স্থিতি ফেরাতে লেবাননে সৌদি বাদশা আর সিরিয় প্রেসিডেন্ট
৩০ জুলাই ২০১০শিয়া আর সুন্নী – লেবাননে এই দুই গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব বহুদিনের৷ আর পাঁচ বছর আগে সুন্নী নেতা রাফিক হারিরি হত্যাকাণ্ডের পর তা আরো জটিল হয়৷ লেবাননের সুন্নী গোষ্ঠীর প্রতি আশীর্বাদ রয়েছে সৌদি আরবের৷ অন্যদিকে শক্তিশালী শিয়া দল হিজবুল্লাহ পেয়ে আসছে সিরিয়ার সমর্থন৷ আর তাই নেপথ্যের দুই শক্তিকে বৈরুত এনে একটা সমঝোতা করতে চাইছেন রফিক হারিরির ছেলে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি৷ গত বছর নির্বাচনের পর সাদ হারিরির সুন্নী জোট বেশি আসনে জয়ী হয়৷ যদিও সরকার গঠনের জন্য তা যথেষ্ট ছিলো না৷ অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর শিয়া দলগুলোর সমর্থন নিয়ে সাদ সরকার গঠন করেন৷ তবে রফিক হত্যাকাণ্ডে হিজবুল্লাহর কয়েকজন নেতাকে জাতিসংঘ ট্রাইবুন্যাল অভিযুক্ত করতে পারে, সে আভাস মেলার পর ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে৷ নতুন করে সংঘাতের আশঙ্কাও করছেন অনেকে৷
বাদশাহ আবদুল্লাহ আর প্রেসিডেন্ট বাশার শুক্রবারই পৌঁছেছেন বৈরুতে, দামেস্ক থেকে একসঙ্গে রওনা হন তাঁরা৷ মিশর থেকে বৃহস্পতিবার সিরিয়া যান আবদুল্লাহ৷ বাদশা হওয়ার পর এটাই তাঁর প্রথম লেবানন সফর৷ এর আগে রাজপুত্র হিসেবে গিয়েছিলেন, সেটা ২০০২ সালের কথা৷ আর রফিক হত্যাকাণ্ডের পর বাশারও এবারই প্রথম লেবাননে পা রাখলেন৷ লেবাননে মোতায়েন ছিলো সিরিয় সৈন্য৷ কিন্তু রফিক হতাকাণ্ডের পর সিরিয়াবিরোধী বিক্ষোভের মুখে সৈন্যদের সরিয়ে আনে দামেস্ক৷ আর তখন অনেকের সঙ্গে সাদ হারিরিও বাবার হত্যাকাণ্ডের জন্য সিরিয়াকে দায়ী করেন৷ অবশ্য এখন সে অবস্থান থেকে সরে এসেছেন তিনি৷ গত আট মাসে চারবার গিয়েছেন দামেস্কে, বৈঠক করছেন বাশারের সঙ্গে৷ দেশে একটা স্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করতেই সাদের এই তৎপরতা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা৷ অর্থাৎ, লেবাননে শিয়া-সুন্নী দ্বন্দ্বের অবসানে দুজনের এই সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেই মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল৷
বিমানবন্দরে সৌদি বাদশা আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান লেবাননের প্রেসিডেন্ট মিশেল সুলাইমান ও প্রধানমন্ত্রী সাদ৷ এরপরই তাঁরা যান প্রেসিডেন্ট ভবনে৷ বৈঠক করছেন তাঁরা৷ তবে এর ফলাফল এখনো জানা যায়নি৷ দুই নেতার সফরকে কেন্দ্র করে বেশ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে বৈরুতে৷ সড়কগুলোর পাশে উড়ছে দুই দেশের পতাকা৷ শোভা পাচ্ছে সফরকারী দুই নেতার বড় বড় প্রতিকৃতিও৷ রাস্তায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার৷ পুলিশের সঙ্গে টহল দিচ্ছে সেনা সদস্যরাও৷
সুন্নী নেতা সাদ যে দুই শীর্ষ নেতাকে বৈরুতে আনলেন, তাতে সমর্থন পাচ্ছেন হিজবুল্লাহরও৷ সাদ বলছেন, দুই নেতার এই সফর ঐতিহাসিক৷ তাঁর দেশে স্থিতিশীলতা আনতে তা রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷ আর হিজবুল্লাহর উপপ্রধান হাসান ফাদলাল্লাহ বলছেন, এই সফর আরব জাহানের ঐক্যের প্রতীক৷
হারিরি হত্যাকাণ্ডের জন্য জাতিসংঘ ট্রাইবুন্যাল যদি হিজবুল্লাহর কাউকে অভিযুক্ত করে তবে টলমলো হয়ে যাবে সাদের সরকার৷ আর তাই দুই নেতা যার যার পক্ষকে সামলাবে, এটাই আশা করছে লেবাননের জনগণ৷ আর সেজন্যই যে এই সফর তা স্পষ্ট৷
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আবার এর মধ্যে অন্য একটি আহ্বান জানিয়েছে সৌদি বাদশা ও সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে৷ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরুর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের এই দুটি দেশের তৎপরতা প্রত্যাশা করেছে তারা৷ তবে এর প্রতিক্রিয়ায় সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দিয়েছে কড়া উত্তর৷ তারা বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে কী করলে ভালো হবে, আর কী করলে খারাপ হবে৷ তা সিরিয়া ও সৌদি আরব ভালোই জানে৷ এ নিয়ে কাউকে উপদেশ দিতে হবে না৷
প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক