সাইবেরিয়ার মেষপালক
সাইবেরিয়ার তুয়া গণরাজ্যের মেষপালকরা মাইনাস ২৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রাতেও ভেড়া চরাতে বেরোন৷ আশ্চর্য হবার কিছু নেই – ভেড়ার লোম দিয়েই তো পশম তৈরি করা হয়, নয় কি?
যাযাবর
স্বশাসিত তুয়া গণরাজ্যের রাজধানী কিসিল-এর দক্ষিণে কারা-চারিয়া প্রদেশ৷ সেখানেই এই যাযাবর মেষপালকদের বাস৷ বাস বলতে তাঁবুতে; দরকার পড়লে বা খেয়াল হলে তাঁবু উঠিয়ে আবার অন্য জায়গায় গেলেই হলো৷ পাহাড় দিয়ে ঘেরা তুয়া গণরাজ্য রাশিয়ার দক্ষিণে, মঙ্গোলিয়ার সীমান্তে৷
ভেড়া কোলে
মহিলার নাম তানজুরুন দারিসু৷ কারা-চারিয়া প্রদেশে তাঁর একটি খামার আছে, যেখানে তিনি নিজেও পোষ্য জীবগুলির পরিচর্যায় হাত লাগান৷
বেড়া খুলে দিলেই...
...দারিসুর খামারের শ’খানেকের বেশি ভেড়া ও ছাগল পিল পিল করে বেরিয়ে আসে – কিন্তু কিসের খোঁজে, কে জানে, কেননা চারদিকে তো বরফ, ঘাসের চিহ্নমাত্র নেই৷ সুবিধে এই যে, তাপমাত্রা শূন্যের সাতাশ ডিগ্রি নীচে নামলেও এদের কোনো অসুবিধা হয় না৷
ঠান্ডা লাগে বৈকি!
নয় তো বেচারারা জড়োসড়ো হয়ে, গায়ে গা ঘেঁষে, দঙ্গল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকবে কেন? শূন্যের নীচে তাপমাত্রা এদের চেনা; তবে সাইবেরিয়ায় ওইমিয়াকন আর ভের্কোইয়ান্সকের মতো জায়গায় নাকি তাপমাত্রা মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি নেমে যায়৷ মানুষ বাস করে, এমন সব জায়গার মধ্যে এর চেয়ে ঠান্ডা নাকি আর কোথাও নেই৷
মানুষের বাস?
দেখলে তো তাই মনে হচ্ছে৷ দারিসুর ভেড়ার পালকেও দেখা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাকি দুনিয়াটা পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা৷ আপনাদের মধ্যে যারা শীতকাতুরে, তারা এই খামারে শীত কেন, রাত কাটানোর কথা ভাবতে পারেন?
গোল তাঁবুতে পরিপাটি সংসার
বাঁ-দিক থেকে দ্বিতীয় জন হলেন তানজুরুন দারিসু৷ যাযাবরদের এই ধরনের তাঁবুকে বলে ‘ইয়ুর্ট’, তুর্কি ভাষায় যার অর্থ ‘বাসগৃহ’৷ মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া আর তুরস্কে ইয়ুর্টের চল আছে৷ ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য যাযাবর মেষপালকরা পাশাপাশি ইয়ুর্ট গাড়েন – ভেড়া-ছাগল কাছেই থাকে৷ ইয়ুর্ট তাঁবুগুলো তৈরি হয় কাঠের কাঠামোর ওপর ভেড়ার আর ছাগলের লোমের পশমি কাপড় বসিয়ে৷
উটের গাড়ি
তুয়া প্রদেশের মেষপালকরা তাদের স্লেজগাড়ি টানার জন্য বলগা হরিণ নয়, ঘোড়া নয়, উট ব্যবহার করেন – মরুভূমির জাহাজ বরফেই বা চলবে না কেন? সাইবেরিয়ার এই উটেরা শীতে শূন্যের ৩০ ডিগ্রি নীচের তাপমাত্রা আর গরমে শূন্যের ৪০ ডিগ্রি ওপরের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে৷
তুষার মরু
সাইবেরিয়ায় উট কিন্তু আদতে বন্যপ্রাণী, যদিও ব্যাপক শিকারের ফলে তাদের সংখ্যা কমে এসেছে৷ বরফের মরুভূমিতে উটকে স্লেজ টানতে দেখলে সুকুমার রায়ের হাঁসজারুর কথা মনে পড়ে যায় না?