1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাকিবের ঘটনা আমি লিখে রাখছি, আপনিও রাখুন

১ নভেম্বর ২০১৯

ছোটবেলায় দু-একবার ডায়েরি লেখার চেষ্টা করেছি, তবে নিয়মিত হয়ে উঠতে পারিনি৷ কিন্তু সাকিবের খবরটি শোনার পর থেকে আমার মনে ক্ষণে ক্ষণে যে পরিবর্তন এসেছে, তা লিখে রাখার ইচ্ছে হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3SKzO
ছবি: Getty Images/M. Melville

চাইলে পাঠক আপনিও তা করতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ডয়চে ভেলে বাংলার ফেসবুক পাতা সম্ভাব্য একটি স্থান হতে পারে৷

শুধু বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার পরিচয়ই নয়, সাকিবের কারণে বাংলাদেশকে চেনেন এমন অনেক বিদেশি আছেন৷ সেই সাকিবের সম্ভাব্য নিষিদ্ধ হওয়ার খবর যখন সমকাল পত্রিকায় ছাপা হলো তখন অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন৷

আমি প্রথম খবরটি শুনি জার্মান সময় প্রায় রাত সাড়ে দশটার দিকে৷ বাংলাদেশে তখন প্রায় রাত সাড়ে তিনটা৷ ফেসবুকে ঢুকে দেখি অনেকেই সাকিবের খবরটি শেয়ার করছেন৷ অবাক হয়ে খেয়াল করলাম, ফেসবুকে সাধারণত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণের খবর লিংকসহ শেয়ার করা হয়৷ কিন্তু এক্ষেত্রে দেখলাম, আমি যাদের মাধ্যমে খবরটি দেখছিলাম, তারা সবাই সমকালের প্রথম সংস্করণে ছাপা হওয়া খবরটির স্ক্রিনশট দিচ্ছেন৷

তবে এটা খেয়াল করলাম রিপোর্টটি করেছেন আলী সেকান্দার৷ একই বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগ ও হলে থাকার কারণে আমি জানি আলী সেকান্দার হচ্ছে আসলে আমার বন্ধু সেকান্দার আলী৷ সমকাল সম্পাদক তাঁর নামে এমন পরিবর্তন আনার গল্প সে আমাকে আগেই শুনিয়েছিল৷

ফেসবুকে পাওয়া খবরের পুরোটা জানতে রাতেই ঢুঁ মারি সেকান্দারের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে৷ কিন্তু দেখলাম সে খবরটি শেয়ার করেনি৷ যদিও নিজের করা খবর প্রায়ই শেয়ার করে থাকে সে৷

এমন একটি খবর শেয়ার না করায় একটু বিস্মিত হয়েছিলাম৷ একবারের জন্য মনে হয়েছিল, সেকান্দার কি নিজেই খবরের সত্যতা সম্পর্কে পুরো নিশ্চিত নয়, তাই শেয়ার দিচ্ছে না? কারণ ততক্ষণে অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী খবরটি ভুয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন৷

যাই হোক, এরপর ঘুমিয়ে পড়লাম৷ উঠলাম সকাল ছয়টায়৷ উঠেই আবারও সেকান্দারের অ্যাকাউন্টে গেলাম৷ কিন্তু তখনও সে খবরটি শেয়ার করেনি৷ ফলে খবরটি ভুয়া হওয়ার আশঙ্কা আরও ঘণীভূত হলো৷ তবে মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে, যাক এমন খবর সত্য না হলেই ভালো

এরপর আটটার দিকে অফিসে গেলাম৷ সেখানে গিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই সাকিবকে নিয়ে কথা হচ্ছিল৷ সেই সময় আবারও সেকান্দারের ফেসবুকে ঢুকে দেখলাম, না, এবার সে খবরটি শেয়ার করেছে৷ ফলে খবরটি হয়ত ভুয়া না বলে আমি কিছুটা নিশ্চিত হলাম৷ সেই সঙ্গে সাকিবের কথা ভেবে মনটাও খারাপ হয়ে গেল৷ মনে হলো, সাকিবতো টাকা নেননি, দুর্নীতি করেননি৷ শুধু প্রস্তাব পাওয়ার কথা আইসিসিকে না জানিয়ে ভুল করেছেন৷ সে কারণে তাঁকে ১৮ মাস নিষিদ্ধ থাকতে হবে!

