঁঠালকে বলা হয় এঁচোড়৷ কাঁচা কাঁঠালের মাংসল অংশ এবং অপরিপক্ক রোয়াগুলোকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় রান্না করা হয়৷ নিরামিষভোজীরা এঁচোড়কে মাংসের সঙ্গেই তুলনা করেন৷ তাই এঁচোড় রান্নার প্রক্রিয়াটা মাংসের মতোই নানা জাতের মসলা দিয়ে করা হয়৷ তবে আমিষভোজীরা মাছ, শুঁটকি, এমনকি মাংস দিয়েও এঁচোড় রান্না করে থাকে৷ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে নানা ফোঁড়ণের সঙ্গে নারকেল দিয়ে এঁচোড় ভাজা হয়৷
চিংড়ি-কচুর লতি
ভীষণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন কচুর লতির তুলনা শুধুই কচুর লতি৷ এটা সাধারণত মাছ ও শুঁটকি দিয়েই রান্না করা হয়৷ এমনি ভাজাও করা হয়৷ চিংড়ি আর কচুর লতির মাখা মাখা তরকারি কিংবা শুঁটকি দিয়ে ভীষণ ঝাল করে করা তরকারি যে-কোনো ভোজনরসিকের জিভে জল আনবেই নিশ্চিত৷
শুঁটকি ভর্তা
খাদ্য সংরক্ষণের প্রাচীন পদ্ধতির হাত ধরে আমাদের সংস্কৃ্তিতে যে মহার্ঘ্য খাদ্যটির প্রবেশ ঘটেছে, সেটি হলো শুঁটকি৷ সাধারণত মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করে সংরক্ষণ করা হয়৷মাংসের শুঁটকিরও দারুণ কদর৷ তবে সেটি বিশেষ উৎসবে হয়৷ কিন্তু মাছের শুঁটকির কদর ক্ষেত্রবিশেষে তিনবেলাই রয়েছে৷ ভর্তা, ভাজি, ভুনা, মাখা, ঝোল, সবজি দিয়ে রান্না৷ কোনো কিছুতেই শুঁটকি ভক্তদের আপত্তি নেই৷ তবে জনপ্রিয়তায় শুঁটকি ভর্তাটাই সবার উপরে৷
মাছের ঝোল
বাঙালির খাদ্য সংস্কৃ্তি নিয়ে আলাপ তুললে পরিচয় হিসেবে যেটি উঠে আসে সেটি হচ্ছে 'মাছে-ভাতে বাঙালি'৷ তাই মাছে- ভাতে বাঙালির খাদ্য হিসেবে মাছের ঝোল হচ্ছে অন্যতম প্রিয় খাবারের একটি৷ খুব সামান্য কিছু মসলা দিয়ে, যে কোনও সবজির সঙ্গে বা সবজি ছাড়া মাছের ঝোল রান্না করা হয়৷ মাছের ঝোলে কখনও মাছ ভেজে কখনও মাছ এমনি দিয়ে রান্না করে৷
মাছের কোফতা
এটা বাঙালির অন্যতম প্রধান খাবার মাছ৷ এবার মাছ ভাজা, ভুনা, ঝোল যে-কোনো কিছুই চলতে পারে নিজস্ব রুচির ওপর ভরসা করে৷ এই মাছকে বিশেষরূপও দেওয়ার ব্যবস্থা আছে ঘরে ঘরে৷ পশ্চিমে যেটি ‘মিটবল কারি’ বাঙালি তা মাছ দিয়ে করে নাম দিয়েছে কোফতা৷ অপেক্ষাকৃত বেশি কাঁটার মাছকে পাটায় পিষে বল বানিয়ে ভেজে কোফতা করা হয়৷ চিতল ও ফলি মাছের কোফতা সর্বজনবিদিত৷
লেবু পাতায় মাছ
মাছের সঙ্গে লেবু খাওয়া কবে যে বাঙালির সংস্কৃ্তির অংশ হয়েছিল তার সুনির্দিষ্ট কোনো ইতিহাস নেই৷ তবে মাছ ভাতে লেবুর চল খুবই স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাস৷ সেই অভ্যাসের হাত ধরেই এসেছে মাছের ঝোলে লেবু পাতার ব্যবহার৷ মাছের ঝোলকে আরো আকর্ষণীয় ও সুগন্ধযুক্ত করতে আগে থেকেই ধনিয়া পাতা, জিরা পাতা এবং লেবু পাতা ব্যবহৃত হয় আসছে৷