সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম৷ বিশ্ববিদ্যালয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে এই ছবিঘরে৷
প্রিয় শাহজাদপুর
‘‘ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে আমার নামটি লিখো তোমার মনের মন্দিরে’’, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত এই গানের সখী কোনো মানবী নয়, এই সখী নাকি তাঁর ভালোবাসার স্থান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর৷ জমিদারি দেখাশোনা করতে ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ প্রথম শাহজাদপুরে যান৷ এরপর ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত মাঝেমধ্যেই সেখানে গেছেন৷ তাঁর অনেক কবিতা ও গান সেখানে লেখা৷
কাছারিবাড়ি
শাহজাদপুরে কবিগুরু এই বাড়িতেই থাকতেন৷ এটি এখন জাদুঘর৷
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা
মঙ্গলবার থেকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠদান শুরু হয়েছে৷ এটি বাংলাদেশের ৩৫তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়৷ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ এরপর ২০১৫ সালের ৮ মে রবীন্দ্রনাথের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়৷
আন্দোলন
শাহজাদপুরে কবিগুরুর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)৷ এই দলের সিরাজগঞ্জ জেলা আহবায়ক নব কুমার কর্মকার (ছবি) বলেন, ‘‘১৯৯০ সালের ২৪ বৈশাখ বাসদ নেতা কমরেড খালেকুজ্জামান রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছিলেন৷’’ এরপর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকাবাসীকে আন্দোলনে যুক্ত করা হয় বলে জানান তিনি৷
দায়মুক্তি
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম (ডানে) বলেন, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আমাদের কিছুটা হলেও দায়মুক্তি ঘটলো৷ তিনি বলেন, ১৮৯০ সালে শাহজাদপুরে এসে রবীন্দ্রনাথ এখানকার প্রকৃতি ও মানুষের প্রেমে পড়েছিলেন৷ বিশ্বকবির স্মৃতিকে অম্লান করে রাখতে তাঁর নামে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠা ছিল সময়ের দাবি৷
সীমাবদ্ধতা মেনেই যাত্রা শুরু
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে তিনটি বিভাগ নিয়ে৷ রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগ এবং অর্থনীতি বিভাগ৷ প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় প্রধানসহ তিনজন করে মোট নয় জন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পরীক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয় এবং ২৪ ও ২৫ মার্চ শাহজাদপুরে মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন হয়৷ প্রতিটি বিভাগে ৩৮ জন করে মোট ১১৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে৷
যেতে হবে বহুদূর
মঙ্গলবার সকালে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্পাসে পাঠদান কার্যক্রম উদ্বোধন করেন উপাচার্য ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ৷ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথা জানান তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় যেন পণ্যায়নের বিশ্ববিদ্যালয় না হয় আমরা সে চেষ্টা করবো৷ আমরা ভালো মানুষ তৈরির চেষ্টা করবো৷’’
অস্থায়ী ক্যাম্পাস
অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত রবীন্দ্র অধ্যায়ন বিভাগ এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ স্টাডিস বিভাগের ক্লাস নেয়া হচ্ছে শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের নবনির্মিত চার তলা ভবনে (ছবি)৷ আর অর্থনীতি বিভাগের ক্লাস নেওয়া হচ্ছে পাশের মাওলানা সাইফুদ্দিন এহিয়া ডিগ্রি কলেজে৷
উৎসবমুখর পরিবেশ
প্রথম দিনে শিক্ষার্থীরা ছিলেন উৎসবের আমেজে৷ পাবনা থেকে আসা ছাত্রী মহুয়া আক্তার জলি বলেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের বিশ্বকবি৷ আমি উদ্বোধনী ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পেরে ব্যক্তিগতভাবে খুবই গর্বিত ও আনন্দিত৷ আমি এখানে পড়াশোনা করে একজন ভালো মানুষ ও সুনাগরিক হতে চাই৷’’
রবীন্দ্রনাথকে জানা
রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের প্রধান ড. ফখরুল ইসলাম জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়েই প্রথম রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগ চালু হলো৷ ‘‘এর আগে বিশ্বের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিভাগটি ছিল না৷ রবীন্দ্রনাথের প্রথম পাঠ আমাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করবে৷ রবীন্দ্রনাথের দর্শন শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে ছড়িয়ে দিতে পারি, আমরা সে চেষ্টাই করবো,’’ বলেন তিনি৷
রবীন্দ্র চেতনার প্রসার
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘‘ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতির দিক থেকে আমরা খুবই সমৃদ্ধশালী৷ রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি সংস্কৃতিরও প্রবাদ পুরুষ৷ তাঁর নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগটিও হবে অনেক সমৃদ্ধ৷ আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা ছড়িয়ে দেবো৷’’