সামাজিক মাধ্যমের কারণে বিখ্যাত হওয়া ট্রেন
মাত্র বছর কয়েক আগেও তুরস্কের ‘ইস্টার্ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের তেমন পরিচিতি ছিল না৷ আর আজ সেটিতে ভ্রমণের জন্য টিকিট পাওয়া যায় না৷
২৪ ঘণ্টার যাত্রা
তুরস্কের রাজধানী আংকারা থেকে প্রতিদিন যাত্রা শুরু করে ট্রেনটি সাড়ে ২৪ ঘণ্টা পর আর্মেনিয়া সীমান্তের কাছে অবস্থিত তুর্কি শহর কার্স-এ পৌঁছে৷ পথের দূরত্ব ১,৩৬৫ কিলোমিটার৷
জনপ্রিয় ছিল না
আংকারা থেকে কার্স-এ বিমানে যেতে এক ঘণ্টার কিছু বেশি সময় লাগে৷ তাই ট্রেনে করে অনেক সময় খরচ করে এই পথ যাওয়ার বিষয়টিকে আগে পাগলামি মনে করা হত৷ যদিও টিকিটের দাম খুবই কম, মাত্র ১১ ডলার৷
এখন টিকিট পাওয়া দায়!
পরিস্থিতির পরিবর্তন হওয়া শুরু করে বছর কয়েক আগে৷ সেই সময় একদল তরুণ তুর্কি সময়ের চিন্তা না করে স্লিপিং কোচের টিকিট কেটে ঐ ট্রেনে ভ্রমণ করা শুরু করেছিল৷ সেই সঙ্গে তাঁরা যাত্রাপথের বিভিন্ন ছবি, অভিজ্ঞতা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেছিল৷ আর এতেই ট্রেনটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে৷
৪০ শতাংশ বেশি!
হিসেব বলছে, গতবছর প্রায় তিন লক্ষ যাত্রী এই ট্রেনে চড়েছেন৷ আগের বছরের তুলনায় সেটি প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি৷ এখন যেদিন টিকিট বিক্রি শুরু হয় সেদিনই তা ফুরিয়ে যায়৷ যদিও পাঁচ বগির জায়গায় এখন ট্রেনে বগির সংখ্যা ১১৷
‘দারুণ অভিজ্ঞতা’
৩৭ বছরের মেডিকেল টেকনিশিয়ান বুরচু ইলমাজ জানান, সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার হওয়া ছবি দেখে তিনি এই ট্রেন ভ্রমণে আগ্রহী হন৷ তবে টিকিট পেতে তাঁকে খুব বেগ পেতে হয়েছিল৷ ‘‘দারুণ নস্টালজিক অভিজ্ঞতা৷ নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া, চলতি পথে কামরায় বসে পার্টি করা – এ সব আর অন্য কোনো ধরণের যাত্রায় সম্ভব নয়,’’ বলেন তিনি৷
সামাজিক মাধ্যম ছবি দেয়ার রীতি
যেহেতু সামাজিক মাধ্যম দিয়েই এই ট্রেনের ব্যাপক পরিচিতি, তাই পর্যটকদের জন্য সামাজিক মাধ্যমে এই ট্রেন যাত্রার ছবি, ভিডিও পোস্ট করার বিষয়টি অলিখিত এক রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ ফলে ট্রেনের কামরায় রুটের দিকে আঙুল নির্দেশ করে তোলা ছবি, মোমবাতি, বেলুন দিয়ে সাজানো কামরা, পার্টি করা, ছোট স্টেশনে নেমে নাচের ভিডিও – এমন সব কন্টেন্টের দেখা পাওয়া যাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷
প্রাকৃতিক দৃশ্য
‘ইস্টার্ন এক্সপ্রেস’-এর দীর্ঘ যাত্রাপথে কৃষিজমি ছাড়াও দেখতে পাওয়া যাবে পাহাড়, বন আর নদী৷ আর পাড়ি দিতে হবে পাহাড় কেটে তৈরি করা দীর্ঘ সুড়ঙ্গ৷
বিয়ের প্রস্তাব
ছবিতে এমেরি আর মাইন নূরকে দেখতে পাচ্ছেন৷ বছর দুই প্রেম করার পর এই ট্রেনের কামরা যাত্রা সময় এমেরি বান্ধবী নূরকে বিয়ের প্রস্তাব দেন৷ ‘‘আমরা ঘুরতে পছন্দ করি৷ ফলে ট্রেনযাত্রার বিষয়টি আমাদের সঙ্গে দারুণ মিলে যাচ্ছে৷ সারা জীবনের যাত্রার এটি একটি ছোট ডেমো,’’ বলেন এমেরি৷
আছে মানসিক কষ্টের গল্পও
এমেরি আর নূরের গল্প শুনে মনটা ভাল হলেও সিনানের গল্প আপনাকে একটু কষ্ট দিতে পারে৷ অনেকদিন ধরে বান্ধবীর সঙ্গে এই ট্রেনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করছিলেন সিনান৷ কিন্তু বান্ধবীর পরিবার তাকে যাত্রার অনুমতি না দেয়ায় সিনানকে একাই ভ্রমণ করতে হচ্ছে৷ তবে কোনো কিছু অসমাপ্ত রাখা তাঁর পছন্দ নয়৷ তাই তো মোমবাতি আর রংধনুর মতো আলো জ্বালিয়েছেন তিনি৷