সাবেক ক’জন সেনা কর্মকর্তা বৈঠক করে কী করবে?
২৮ অক্টোবর ২০১৭গত বুধবার প্রকাশিত টেলিগ্রাফ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘ঢাকার মহাখালীতে অবসরপ্রাপ্ত একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেলের বাসায় গত ২১ অক্টোবর বৈঠকে বসেন ২০ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তা৷ সাবেক একজন সেনাপ্রধানের উপস্থিতিতে ওই বৈঠকে ‘স্পর্শকাতর বিষয়ে' আলোচনা হয়৷ কিন্তু বৈঠকের বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে ‘তাদের পরিকল্পনা অঙ্কুরেই নষ্ট' করে দেওয়া হয়৷''
বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্যা ডেইলি স্টারের ডিফেন্স এন্ড স্ট্রাটেজিক এডিটর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরনের খবর নতুন নয়৷ ক'দিন আগেও এই ধরনের একটি খবর ভারতীয় একজন সাংবাদিক করেছিলেন৷ তখনও বলা হয়েছিল সেই খবর সত্য নয়৷ আর এখন দু'দেশের পররাষ্ট্র দফতর ও আইএসপিআর যখন বলল এটা সত্য নয়, তাহলে এ নিয়ে বেশি আলোচনা করার কিছু নেই৷''
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সেনাবাহিনীকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম পরপর দু'টি খবর ছাপা হল আর আমাদের দেশের মিডিয়া কিছুই জানল না, সেটা তো ঠিক না৷ কিছু হলে অবশ্যই আমাদের দেশের মিডিয়াও কিছু জানত৷ ফলে কি উদ্দেশ্যে তারা এই রিপোর্ট করল তা আমার বোধগম্য নয়৷ আমি নিজেও এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে পাইনি৷''
টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ‘ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)৷ সংস্থাটির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রাশিদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘খবরটি ভিত্তিহীন৷'' ঢাকার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘ওই বৈঠকে অংশগ্রহণকারী সেনা কর্মকর্তাদের ‘চিহ্নিত করে' তাদের ‘সরানোর প্রক্রিয়া' শুরু হয়েছে৷ কিন্তু একই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়, সেনা কর্মকর্তাদের গোপন বৈঠকের কোনো খবর তাদের কাছে নেই৷ ফলে প্রতিবেদনেই স্ববিরোধিতা আছে৷''
বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিভিন্ন মিডিয়া বিভিন্ন ধরনের খবর প্রকাশ করে, তা নিয়ে এত উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷ মিডিয়ার স্বাধীনতা থাকলে এই ধরনের খবর হতে পারে৷ আসলে ক'জন সাবেক সেনাকর্মকর্তা একসঙ্গে হল, বৈঠকও করল তাতে কি এসে যায়৷ সরকার কি এতই দুর্বল৷''
তিনি বলেন, ‘‘শুধু আমাদের দেশে নয়, সারা বিশ্বেই অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের নানা সংগঠন রয়েছে৷ তারা মাঝে মধ্যেই নানা বিষয়ে নিজেরা বসতে পারে৷ এই বসা মানেই সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ভাবা ঠিক না৷ আমি মনে করি, এই ধরনের রিপোর্টকে গুরুত্ব দেয়া উচিত না৷ এগুলো আমরা আলোচনা করলেই আলোচনা বাড়বে, এর দরকার নেই৷''
এদিকে, টেলিগ্রাফে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অনুমাননির্ভর বলে বর্ণনা করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ গত শুক্রবার দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক সাংবাদিক সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, আপনি যে প্রতিবেদনটি দেখেছেন- সেটি অনুমাননির্ভর এবং ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে আমরা এই বিষয়ে কোন বিশ্বাসযোগ্যতা দিতে পারছি না৷''
উল্লেখ্য, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের আগে এই ধরনের বৈঠকের খবর ভারতীয় মিডিয়ায় ছাপা হওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়৷