1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে যৌন নিপীড়ন রোধে আদালতের নির্দেশ

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ অক্টোবর ২০১৮

সাম্প্রতিক সময়ে পড়ুয়া নিগ্রহের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে কলকাতার বিভিন্ন স্কুলে৷ শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহ রুখতে নতুন নির্দেশিকার প্রয়োজন আছে বলে মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ নির্দেশিকা তৈরির জন্য কমিটি গড়ে দিয়েছে আদালত৷

https://p.dw.com/p/37FsC
ছবি: DW/P. Samanta

গত কয়েক মাসে কলকাতার একাধিক স্কুলে শিশু পড়ুয়ার যৌন নিগ্রহের ঘটনা সামনে এসেছে৷ কখনো শিক্ষক, কখনো অশিক্ষক কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে৷ ক্ষিপ্ত অভিভাবকেরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন স্কুলে৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসন, এদের কাজকর্মে অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ৷ তাঁদের বক্তব্য, স্কুলে শিশুদের উপর নিগ্রহের অভিযোগের সুরাহা হয়নি, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারেও কর্তৃপক্ষ আন্তরিক নন৷ তাই অভিভাবকরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি নাদিরা পাথেরিয়া অক্টোবর মাসের গোড়ায় নয়া কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন৷ কলকাতার আটটি প্রথম সারির স্কুলের প্রতিনিধিদের ওই কমিটিতে রাখার কথা বলা হয়৷ রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটির সদস্য স্কুলশিক্ষা দপ্তরের প্রধান সচিব৷ আইন বিশারদ থেকে ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত আদালতের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে৷ এই কমিটি নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালাচ্ছে৷

‘কমিটি করে কোনও লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না’

সদস্যরা এই আলোচনার ভিত্তিতে তৈরি করবেন একটি নির্দেশিকা, যার লক্ষ্য হবে স্কুলে শিশুদের যৌন হেনস্থায় লাগাম টানা৷ ১২ নভেম্বর এই নির্দেশিকা আদালতে জমা দিতে হবে কমিটিকে৷ নির্দেশিকায় বলতে হবে, শিশুদের যৌন নিগ্রহ কীভাবে রোখা সম্ভব৷ কী হতে পারে পথ ও পদ্ধতি৷ ওই তারিখেই হবে অভিভাবকদের দায়ের করা মামলার পরের শুনানি৷ নির্দেশিকা খতিয়ে দেখে পরবর্তী নির্দেশ দেবে কলকাতা হাইকোর্ট৷

আদালতের এই পদক্ষেপ কিছুটা আশ্বস্ত করেছে শহরের অভিভাবকদের৷ মলয়কান্তি সরকারের সন্তান কলকাতার একটি নামী স্কুলের পড়ুয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘আদালতের এই নির্দেশ অবশ্যই স্বস্তি দিয়েছে৷ তবে এখনই কিছু বলার সময় আসেনি৷ এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া৷ কঠোর নির্দেশিকা জারি হলেই হবে না, স্কুল সেটা কতটা মেনে চলছে ছাত্র-ছাত্রীদের সুরক্ষার স্বার্থে, সেটাও বড় ব্যাপার৷''

রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের সদস্য সুদেষ্ণা রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘কিছুদিন আগে এ ধরনের একটি নির্দেশিকা আমরা প্রকাশ করেছি৷ একটি রিপোর্ট ও পুস্তিকাও প্রকাশিত হয়েছে, যার লক্ষ্য স্কুলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা৷ প্রতিটি স্কুলে শিশুদের পড়াশোনার উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা৷'' তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে গিয়ে একটি শিশু যৌন হেনস্থার মুখে পড়বে, এর থেকে খারাপ ঘটনা কী হতে পারে৷ অভিভাবকরা চাইছেন, শুধু নির্দেশিকা জারি নয়, কঠোরভাবে তা কার্যকর করা হোক৷ নইলে এসব পদক্ষেপ কাগজে-কলমেই রয়ে যাবে৷''

‘এই সমস্যার দ্রুত কোনও সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না’

