‘সেবিট ২০১০'এর মূল আকর্ষণ
৫ মার্চ ২০১০নতুনের আকর্ষণ
আপনাদের মধ্যে যারা সিনেমা হলে গিয়ে বিশেষ চশমা পরে ‘অবতার' ছবির ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করেছেন, কেমন লেগেছে সেই অভিজ্ঞতা? বাড়িতে বসে টেলিভিশনের পর্দায়ও যদি এমন ‘থ্রি ডাইমেনশনাল' বা ত্রিমাত্রিক ছবি দেখা যেত! তবে সেক্ষেত্রে সবার জন্য চশমার ব্যবস্থাও করতে হত৷ না, চশমার প্রয়োজন নেই৷ এমন টেলিভিশন পর্দা বাজারে আসতে চলেছে, যার দিকে তাকালে চশমা ছাড়াই ত্রিমাত্রিক জগতের গভীরতা অনুভব করা যায়৷ এমন আরও অনেক চমক ছড়িয়ে রয়েছে সেবিট মেলার আনাচে কানাচে৷
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আগামীকাল যা বাজারে আসতে চলেছে, আজই তা পরখ করে দেখার জন্য সেবিট মেলার মত মঞ্চ আর হয় না৷ শুধু নতুন ও উন্নত ডিভাইসই নয়, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যেসব নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বা আসতে চলেছে, সেবিষয়েও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায় এখানে এলে৷ মনে প্রশ্ন জাগলে তার জবাব দেওয়ার জন্য উপস্থিত থাকেন বিশেষজ্ঞরা৷
ডিজিটাল ‘অরাজকতা'
আজকাল ডিজিটাল ক্যামেরার কল্যাণে আর আগের মত গুনে গুনে ছবি তুলতে হয় না৷ কিন্তু এই উদারতার ফলে আমরা নিজেরাই নিজের অজান্তে এত ছবি তুলে ফেলি, যে পরে সেগুলি ঠিকমতো গুছিয়ে, ভাল ছবিগুলি বাছাই করার কাজ আর হয়ে ওঠে না৷ একসঙ্গে কয়েক'শ ছবি দেখলেই গায়ে জ্বর আসে৷ জার্মানির অভিনব গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রাউনহোফার সোসাইটি' এমন এক সফটওয়্যার তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে কম্পিউটারই ছবি গোছানোর ও বাছাইয়ের কাজ করে দেবে৷ যেমন দিল্লি-আগ্রা বেড়ানোর ছবিগুলি তুলে দিন সফটওয়্যারের হাতে৷ দেখবেন লাল কেল্লা, তাজ মহল, ফতেপুর সিক্রির সামনে দাঁড়ানো আপনার সেরা ছবিগুলি আলাদা করে বাছাই করেছে সফটওয়্যার৷ আবার কেউ অভিমান করে বলতে পারবে না, আমি বাদ পড়েছি৷
‘ফ্রাউনহোফার'এর অবদান
নামে না চিনলেও এই ‘ফ্রাউনহোফার সোসাইটি'র কাজ আমাদের জীবনে কোথাও না কোথাও ছাপ ফেলেছে৷ কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে যখন পছন্দের গান শোনেন, তখন যে এমপি-থ্রি ফাইলের কল্যাণে এই আনন্দ পান, তার আবিষ্কর্তা এই প্রতিষ্ঠান৷ ভিডিও-র ক্ষেত্রেও বিপ্লব এনে দিয়েছেন ফ্রাউনহোফারের গবেষকরা৷ তাঁদের গবেষণার যে ফলাফল সেবিট মেলায় আজ দেখা যায়, কয়েক বছর পর হয়তো তা বাজারে এসে পড়বে৷ যেমন কোন বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং-এর সামনে দাঁড়িয়ে যখন পছন্দ হলে মুচকি হাসবেন বা অপছন্দ হলে ভুরু কুঁচকে বিরক্তিতে মাথা নাড়বেন, তখন কিন্তু ক্যামেরা সেটা লক্ষ্য করে আপনার আবেগ-অনুভূতি বুঝে নিয়ে সংস্থাকে জানিয়ে দিতে পারবে, বিজ্ঞাপন আদৌ সফল হয়েছে কি না৷ অথবা রান্নাঘরে কাজ করতে করতে পছন্দের সিরিয়ালের কথা মনে পড়ে গেলে হলুদ মাখানো হাতে যদি রিমোট কন্ট্রোল ধরতে অসুবিধা হয়, কোন সমস্যা নেই৷ শুধু শূন্যে আঙুল নাড়িয়ে পর্যায় রিমোট কনট্রোল ছড়িতে পছন্দসই চ্যান্সেলার নম্বর টিপে দিন৷ সেই রিমোট দিয়েই ফ্যানটা চালাতে পারেন৷
প্রশাসন ও প্রযুক্তি
শুধু এমন নতুন চমক নয়, প্রযুক্তির উন্নতি কাজে লাগিয়ে সরকার ও প্রশাসন মানুষের জীবনযাত্রা কীভাবে আমূল বদলে ফেলার পরিকল্পনা করতে পারে, তার এক পূর্বাভাষ পাওয়া গেল এবারের মেলায়৷ জার্মানি সহ বেশ কিছু দেশে প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্র বহন করতে হয়৷ সেই পরিচয়পত্রে শুধু ছবি, নাম-ঠিকানার মত সাধারণ তথ্য পড়া যায়৷ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে ডাকঘরে নিজের পার্সেল আনতে গেলে এই পরিচয়পত্র দেখাতে হয়৷ কিন্তু আজকের এই ডিজিটাল যুগে সব কাজ সশরীরে করার প্রয়োজন পড়ে না৷ সেক্ষেত্রে সাধারণ পরিচয়পত্র অচল৷ জার্মান সরকার আগামী ১লা নভেম্বর থেকে চালু করতে চলেছে এমন এক নতুন পরিচয়পত্র, যা মানুষের জীবনযাত্রা আমূল বদলে দেবে৷ ক্রেডিট কার্ডের মত দেখতে এই সচিত্র পরিচয়পত্রের মধ্যে থাকবে বিশেষ এক চিপ৷ অনলাইন পদ্ধতিতে নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে পারবে এই চিপ৷ আঙুলের ছাপের মত বায়ো-মেট্রিক বৈশিষ্ট্যে ও পিন কোডের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রায় যে কোনো আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যক্তি পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চয়তা নিয়ে আসবে নতুন এই পদ্ধতি৷ এমনকি কোন কাগজে সই করার বদলে অনলাইন পদ্ধতিতে পরিচয়পত্রের মাধ্যমে সই করা যাবে৷ বলাই বাহুল্য, এই সব নতুন গুণাগুণের অপব্যবহার রুখতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক