সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের অভিযান
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শ্বাসমূলীয় বন সুন্দরবনে প্রাচীনকাল থেকে একদল মানুষ মধু সংগ্র করে জীবীকা নির্বাহ করেন৷ রোমাঞ্চকর সে মধু সংগ্রহ দেখুন ছবিঘরে৷
সুন্দরবন
প্রায় দশ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবনের জলে কুমির ডাঙায় বাঘ৷ বাংলাদেশ আর ভারত মিলে বিস্তৃত এ বনের বড় অংশটাই বাংলাদেশের বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলা জুড়ে৷
গাছে গাছে ফুল
সুন্দরী, খলিশা, বাইন, পশুর, গেওয়া, কেওড়া, হেতাল, কাঁকড়া, গর্জন, ধুন্দলসহ নানান গাছপালায় ভরপুর সুন্দরবন৷ বসন্তের শেষে এ সব গাছ ফুলে ফুলে ভরে যায়৷ মৌমাছিরা তখন ফুল থেকে মধু নিয়ে চাকে জমায়৷
মধু ভরা চাক
সাধারণত এপ্রিলের শুরু থেকে সুন্দরবনের গাছে গাছে মৌচাক পরিপূর্ণ হতে থাকে৷
মৌয়াল
প্রাকৃতিক এ মধু উৎসকে পুঁজি করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী এলাকার বনের ধারে যুগ যুগ ধরে বসতি গড়েছে একদল পেশাজীবী৷ মূলত মধু সংগ্রহই এদের পেশা, ‘মৌয়াল’ নামেই তাই পরিচিত এরা৷
মধুর মৌসুম
সুন্দরবনের মধু সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে৷ চলে জুন মাস পর্যন্ত৷
নানা আয়োজন
মধু সংগ্রহ মৌসুমের শুরুতে বুড়িগোয়ালিনী বনদফতরে থাকে নানান আয়োজন৷ মৌয়ালদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নানান বেসরকারি সংস্থা৷
অনুমতি
সুন্দরবনের ভেতরে মধু সংগ্রহ করতে রাজস্ব দিয়ে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয় মৌয়ালদের৷ মৌয়ালদের বনের ভিতরে ঢুকে মধু সংগ্রহের এ সুযোগ মেলে তিন মাস৷ একবারে কেবল ত্রিশ দিনের জন্য অনুমতি পান মৌয়ালরা৷
প্রার্থনা
যাত্রার শুরুতে মৌয়াল দল নৌকায় প্রার্থনা করেন৷ মধু সংগ্রহ শেষে নিরাপদে ফিরে আসার প্রার্থনা জানান প্রভুর কাছে৷ প্রতি বছরই অনেক মৌয়াল নিরাপদে ফিরে আসতে পারেন না৷ বছররে গড়ে ৮ থেকে ১০জন মৌয়াল বাঘের আক্রমণের শিকার হন৷
সুন্দরবনে যাত্রা
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মৌয়ালরা নৌকা নিয়ে ছোটেন সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে৷ প্রথা অনুযায়ী মৌয়ালরা বেজোড় সংখ্যায় জঙ্গলে প্রবেশ করেন৷ সাধারণত পাঁচ থেকে তেরোজন মৌয়াল থাকেন একেকটি দলে৷
বহরদার
সাধারণত মৌমাছির গতিবিধি দেখে জঙ্গলে ঢোকেন মৌয়ালরা৷ মৌমাছির গতিপথ দেখে চাক খুঁজে পান তাঁরা৷ তবে চাক ভাঙার সিদ্ধান্তটি নেন দলনেতা, মৌয়ালরা যাঁকে বলেন বহরদার৷
কারুতে আগুন
চাক খুঁজে পেলে বনের পাতা দিয়ে তৈরি করা হয় কারু৷ এই কারুতে আগুন জ্বালিয়ে ধোঁয়া তৈরি করা হয় চাক থেকে মৌমাছি তাড়ানোর জন্য৷
চাকে ধোঁয়া
বহরদারের অনুমতি মিললে জ্বালানো কারু নিয়ে গাছে চড়েন একজন৷ চাকে ধোয়া দিয়ে পোকা তাড়িয়ে দেন৷
চাক কাটা
পোকা সরে গেলে শুরু হয় চাক কাটা৷ নীচে বেতের তৈরি ধামা পেতে মধু ভর্তি কাটা চাক ধরেন অরেকজন৷ চাক কাটা শেষে মধু নিয়ে নৌকায় ফেরেন মৌয়ালরা৷
পর্যটক
মৌয়ালদের এ মধু সংগ্রহ দেখতে প্রতি বছর দেশি-বিদেশি প্রচুর পর্যটক সুন্দরবনে যান৷
মধু সমাচার
সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মানের মধু খলিসা ফুলের ‘পদ্ম মধু’৷ মানের দিক থেকে এরপরেই গরান ও গর্জন ফুলের ‘বালিহার মধু’৷ মৌসুমের একেবারে শেষে আসা কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু অপেক্ষাকৃত কম সুস্বাদু৷