স্কুলে শিশুর হেনস্থার ঘটনার আরেকটি ভয়াবহ দিক, শিক্ষকদের দিকে অভিযোগের আঙুল ওঠা৷ গত নভেম্বরে জি ডি বিড়লা স্কুলে একটি তিন বছরের শিশুকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে৷ যে সমাজে একটা সময় মনে করা হতো, শিশুর বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেন তার শিক্ষকরা, সেখানে এ ধরনের অভিযোগ আলোড়ন তুলবেই৷ এই অভিযোগ স্বাভাবিকভাবেই স্তম্ভিত করেছে সবাইকে৷ শান্তিনিকেতনের পাঠভবনের প্রা্ক্তন অধ্যক্ষ সুপ্রিয় ঠাকুরও ক্ষুব্ধ৷ তিনি বললেন, ‘‘এটাকে পশুত্ব ছাড়া কী বলব৷ মানুষের মধ্যে যে পাশবিক প্রবৃত্তি রয়েছে তারই প্রকাশ৷ এই ভাইরাস থেকে মুক্তির পন্থা ঠিক করা খুবই কঠিন৷ এই সমস্যার দ্রুত কোনো সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না৷'' অতীতের শিক্ষক-ছাত্রের সম্পর্কে আজকের পৃথিবীর নয়া মূল্যবোধের প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ৷ সুপ্রিয় ঠাকুরের ভাষায়, ‘‘আগে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না, এমনটা নয়৷ তবে এতটা সামনে আসত না৷ এখন মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে৷ তাই এত বেশি ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে৷''

জি ডি বিড়লায় অভিযুক্ত ছিলেন শিক্ষকরা, এম পি বিড়লা স্কুলে অভিযোগ উঠেছিল অশিক্ষক কর্মীর বিরুদ্ধে৷ এ বছরে দক্ষিণ কলকাতার দুটি স্কুল, বেহালার একটি প্লে স্কুলে শিশু পড়ুয়ার যৌন হেনস্থার ঘটনায় শোরগোল হয়েছে৷ এই মাসেই ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস স্কুলে প্রাথমিক বিভাগের এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের শিক্ষকের বিরুদ্ধে৷

‘নিগ্রহের পর শিশু যে কতটা ট্রমার মধ্যে থাকে, তা আমরা বোঝার চেষ্টা করি না’

অভিভাবকদের অভিযোগ, ২৪ সেপ্টেম্বর হেনস্থার শিকার হয় ছাত্রীটি৷ মেয়ে বাড়ি ফিরে অসুস্থ বোধ করায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়৷ এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলে বিক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা, ভাঙচুরও করা হয় বলে অভিযোগ৷ বিনোদিনী গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী নির্দিষ্টভাবে এই ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দীপান্বিতা বলেন, ‘‘কমিটি করে কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না৷ সমাজে পচন ধরেছে, এটা তারই প্রতিফলন৷ স্কুল সমাজেরই অংশ, সেখানে এই ঘটনা ঘটলে প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে৷ এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য দরকার আত্মশিক্ষা৷'' তিনি আরো মনে করেন, ‘‘অভিযোগ উঠলেই কোনো শিক্ষককে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়৷ আগে দেখতে হবে, আদৌ হেনস্থা হয়েছে কিনা৷''

এসব অভিযোগ, টানাপোড়েন, আইনি লড়াইয়ের মধ্যে আড়ালেই থেকে যায় শিশুটি৷ মনোচিকিৎসক কামাল হোসেন বলেন, ‘‘নিগ্রহের পর শিশু যে কতটা ট্রমার মধ্যে থাকে, তা আমরা বোঝার চেষ্টা করি না৷ এই ঘটনা তার উপর আজীবন প্রভাব রাখতে পারে৷ তার ব্যক্তিত্বের গঠন বদলে দিতে পারে৷ স্কুলে নজরদারি অবশ্যই থাক, তাতে আরো গুরুত্ব দেওয়া হোক, কিন্তু শিশুর আতঙ্ক দূর করে তাকে স্বাভাবিক করে তোলার উপর সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি দেওয়া উচিত৷''

আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