বাংলা বিভাগের প্রধান জানতেন সমকালের রিপোর্টার সেকান্দার আমার বন্ধু৷ তাই সিদ্ধান্ত হলো তাঁর একটি সাক্ষাৎকার নেয়া হবে৷ সঙ্গে সঙ্গে ফোন করলাম সেকান্দারকে৷ সে জানালো, এইমাত্র একটি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে বের হলো৷ ফলে এখন ডয়চে ভেলেকে সাক্ষাৎকার দেয়া যাবে৷ সেকান্দারের সঙ্গে কথা বলে মনে হলো, শতভাগ নিশ্চিত হয়েই খবরটি করেছে সে৷

সাক্ষাৎকারে সেকান্দার ডয়চে ভেলেকে জানালেন, আসন্ন এই শাস্তি সম্পর্কে বিসিবি নাকি আগেই জানতো!

সাকিবের ঘটনাটি এমন সময় ঘটলো যখন সাকিবের নেতৃত্বে দাবিদাওয়া নিয়ে সদ্য আন্দোলনে গিয়েছিলেন ক্রিকেটাররা৷ ঐ ঘটনা সামলাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন৷ তাঁর অনেক সমালোচনাও হচ্ছিল৷ ফলে সাকিবের সম্ভাব্য নিষিদ্ধ হওয়ার খবরে অনেকে পাপনের ভূমিকা দেখতে পাচ্ছিলেন৷

তখনও কিন্তু আইসিসির কাছ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি৷ তবে সাকিবকে নিয়ে সকালবেলায় প্রথমে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ও পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্য থেকে ভয়ংকর সেই খবরটি যে আসছেই, তা মনে হচ্ছিল৷ এবং অবশেষে তা এলো৷ বাংলাদেশ সময় বিকাল বা সন্ধ্যার দিকে সাকিবকে শাস্তি দেয়ার বিবৃতিটি এলো৷ এতে জানা গেল সাকিবের কাছে তিন তিনবার প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন একজন জুয়াড়ি৷ তার সঙ্গে সাকিবের হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা চালাচালির দুএকটির উল্লেখও বিবৃতিতে করে আইসিসি৷

বিবৃতিটি পড়ার পর সাকিবকে বড় অপরাধীই বলে মনে হয়েছে আমার৷ কারণ একজন ব্যক্তিতো তিন-তিনবার প্রস্তাব পাওয়ার কথা না জানিয়ে থাকতে পারেননা! বিশেষ করে যেখানে জুয়াড়িদের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে ক্রিকেটাররা যে আইনগতভাবে বাধ্য, তাতো প্রতিটি ম্যাচের আগেই তাঁদের জানিয়ে দেয়া হয়৷ 

DW Bengali Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

যাই হোক, সাকিব এমনটা সত্যিই করেছেন ভেবে মনটা আরো বেশি খারাপ হয়ে গেল৷ সকাল পর্যন্ত ভাবছিলাম, সাকিব হয়ত সামান্য ভুল করেছেন৷ সেজন্য ১৮ মাসের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞাকে অনেক বেশি মনে হয়েছিল৷ কিন্তু আইসিসির বিবৃতি পাওয়ার পর মনে হলো, শাস্তিটা সাকিবের প্রাপ্য ছিল৷

প্রতিশোধ নিতে বিসিবি সভাপতি আইসিসিকে দিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন বলে যাঁরা প্রচার করছেন - আইসিসির বিবৃতি পড়ার পর আমার কাছে তা সত্য নয় বলেই মনে হয়েছে৷

যাই হোক, সাকিব ভুল করেছেন৷ সেজন্য তিনি শাস্তি পাচ্ছেন৷ আর আমাদের দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমরা অন্তত একবছর সাকিবের খেলা দেখতে পারবোনা৷

তবে আমি জানি, সাকিব অনেক শক্ত মানুষ৷ আইসিসির তদন্ত মাথায় নিয়েও তিনি বিশ্বকাপে দারুণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন৷ ফলে নিষেধাজ্ঞা শেষে যে তিনি আবারও স্বরূপে ফিরতে পারবেন তা নিয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