1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাবেক ইউরেনিয়ামের খনিতে বনায়নের উদ্যোগ

৩০ জানুয়ারি ২০২৩

বিশ্বের অনেক জায়গায় খনন বা অন্যান্য কার্যকলাপের কারণে মাটির ক্ষতি হয়৷ জার্মানির গবেষকরা প্রাকৃতিক কৌশল প্রয়োগ করে এমন জমিতে আবার গাছপালা বা আস্ত জঙ্গল গড়ে তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/4Mspq
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/blickwinkel/R. Bala

সাবেক ইউরেনিয়াম খনিতে পরিমাপের কাজ চলছে৷ ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাইক্রোবায়োলজিস্ট হিসেবে এরিকা কোটে কিছু স্বেচ্ছাসেবী মানুষের সঙ্গে মিলে সেখানে প্রায় ২০০ অ্যাল্ডার, বার্চ এবং উইলো গাছ পোঁতেন৷

মাটিতে হেভি মেটাল থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সেই কাজ করেন৷ গাছগুলি স্বাভাবিকভাবে বড় হলে কয়েক বছর পর সেগুলির কাঠ কেটে আগুন জ্বালানো যাবে বলে আশা করা হয়েছিল৷ তবে এমন মাটিতে সেটা আদৌ সম্ভব কিনা, সে বিষয়ে সংশয় ছিল৷ এরিকা কোটে জায়গাটিকে  ঠিক মাটি বলতেই প্রস্তুত নন৷ তার মতে, বেড়ে ওঠা জমি একেবারে অন্যরকম দেখতে৷

শাকসবজি বা ফল চাষের প্রশ্নই ওঠে না, যদিও ইউরেনিয়াম খনি বন্ধ হবার পর এই জমির সংস্কার করে সেখানে দূষণহীন মাটি ঢালা হয়েছে৷ ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক টর্স্টেন শেফারব বলেন, ‘‘যেমনটা দেখছেন, এই হ্রদকে ঘিরে উদ্ভিদ জগত শিকড় ছড়িয়েছে৷ অর্থাৎ গাছপালা এই অংশকে ভালোভাবে গ্রহণ করেছে৷ আরও নীচের দিকে দেখলে বালুময় উপাদান পাওয়া যাবে৷ সর্বশেষ তুষার যুগে এই স্তর গড়ে উঠেছিল৷ এখানে প্রায় কোনো শিকড়ের চিহ্ন পাওয়া যাবে না৷ এখানকার পিএইচ ভ্যালুও অত্যন্ত কম৷ মোটকথা গাছপালা এই এলাকা পছন্দ করে না৷''

পিএইচ ভ্যালু কম হবার অর্থ জমিতে অম্ল রয়েছে৷ যে সব ধাতু সাধারণ অবস্থায় শক্ত থাকে, সেগুলি এখানে গলে গিয়ে জমির মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে যায়৷ এভাবে সেগুলি গাছপালার মধ্যেও প্রবেশ করে৷ টর্স্টেন শেফার বলেন, ‘‘সে কারণে আমরা আমাদের পরীক্ষার আওতায় এমন মাটির মিশ্রণ সৃষ্টি করি, যার মধ্যে সামান্য চুনও থাকে৷ চুন পিএইচ বাফার হিসেবে কাজ করে, যাতে গাছপালা বেড়ে ওঠার পরিবেশ শুধু আদর্শ নয়, বরং আরও উন্নত হতে পারে৷''

অর্থাৎ জমি অম্লমুক্ত করা হচ্ছে৷ কিন্তু ইয়েনার গবেষকরা শুধু তাতেই সন্তুষ্ট নন৷ মাটি থেকে  ধাতু আলাদা করতে তাঁরা সেই ধাতুকে আবার শক্ত করতে চান৷ ছত্রাক নাকি সেই কাজ করতে পারে৷ ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজিস্ট এরিকা কোটে বলেন, ‘‘ছত্রাক প্রকৃতির মধ্যে এমনিতেই সিম্বায়োসিসের মাধ্যমে পানি ও ধাতব উপাদান গাছের মধ্যে টানে বলে সেটি কিছুটা ফিল্টার হিসেবেও কাজ করে৷ ছত্রাক যে উপাদান গাছে চালান করে না, গাছ তা গ্রহণও করে না৷ অর্থাৎ ছত্রাক না থাকলে গাছে আরও বেশি হেভি মেটাল প্রবেশ করতো৷''

সেখানকার মাটিতে জীবাণুর কার্যকলাপ তরান্বিত করতে বিজ্ঞানীরা প্রতি বছর বিশেষ ধরনের মাইক্রোঅরগ্যানিজম যোগ করেন৷ এরিকা কোটে বলেন, ‘‘জঙ্গলে বিশেষ গাছের নীচে বিশেষ ছত্রাক থাকে৷ লার্চ বোলেটাস বা বার্চ মাশরুমের নাম শুনলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়৷ লার্চ বা বার্চ গাছের কোলে সেগুলি পাওয়া যায়৷ অর্থাৎ আমাদের এমন ছত্রাকের সন্ধান করতে হবে, যেগুলি নির্দিষ্ট গাছের সঙ্গে সংলাপ চালাতে পারে৷''

এখনো পর্যন্ত সাবেক ইউরেনিয়াম খনির জমিতে আল্ডার গাছ পুঁতে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে৷ বার্চ গাছ কিছুটা এবং তৃণভূমি সামান্য সাফল্য এনেছে৷ আগামী বছরগুলিতে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে৷ সে কারণে গবেষকরা পরীক্ষার কাজ চালিয়ে যেতে চান৷ তবে জমিতে ব্যাকটিরিয়া ও ছত্রাক যোগ করে যে লাভ হয়, সে বিষয়ে তাঁদের মনে কোনো সংশয় নেই৷ এরিকা কোটে বলেন, ‘‘জমি ফেলে রাখলে সেখানে আবার ঘাস গজায়৷ প্রাকৃতিক ঘাসজমির মতো জীবাণু জগত সৃষ্টি হতে প্রায় ৪০ বছর সময় লাগে৷ অর্থাৎ আমরা এখানে জীবাণু যোগ করে কার্যত ৪০ বছর সময় বাঁচিয়ে দিচ্ছি৷ তাই নতুন ইকোসিস্টেমের সঙ্গে সেই জীবাণুর মানিয়ে নিতে সময় লাগছে না৷''

তবে সেই এলাকার বিষমুক্ত ছত্রাকও খাবার যোগ্য নয়৷ কারণ মাটির হেভি মেটাল সেগুলিতে জমা হচ্ছে৷ একমাত্র পচে যাবার পরই সেই ধাতু আবার বেরিয়ে আসে৷ তবে সেই ধাতুর পরিমাণ এতই কম, যে গাছের কোনো ক্ষতি হয় না৷

রিকার্ডা ভেঙে/এসবি