1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপ্ত আগ্নেয়গিরি যখন জাগ্রত হয়

১৬ অক্টোবর ২০১৭

‘কাম্পি ফ্লেগ্রেই' যে একটি আগ্নেয়গিরি এলাকা, এখানকার ‘সলফাতারা' বা গন্ধক মাটি তার প্রমাণ৷ কিন্তু মাটির নীচে কি কোনো বড় বিস্ফোরণ দানা বাঁধছে?

https://p.dw.com/p/2lsai
Vulkan Pisciarelli Italien
ছবি: Getty Images/AFP/C.Minopoli

ইটালির নেপলস শহরের কাছে অবস্থিত ‘সলফাতারা' বস্তুত একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মুখ, যা ফ্লেগ্রেই আগ্নেয়গিরি এলাকার অংশ৷ এখানে মাটির নীচে যে সুবিশাল আগ্নেয়গিরিটি আছে, তার গভীর থেকে গন্ধকবাহী বাষ্প উপরে উঠে আসে – দেখা যায়, আবার গন্ধতে বোঝাও যায়৷ বিজ্ঞানীরা এবার জানতে চান, ‘সুপার ভলক্যানো'-টির ভিতরে কী ঘটছে৷

আগ্নেয়গিরি এলাকায় যে ভূকম্পন আরো ঘন ঘন ঘটছে, বিজ্ঞানীরা সেদিকে খেয়াল রাখেন; এছাড়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আগ্নেয়গিরির সুবিশাল গহ্বরটির উপরিভাগে কী ঘটছে, সেদিকেও নজর রাখেন: গত দশ বছরে এখানকার জমি অন্তত আরো আধ মিটার উঁচু হয়ে গেছে৷

বিপদ সংকেত

জোভানি কিওদিনি-র মতো আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞরা এই বিপদ সংকেত লক্ষ্য করেছেন ও তার তাৎপর্য বোঝার চেষ্টা করছেন৷ জোভানি বলেন, ‘‘এটা যে একটানা ঘটেছে, এমন নয়, বরং যেন দ্রুততর হয়েছে – গত বছর তার আগের বছরের চেয়ে বেশি৷ কাজেই আমরা এই আগ্নেয়গিরিতে ভবিষ্যতে কী ঘটবে, তা নিয়ে একটু চিন্তিত৷''

আগামীতে এই আগ্নেয়গিরিতে কোনো বিস্ফোরণ ঘটবে কিনা, বিজ্ঞানীরা তা জানার চেষ্টা করছেন৷ সেজন্য তারা পাথরের ফাটল থেকে যে বাষ্প বেরোচ্ছে, তা বিশ্লেষণ করে দেখছেন৷ এই ফাটলগুলিকে বলে ‘ফিউমারোল'৷ লক্ষণীয় বিষয় হলো, গত ১৫ বছরে ফিউমারোলগুলি থেকে নির্গত কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে চারগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

জোভানি বলেন, ‘‘ফিউমারোলগুলি থেকে নির্গত বাষ্পে যে কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বেড়েছে, তা নিয়ে আমরা চিন্তিত, কেননা এর সাথে তাপমাত্রার যোগ আছে৷ আগ্নেয়গিরির অভ্যন্তরে তাপমাত্রা যতো বাড়বে, মনোক্সাইড নির্গমনও ততো বাড়বে৷ কাজেই মনোক্সাইড নির্গমন বৃদ্ধিকে আমরা আগ্নেয়গিরির তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রমাণ বলে গণ্য করছি৷''

কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধিই শুধু একমাত্র লক্ষণ নয়: ফিউমারোল থেকে নির্গত বাষ্পের পরিমাণ ও তাপমাত্রাও ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ জোভানি কিওদিনির কাছে এই সব পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে ম্যাগমা – ভূত্বকের নীচে সেই তরল বা আধা-তরল পদার্থ, যা পরে লাভা হিসেবে বেরিয়ে আসে৷

জোভানি বলেন, ‘‘ম্যাগমার গ্যাস থেকে এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে আমাদের ধারণা৷ মাঝে মাঝে ম্যাগমা বিপুল পরিমাণ তরল পদার্থ ছাড়ে; সেই তরল পদার্থ ‘কালডেরা' বা ম্যাগমা কক্ষের উপরিভাগে পৌঁছলে, ফিউমারোল দিয়ে তা বেরিয়ে আসে৷''

হাইড্রোথার্মাল' প্রণালী

‘হাইড্রোথার্মাল' প্রণালী বলতে বোঝায় পাথর ও পানির একটি স্তর৷ ফ্লেগ্রেই এলাকার উপরিভাগ এই স্তর দিয়ে তৈরি৷ ম্যাগমা ওপরে উঠতে শুরু করলে চাপ কমে যায়: ম্যাগমার গ্যাসগুলো বেরিয়ে এসে উপরের স্তরে জমা হয়৷ আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ ঘটবে কিনা, তা ম্যাগমায় মিশে থাকা এই গ্যাসগুলোর উপরেও নির্ভর করে৷

জোভানি বলেন, ‘‘গ্যাস নির্গমনের প্রক্রিয়াটা সহজেই বোঝা যায়: আমরা যখন সোডার বোতল খুলি তখন চাপ কমে গিয়ে অনেকটা গ্যাস বেরিয়ে আসে৷ আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে সোডাওয়াটারের বদলে থাকে ম্যাগমা, যা থেকে গ্যাস বেরিয়ে আসে৷''

জোভানি কিওদিনি কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে হিসেব করার চেষ্টা করছেন, ম্যাগমা থেকে নির্গত গ্যাস ওপরের হাইড্রোথার্মাল স্তরের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে৷ কিওদিনির মডেলে ‘ফ্লেগ্রেই প্রান্তর'-এর নীচে যে পরিমাণ ম্যাগমা ওপরে উঠে আসছে, তা একটি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে ও থেকে থেকে বিপুল পরিণাম জলজ বাষ্প ওপরে পাথরের স্তরে পাঠিয়ে দিচ্ছে৷ পাথরের স্তরের তাপমাত্রা ক্রমেই বাড়ছে ও তা আরো ঝুঁঝরো ও স্থিতিহীন হয়ে পড়ছে৷ কম্পিউটার সিমুলেশনে শেষ অবধি পাথরের স্তর আর চাপ সামলাতে পারবে না – ফলে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঘটবে৷

বিজ্ঞানীরা অন্যান্য আগ্নেয়গিরির সঙ্গে তুলনা করেছেন: অনুরূপ আগ্নেয়গিরির ক্ষেত্রে জমি উঁচু হতে শুরু করা থেকে ম্যাগমার গ্যাস নির্গত হওয়া পর্যন্ত – অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ অবধি, ১৫ বছর সময় লেগে যায়৷

জোভানি বলেন, ‘‘এখানে এটা একটা বিপর্যয় ঘটাতে পারে, কেননা অতীতের বৃহত্তম আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণগুলির মধ্যে একাধিক ইউরোপ অথবা এই ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ঘটেছে৷ কাজেই আমাদের মতো বহু মানুষ, যারা আগ্নেয়গিরি নিয়ে কাজ করছেন, তাদের প্রচেষ্টা হল, আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের লক্ষণ কীভাবে আরো ভালোভাবে বোঝা যায়৷''

কেউ বলতে পারবে না, ‘ফ্লেগ্রেই প্রান্তর'-এ পরবর্তী বিস্ফোরণ কবে ঘটবে৷ তবে বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই অশনি সংকেত দেখছেন৷

ইয়াকব ক্নেসার/এসি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান