সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা নিচ্ছে না পুলিশ
১৬ ডিসেম্বর ২০২১ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ ডটকম জানায়, গত ২ ডিসেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে একটি ব্যক্তিগত গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত সদস্য মনোরঞ্জন হাজং৷ দুইবার অস্ত্রোপচার করে তার ডান পা হাঁটুর নিচ থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে৷ গুরুতর অবস্থায় তিনি এখন বারডেম হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন৷
মনোরঞ্জনের একমাত্র মেয়ে মহুয়া হাজং ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্জেন্ট পদে কর্মরত৷ তার বাবা মনোরঞ্জন হাজংকে ধাক্কা দেওয়া লাল রঙের বিএমডাব্লিউ গাড়িটির চালকের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলাটি নেয়নি বলে অভিযোগ করেন মহুয়া৷
বিডিনিউজের পক্ষ থেকে বুধবার বনানী থানার ওসি নূরে আজম মিয়াকে ফোন করা হলে কুশল বিনিময়ের পর মহুয়া হাজংয়ের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি নূরে আজম মিয়া লাইনটি কেটে দেন৷
মহুয়া বিডিনিউজকে বলেন, "থানার একজন পরিদর্শক আমাকে বলেন, ‘তোমার চাকরির বয়স তো অল্পদিন৷ এ সমস্ত বিষয় নিয়ে বেশি মাতামাতি করো না, বিপদে পড়ে যাবা৷ আমি তো তোমার চেয়ে সিনিয়র, আমার কথা শোনো৷'
মহুয়া জানান, এজাহারে তিনি সেই গাড়িচালক এবং তার ‘প্রভাবশালী' বাবার নামও লিখেছিলেন কিন্তু থানা মামলা নেয়নি৷ যারা দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের পক্ষ থেকে আপোশের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান৷
মহুয়ার মামলা না নেওয়ার বিষয়ে বনানী থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কথা বলতে না চাওয়ায় বুধবার দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত উপ কমিশনার হাফিজ আল আসাদের কাছে বিষয়টি জানতে চায় বিডিনিউজ৷
অতিরিক্ত উপ কমিশনার কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলে প্রায় এক ঘণ্টা পর জানান, ‘দুই-তিন দিন পর' তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করবেন৷ পুলিশের ওইঅফিসের প্রধান কর্মকর্তা উপ কমিশনার ফারুক আহমেদ সে সময় কক্ষে ছিলেন না৷
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্য মনোরঞ্জন হাজং গুলশানের একটি রেস্তোঁরায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন৷
দুর্ঘটনার খবরটি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচার করা হয়েছে৷ খবরের ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ২ ডিসেম্বর রাত ২টার পর বিমানবন্দর সড়কে মোড় ঘোরার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মনোরঞ্জন হাজং৷ একটি গাড়ি এসে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে পড়েন৷ মনোরঞ্জন হাজংকে উদ্ধার করে রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতালে) ভর্তি করে পুলিশ৷
গত ৩ ডিসেম্বর অস্ত্রোপচার করে মনোরঞ্জনের ডান পায়ের গোড়ালি কেটে ফেলা হয়৷ পরে সংক্রমণ ছড়ায় ৮ ডিসেম্বর আবারও অস্ত্রপচার করে হাঁটুর নিচ থেকে ডান পা কেটে ফেলতে হয়৷
ষাটোর্ধ্ব মনোরঞ্জনের হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস থাকায় পরে তাকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
গত ১৪ ডিসেম্বর যমুনা টিভিতে প্রচারিত এক ভিডিও ফুটেজে, দুর্ঘটনার পর একটি লাল রঙের বিএমডাব্লিউ গাড়ি জনতা আটক করে পুলিশে দেয়৷ সেখানে গাড়ির চালকের ছবিও দেখানো হয়৷
পুলিশ সার্জেন্ট মহুয়ার মামলা না নেওয়ার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান যমুনা টেলিভিশনকে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বিষয়টা আমাদের সদস্যের৷ আমাদের একটা সিনিয়র কমান্ড আছে, অথরিটি আছে, সবই আছে৷ আমার তো মনে হয় যে এটা গণমাধ্যমে যাওয়ার কোনো দরকার ছিল না৷’’
‘‘আমাদের সহকর্মী মহুয়ার মামলা না করতে পারার তো কোনো কারণ নেই৷ এটা তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের পরেই আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব৷ ’’ বলেন পুলিশের উপ কমিশনার আসাদুজ্জামান৷
এনএস/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)