1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বপ্ন এবং জার্মানি, পর্ব ৬

ফারজানা কবীর খান২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯

মজার মজার গল্প শুনলাম কোলন ডোম নিয়ে৷ এই ডোমের ভিতরে নাকি একটা দেয়াল আছে যেখানে শয়তানের নখের চিহ্ন পাওয়া যায়৷

https://p.dw.com/p/GlPn
কোলন ডোমছবি: dpa

গল্পটা এরকম... যখন বিশ্বযুদ্ধে ডোমের একপাশের দেয়াল ধ্বসে যায়, তখন এক প্রকৌশলীকে তা মেরামত করার জন্য ডাকা হয়৷ ওই প্রকৌশলী সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখে তাকে শয়তান বলছে, তার একার পক্ষে এই দেয়ালটি মেরামত করা সম্ভব নয়, কারন ডোম বানানোর সময় যে পাথর ব্যবহার করা হয়েছে তা এখন আর পাওয়া সম্ভব নয়৷ সেই পাথর এনে কাজ করতে হলে তার অনেক সময় প্রয়োজন৷ তাকে যে নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয়েছে তার মাঝে এই কাজটি শেষ করা অসম্ভব, তাই নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে হলে তাকে শয়তানের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হবে৷ শয়তান তাকে সাহায্য করবে কিন্তু তাকে একটি শর্ত পূরণ করতে হবে৷ শর্তটি হলো যদি শয়তান তাকে দেয়াল তুলে দিতে সাহায্য করে তাহলে তাকে তার স্ত্রী, সন্তান এবং তার নিজের আত্মা শয়তানের হাতে তুলে দিতে হবে৷ এবং তা করতে হবে দেয়াল নির্মাণ শেষ হওয়ার আগের রাত পোহানোর আগে, অর্থাৎ ভোর বেলা মোরগ ডাকার আগেই৷

প্রকৌশলী আর উপায় না দেখে সেই শর্তে রাজি হয়ে যায়৷ তাই শয়তান তাকে সাহায্য করে সময়মতো দেয়ালটি মেরামত করতে৷ কিন্তু চিন্তায় পড়ে যায় ধর্মপ্রাণ প্রকৌশলী৷ সে তার স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে থাকে কিভাবে শয়তানের হাত থেকে বাঁচা যায়৷ ধীরে ধীরে শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণের দিন চলে আসে৷ কিন্তু বাঁচার কোন রাস্তা খুঁজে পায়না৷ মন খারাপ করে যখন প্রকৌশলী চার্চের দিকে এগিয়ে যায় তখন তার স্ত্রী তাকে বলে তুমি আগে যাও ,আমি পরে আসছি৷তারপর প্রকৌশলী স্ত্রীকে রেখে চার্চের দিকে এগিয়ে গেল৷ শয়তানও হাজির হয় প্রকৌশলীর আত্মাকে নিজের অধীন করতে ৷ ঠিক আত্মা গ্রহণ করার আগ মুহূর্তে যে সময়ে মোরগ ডেকে ওঠার কথা তার আগেই ভেসে আসে মোরগের ডাক ৷ একটি মোরগ ডাকার সাথে সাথে ওই অঞ্চলের সব মোরগ ডেকে ওঠে৷ তাই শয়তানকে প্রকৌশলীর আত্মা গ্রহণ করার আগেই চলে যেতে হয়৷

প্রকৌশলী তখন তাড়াতাড়ি ডোম থেকে বের হয়ে আসে৷ তখন স্ত্রী তাকে জানায় প্রথম যে মোরগ ডেকে ওঠে সেটি আসলে মোরগ ছিল না৷ তার স্ত্রী মোরগের কন্ঠ নকল করে৷ কিন্তু সেখানে ঘাপটি মেরে বসেছিল শয়তান৷ তা তারা জানতোনা৷ সে তাদের এই কথোপকথন শুনে ফেলে এবং সাথে সাথে যে দেয়ালটি তারা নির্মাণ করছিল সেটিতে একটা থাবা বসিয়ে দেয়৷ তার থাবার দাগ এখনো সেই দেওয়ালে পাওয়া যায়৷ অনেক আগে এরকম একটা রূপকথার গল্প আমি পড়েছিলাম, সেটা মনে পড়ে গেল৷

কোলন ডোমের পাশেই বিশাল নিউ মার্কেট৷ জার্মান ভাষায় যাকে বলা হয় নয়ে মার্কট৷ এতো মানুষের ভিড়, এত কোলাহল যে তাদের পাশে বিদেশ বিভূঁইয়ে যখন একা হাঁটি আমি, নিজেকে আর একা মনে হয় না৷ যদিও কাউকে চিনি না কিন্তু মানুষের মুখের হাসি দেখতে ভালো লাগে আমার৷ তারপর যখন বের হলাম কোলন ডোম এলাকা থেকে তখন সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে৷ তাই আর দেরী না করে ট্রাম ধরে বাড়ীর পথে ফিরি আমি৷ মনের মাঝে কোলন ডোম, তার রূপকথা আর জার্মানিকে ঘেরা পুরোনো স্বপ্ন ...