সুইডেনে কোভিড স্বাধীনতা কি মৃত্যু ঘটাচ্ছে?
২২ এপ্রিল ২০২১সুইডেনের শীর্ষস্থানীয় এপিডেমিওলজিস্ট আন্দেয়ার্স ট্যাগনেল দেশটিতে করোনার বিস্তার ঠেকাতে করণীয় ঠিক করেন৷ তিনি বিশ্বাস করেন না যে, করোনার বিস্তার ঠেকাতে মাস্ক অনেক বেশি কার্যকর৷ সে কারণে সুইডেনে কখনও মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক ছিল না৷ অবশ্য সম্প্রতি সংক্রমণ বাড়া শুরু করলে গত জানুয়ারি থেকে গণপরিবহনে মাস্ক পরার পরামর্শ দেয়া হয়েছে, বিশেষ করে যখন বেশি ভিড় থাকে৷ তবে মাস্ক না পরার জন্য কোনো জরিমানার বিধান করা হয়নি৷
ডয়চে ভেলেকে ট্যাগনেল বলেন, ‘‘ফ্রান্স, ইটালি এমনকি জার্মানির মতো দেশে মাস্ক পরা নিয়ে কড়া নিয়ম আছে৷ কিন্তু তারপরও সেসব দেশে সংক্রমণ বাড়ছে৷''
সুইডেনে শুধুমাত্র গণজমায়েতে কতজন থাকতে পারবে তা ঠিক করে দেয়া হয়েছে এবং রাত আটটার পর রেস্টুরেন্ট ও বার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে৷ এর বাইরে নাগরিকদের কিছু নিয়ম মেনে চলতে ‘পরামর্শ' দেয়া হয়েছে৷ অথচ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে এবং সেগুলো না মানার জন্য বড় জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে৷
ট্যাগনেলের সিদ্ধান্তের কারণে নাগরিকরা স্বাধীনভাবে চলতে পারায় গতবছর সংক্রমণের শুরুতে তিনি সুইডেনে তারকায় পরিণত হয়েছিলেন৷ স্টকহোমের এক ব্যবসায়ী গুস্তাভ লয়েড আগাব্লাড তার হাতে ট্যাগনেলের ট্যাটু এঁকে আলোচনায় এসেছিলেন৷ এখন সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ায় ট্যাগনেলের জনপ্রিয়তা একটু কমেছে বলে স্বীকার করেন আগাব্লাড৷ তারপরও তিনি মনে করেন, ‘‘ট্যাগনেল বিশ্বকে সংকট মোকাবিলার এক ভিন্ন পথ দেখিয়েছেন, যে কারণে মানুষ সংকট সত্ত্বেও অনেক স্বাধীনতা উপভোগ করতে পারে৷''
আগাব্লাডের মতো সুইডেনের বেশিরভাগ মানুষই সরকারের করোনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিয়ে খুশি বলে মনে করছেন স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিয়ান ক্রিস্টেনসেন৷ তিনি সরকারের করোনা ব্যবস্থাপনা কতটা প্রভাব রাখছে তা নিয়ে গবেষণা করেন৷
তবে সাম্প্রতিক সময়ে সুইডেনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন দেশটির রাজা৷
বুধবার পর্যন্ত সুইডেনে করোনায় মারা গেছেন ১৩ হাজার ৮২৫ জন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন/ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলভুক্ত ৩০টি দেশে মৃত্যুর সংখ্যার হিসেবে সুইডেনের অবস্থান ১৩ নম্বরে৷ অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ছে এবং এই হিসেবে ইউরোপের তালিকায় উপরের দিকেই আছে সুইডেন৷
ফলে ট্যাগনেলের করোনা নীতি নিয়ে সম্প্রতি কিছুটা আলোচনা শুরু হয়েছে৷ মৃত্যুর হারটা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হওয়ার জন্য ট্যাগনেলকে দায়ী করছেন নাগরিকদের একটি অংশ৷ এসব আলোচনায় করোনা মোকাবিলায় সুইডেনের অন্যরকম পথ বেছে নেয়ার বিষয়টি ঘুরেফিরে আসছে৷ তবে সুইডেন অন্যরকম পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করেননা ট্যাগনেল৷ তার দাবি, অন্য দেশ যা করছে সুইডেনও তাই করছে, কিন্তু ‘একটু অন্যভাবে'৷ তিনি বলেন, ‘‘যেখানে সংক্রমণ বেশি শুধুমাত্র সেই জায়গায় জনজীবন স্তব্ধ রাখতে হবে, যেন পুরো সমাজ স্তব্ধ করে দিতে না হয়৷''
ট্যাগনেল বলেন, কড়া নিয়ম না থাকলেও ‘‘মানুষ তাদের আচরণে, চলাফেরায় অনেক পরিবর্তন এনেছেন৷ এবং এটা তারা স্বেচ্ছায় করেছেন, কারণ তারা জানেন এটা করা ঠিক৷'' তিনি বলেন, প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ এখন বাসা থেকে অফিস করছেন৷ আগের চেয়ে তারা কম ভ্রমণ করছেন, সম্ভব হলে গণপরিবহন এড়িয়ে চলছেন৷
টেরি সুলৎস/জেডএইচ