1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সেটি’ প্রকল্পের ৫০ বছর

২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০

বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে আমরা কি একা? এই প্রশ্ন মানুষের মনে আবহমানকাল ধরেই রয়েছে৷ ঠিক ৫০ বছর আগে বিজ্ঞানীরা ‘সেটি' নামের প্রকল্পের আওতায় অন্য গ্রহে সভ্যতার সন্ধান শুরু করেছিলেন৷

https://p.dw.com/p/MEXH
এমনই রেডিও টেলিস্কোপের সাহায্যে বহির্বিশ্বের সঙ্কেতের জন্য ‘কান পেতে’ রয়েছে পৃথিবীর মানুষছবি: dpa Zentralbild

প্রেক্ষাপট

কল্পবিজ্ঞান কাহিনীগুলিতে অন্য গ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে অনেক কিছু লেখা হয়েছে, ‘অবতার'এর মত চলচ্চিত্রের পর্দায়ও ভেসে উঠেছে অন্য গ্রহের সভ্যতার কাল্পনিক জগত৷ ‘সার্চ ফর এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল ইনটেলিজেন্স' – সংক্ষেপে ‘সেটি'৷ অন্য গ্রহে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব খোঁজার এই প্রকল্প সম্পর্কে গত ৫ দশকে পত্রপত্রিকা, কল্পবিজ্ঞানের গল্প, ছায়াছবি ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু চর্চা হয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় এই প্রকল্পের মূল কেন্দ্র৷ ১৯৬০ সালের এপ্রিল মাসে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এই উদ্যোগ শুরু করেছিলেন৷ জাতীয় রেডিও অ্যাস্ট্রোনমি কেন্দ্র থেকে তিনি দুটি নক্ষত্রের দিক থেকে আসা কিছু অদ্ভুত সঙ্কেত শোনার চেষ্টা করেছিলেন৷

Filmszene Avatar
অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীদের কি ‘অবতার’ ছবির চরিত্রের মত দেখতে?ছবি: 2009 Twentieth Century Fox

বিশ্বব্রহ্মান্ডে বিভিন্ন মহাজাগতিক বস্তু থেকে যে স্বাভাবিক রেডিও সঙ্কেত পাওয়া যায়, সেই ভিড়ের মধ্যে অস্বাভাবিক কোন সঙ্কেত খুঁজে বের করা অত্যন্ত কঠিন৷ অথচ অন্য কোন গ্রহে যদি উন্নত সভ্যতা থেকে থাকে এবং তারাও যদি আমাদের মত গ্রহের খোঁজ চালায়, সেক্ষেত্রে তাদের বার্তা কোন না কোন সময় আমাদের কাছে পৌঁছবেই – এই বিশ্বাস থেকেই এমন সঙ্কেতের জন্য কান পেতে রয়েছে ‘সেটি'র অসংখ্য রেডিও টেলিস্কোপ৷ তবে শুধু কান পেতে থাকলেই চলে না, বছরের পর বছর ধরে যে সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছে তা শুনে, বিশ্লেষণ করে, বিশেষ কোন বার্তা এলে তা চিহ্নিত করতে হলে প্রয়োজন এক বিশাল কর্মযজ্ঞের৷ তাই সেটি প্রকল্পের আওতায় অনেক স্বেচ্ছাসেবীও তাদের নিজস্ব কম্পিউটারের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণের কাজ ভাগাভাগি করে নেয়৷

Hubble Bilder Bislang tiefstes Bild vom Universum Flash-Galerie
মহাকাশের গভীরে হয়ত শোনা যাবে প্রাণের স্পন্দনছবি: AP

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সঙ্কেত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও বেড়ে চলেছে৷ সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ানোর জন্য এই বাড়তি ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ আগামী ২০ বছরের মধ্যে একই সঙ্গে ১০ লক্ষ নক্ষত্র থেকে আসা রেডিও সঙ্কেত গ্রহণের ক্ষমতার কাঠামো তৈরি হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে৷

TV Gerät 60er Jahre
গত শতাব্দীর ষাটের দশকের টেলিভিশন অনুষ্ঠানের সঙ্কেত আজ মহাকাশের গভীরে পৌঁছে গেছে৷ছবি: picture-alliance/ dpa

কিন্তু আর কতকাল ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে ভিন গ্রহের ‘হ্যালো' শোনার জন্য? ‘সেটি'র সঙ্গে যুক্ত মানুষরা জানেন, এই কাজ অধৈর্য ছটফটে মানুষদের জন্য নয়৷ এমনই একজন ড্যান ওয়ারটাইমার৷ তাঁর মতে, প্রযুক্তির উন্নতি সত্ত্বেও শুধুমাত্র অঙ্কের হিসেবে আরও ২৫০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে৷ বিশাল মহাসাগরে এক গ্লাস জলের খোঁজের সঙ্গে এই উদ্যোগের তুলনা করা যেতে পারে৷ কিন্তু সেই স্তরে পৌঁছনোর জন্য বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন৷ তাঁরা জানেন, নিজেদের জীবদ্দশায় তাঁরা হয়ত সাফল্য দেখে যেতে পারবেন না, কিন্তু তাঁদের কাজ পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷

পৃথিবীর অস্তিত্বের বার্তা

এতো গেল পৃথিবীর মানুষের কথা৷ আমরা যেমন অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীর সঙ্কেতের জন্য অপেক্ষা করছি, তেমন অন্য কোন গ্রহে এমন প্রাণী থাকলে তারা আমাদের সঙ্কেত কীভাবে গ্রহণ করবে? রেডিও-টেলিভিশনের প্রথম যুগে অ্যানালগ পদ্ধতিতে যে সম্প্রচার করা হত, সেই সঙ্কেত পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে ধেয়ে চলেছে মহাশূন্যের দিকে৷ কিন্তু যবে থেকে ডিজিটাল সম্প্রচার শুরু হয়েছে, সেই সঙ্কেত আগের তুলনায় অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ ফলে প্রায় ৫০ বছর ধরে মানুষ যে অ্যানালগ সঙ্কেত পাঠিয়েছে, তা হয়ত কখনো বহু দূরে কারো গ্রাহক যন্ত্রে ধরা পড়তে পারে৷ একবার ভেবে দেখুন, আপনার প্রিয় কোন পুরানো টেলিভিশন অনুষ্ঠান বা বিজ্ঞাপন দেখে দূরের কোন গ্রহের প্রাণীর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে!

‘সেটি' প্রকল্পের পাশাপাশি যেসব উদ্যোগ চলছে, সেগুলির মাধ্যমে হয়ত প্রাণের সন্ধান পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী৷ যেমন গত কয়েক বছরে বিভিন্ন নক্ষত্রের আশেপাশে একের পর এক গ্রহ আবিষ্কৃত হয়ে চলেছে৷ তাদের মধ্যে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে কি না, তার খোঁজ চলছে৷ কিন্তু ক্রমশঃই এই ধারণা বেড়ে চলেছে, যে আমাদের সৌরজগতে যা ঘটেছে, তা কোন বিচ্ছিন্ন অলৌকিক প্রবণতা নয় – এমন ঘটনা হয়তো আরও অনেক নক্ষত্রের ক্ষেত্রে ঘটেছে বা ঘটছে৷ ফলে কে জানে, হয়তো কোন একদিন সকালে উঠে চায়ের পেয়ালা হাতে নিয়ে খবরের কাগজ খুলেই পড়বেন, যে দূরের কেউ আমাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই