1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিসি ক্যামেরা দিয়েও বিমানবন্দর ‘আন্তর্জাতিক মানের’ হচ্ছে না

এম আবুল কালাম আজাদ
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের লাগেজ কাটা এবং মূল্যবান জিনিস খোয়া যাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়৷ তবে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসা মেয়েদের লাগেজ থেকে টাকা উধাওয়ের ঘটনা আবার লজ্জায় ফেলেছে৷

https://p.dw.com/p/4HGP5
ঢাকা বিমানবন্দর
ছবি: bdnews24.com

অতীতে অনেক বেশি সংখ্যায় হলেও ইদানীং তা কমে এসেছে৷ অনেক লেখালেখি ও সমালোচনার প্রেক্ষিতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে অবস্থার উন্নতি হলেও এ ধরনের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না৷

সাফ নারী ফুটবল জয়ী দুজন খেলোয়াড়ের ডলার ও আরো কিছু জিনিসপত্র হারানোর ঘটনার পর বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার আবার সামনে এসে পড়ে৷ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা৷ গণমাধ্যমেও ফলাও করে খবর প্রকাশিত হচ্ছে৷

খেলোয়াড়ের টাকা চুরি ও লাগেজ ভাঙার কোনো ঘটনা বিমানবন্দরে ঘটেনি বলে দাবি করছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ৷ তারা দাবি করছেন, লাগেজ ভাঙা বা চুরির কোনো প্রমাণ তারা পাননি এবং অক্ষতভাবে খেলোয়াড়দের লাগেজ বাফুফে কর্মকর্তার নিকট হস্তান্তর করা হয়৷ তবে এমন দাবি করে সকল দায় এড়ানো যাবে না৷

ঢাকা বিমানবন্দরের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায়শই যাত্রীরা অভিযোগ করেন যে, তারা লাগেজ অক্ষত অবস্থায় পাননি, অথবা লাগেজ থেকে তাদের মূল্যবান জিনিস চুরি হয়ে গেছে৷ এ নিয়ে ফেসবুকেও আলোচনা দেখা যায়৷ আবার গণশুনানিতেও এমন অভিযোগ পাওয়া যায়৷ গত মাসে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের সেবার মান নিয়ে এক গণশুনানির আয়োজন করে৷ সেখানে দুজন যাত্রী অভিযোগ করেন, বিমানবন্দরে কিভাবে তাদের হয়রানির করা হয় এবং অনেকের মূল্যবান জিনিস লাগেজ থেকে খোয়া যায়৷ আর এমন ঘটনা বেশি ঘটে প্রবাসী কর্মীদের সাথে৷

কিন্তু কিভাবে এমন ঘটনা এখনো ঘটছে?

সিসি ক্যামেরা বসানো ছাড়াও তদারকি বৃদ্ধি করা হয়েছে বিমানবন্দরে৷ কিন্তু এরই মধ্যে চুরির ঘটনা ঘটে৷ খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাগেজ থেকে অর্থ, মালামাল চুরির সাথে জড়িত অল্প কিছু মানুষ৷ এদের মধ্যে আছে যারা লাগেজ বহন করে বিমানে তোলেন অথবা বিমান থেকে লাগেজ নামিয়ে বিমানবন্দরে আনেন, তারা৷ এরা একটা সিন্ডিকেট হয়ে কাজ করেন৷ কাজটি তারা খুবই সতর্কতার সাথে করেন৷ জানা জায়, তারা নির্দিষ্ট যাত্রীর লাগেজ টার্গেট করেন৷ অনেক ক্ষেত্রে লাগেজ দেখলেও তারা ধারণা করতে পারেন ভিতরে কী ধরনের জিনিস থাকতে পারে৷

দুটি স্থানে লাগেজ থেকে টাকা ও মালামাল চুরি হতে পারে বলে সন্দেহ করা হয়৷ একটি হচ্ছে চেক-ইন করার পর লাগেজ বেল্ট দিয়ে ভিতরে চলে যাওয়ার পর৷ আরেকটি হলো লাগেজ বিমানের কার্গোতে যখন তোলা বা নামানো হয়৷ এরা যেহেতু সিন্ডিকেট হিসেবে কাজ করেন, তাই চুরির ব্যাপারটি কেউ জানতে পারে না৷ জানাজানি হলেও চুরি যাওয়া মালামাল আর ফেতর পাওয়া যায় না৷

এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলে
এম আবুল কালাম আজাদ, ডয়চে ভেলেছবি: Private

বিমানবন্দরে লাগেজ আনা-নেয়ার কাজে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়, তাদের অনেকেই ৩-৪ লক্ষ টাকা ঘুস দিয়ে চাকরিতে যোগদান করেন৷ ফলে এদের অনেকের মধ্যে লাগেজ থেকে মূল্যবান জিনিস চুরির প্রবণতা থাকে, তবে এদের সংখ্যা অনেক কম বলে জানা যায়৷

সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে তদারকি ও অন্যান্য পদক্ষেপের ফলে আগের চেয়ে অবস্থার অনেক উন্নতি ঘতেছে৷ তবে কিছু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে, যার ফলে এমন ঘটনা ঘটছে, কেননা, এখনো শর্ষের মধ্যে ভূত রয়ে গেছে৷ আর এসব কারণেই গ্রাউন্ড হান্ডেলিং কাজ বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে দেয়ার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে৷

শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও গ্রাউন্ড হান্ডেলিং আগের চেয়ে অনেক ভালো৷ তবে এখনো সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ চেক-ইন ও ইমিগ্রেশনে এখনো অনেক সময় লাগে৷ আবার লাগেজ পেতেও অনেক সময় লেগে যায়৷ যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করার বিষয়টিও ঘটে থাকে৷

কর্তৃপক্ষের উচিত এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া৷ বিবৃতি বা ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করে নিজেদের সকল দায় এড়ানোর প্রবণতা থেকে বের হয়ে সকল অভিযোগসমূহ গুরুত্বের
 সাথে বিবেচনা করতে হবে৷ লাগেজ কাটা বা লাগেজ থেকে জিনিস চুরির সাথে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি না দিলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে৷ আর সার্বিক সেবার মান আরো উন্নত করতে না পারলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিবেচনায় ঢাকা বিমানবন্দর পিছিয়ে থাকবে৷