1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্ট্রেস কমাতে শহরে চাই আরো সবুজের ছোঁয়া

২৯ নভেম্বর ২০২২

শহুরে জীবনযাত্রায় মানসিক চাপে ভোগেন না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন৷ কিন্তু শহরের মধ্যেও বিশেষ কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে স্ট্রেসের মাত্রা কমানো সম্ভব বলে গবেষকরা মনে করছেন৷

https://p.dw.com/p/4KD8y
স্ট্রেস গবেষক মাজদা আদলি বলেন, ‘‘বাসার আশেপাশে সবুজ অংশের অনুপাত যে বড় ভূমিকা পালন করে, এই পরীক্ষায় আমরা তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছি৷’’
গবেষক মাজদা আদলি ছবি: DW

শহরে মানসিক চাপ কমানোর উদ্যোগ

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন ড. মাজদা আদলি৷ তাঁর মতে, বড় শহরের মানুষের মস্তিষ্ক সত্যি স্ট্রেসের মুখে অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ তিনি মস্তিষ্কের ভেতরের ক্রিয়া আরও সহজ করে ব্যাখ্যা করতে বলেন, ‘‘আমি আপনার জন্য সেটা চাক্ষুষ করে তুলতে পারি৷ ভেতরের ক্রিয়াকাণ্ড দেখাতে পারি৷ এটা হলো অ্যামিগডালা৷ সেখানে আবেগ, স্ট্রেস, হুমকির ধাক্কা সামলানো হয়৷ শহরের আয়তন যত বড় হবে, এই অংশ স্ট্রেসের মুখে ততই সক্রিয় প্রতিক্রিয়া দেখাবে৷ এছাড়াও আর একটি অংশ রয়েছে৷ সামনের সিংগুলেট কর্টেক্সও স্ট্রেস ও আবেগ সামাল দেয়৷'' 

শহরে মানসিক চাপ কমানোর উদ্যোগ

যে সব মানুষ শুধু বড় শহরে বাসই করেন না, সেখানেই বেড়ে উঠেছেন, তাদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের এই অংশ আরও জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায়৷ অর্থাৎ, শহুরে মানুষের মস্তিষ্কে স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট আগে থেকেই প্রোগ্রাম করা রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও প্রত্যেক শহরবাসী অসুস্থ হয়ে পড়েন না৷ স্ট্রেস সত্ত্বেও আমাদের শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা থাকতে হবে৷

সেই ক্ষমতা পরীক্ষা করতে মাজদা আলি ও তাঁর টিম এমআরটি যন্ত্রে বড় শহরের মানুষের মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করেছেন এবং তাঁদের সত্যিকারের স্ট্রেস পরিস্থিতির মধ্যে ফেলেছেন৷ তাঁর স্বেচ্ছাসেবীদের কিছু অংক করতে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু তারা জানতেন না, যে সীমিত সময়সীমার মধ্যে সেই অংকের ফল বার করা সম্ভব নয়৷ ফলে তাঁরা লাগাতার নেতিবাচক মন্তব্য করতে থাকলেন৷ অর্থাৎ মানসিক চাপে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়লেন৷

তারপর গবেষকদের দল স্বেচ্ছাসেবিদের বাসার আশেপাশের পরিবেশ খতিয়ে দেখলেন৷ স্টেসের মাত্রার উপর তার কি কোনো প্রভাব ছিল? গবেষক হিসেবে মাজদা আদলি বলেন, ‘‘বাসার আশেপাশে সবুজ অংশের অনুপাত যে বড় ভূমিকা পালন করে, এই পরীক্ষায় আমরা তার স্পষ্ট ইঙ্গিত পেয়েছি৷ মস্তিষ্কের যে সব অংশ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ও স্ট্রেস সামলাতে সাহায্য করে, সেগুলি কতটা সক্রিয় – গাছপালার অনুপাত তার উপরও প্রভাব রাখে৷ অর্থাৎ বাসার আশেপাশের পরিবেশ যত সবুজ হয়, মস্তিষ্কের স্ট্রেস সামলানোর অংশগুলিও ঠিক তত বেশি সক্রিয় থাকে৷''

বাসস্থানের এলাকায় অনেক গাছপালা, পার্কের অস্তিত্ব থাকলেই স্থায়ী স্ট্রেস থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব৷ সেইসঙ্গে সামাজিক মেলামেশার জায়গাগুলিও একাকিত্ববোধ কাটাতে সাহায্য করে৷ সেখানে যোগাযোগ স্থাপন ও মিলেমিশে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে৷ 

স্ট্রেস গবেষক হিসেবে মাজদা আদলি তাই শহরে আরও সবুজ অংশের দাবি করছেন৷ তবে সেই পরিবেশকে যোগাযোগ বাড়াতেও সহায়ক হতে হবে৷ কারণ বিষণ্ণতায় ভরা আবাসনের ব্লকের মাঝেও প্রায়ই ভাবনাচিন্তা না করে কিছু গাছপালা লাগানো হয়৷ বিষণ্ণ সেই পরিবেশে কেউই সময় কাটাতে চায় না৷

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক মাপকাঠি মাথায় রেখে নির্মাণ করা হয় বলে বাড়িঘরের আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে তেমন মাথা ঘামানো হয় না৷ কিন্তু শহর পরিকল্পনাকারীদের সেই মনোভাব বদলানো উচিত৷ কারণ একাধিক নতুন গবেষণা অনুযায়ী আবাসনের ব্লকের মাঝে ছোট একফালি সবুজের ছোঁয়া অথবা এমন মিনি পার্ক সামাজিক আদানপ্রদান তরান্বিত করতে পারে৷ সেখানে সবসময়ে ছোট আড্ডারও সুযোগ থাকে৷

প্রতিবেশীরা যখন নিজস্ব উদ্যোগে সবুজের দখল নেন, সেখানে সেটা আরো ভালোভাবে ঘটে৷ আর্বান গার্ডেনিং এমন এক প্রবণতা, যা স্ট্রেস ও একাকিত্বের বিরুদ্ধে সাহায্য করতে পারে৷ বিশ্বের অনেক শহরে এমন উন্মুক্ত বাগান রয়েছে৷

প্রতিবেদন: আনিয়া গালনস্কা/এসবি