সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সাদাতের হাতিয়ার
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১এমন এক অ্যাপ তৈরি করে গত বছর এ পুরস্কার পেয়েছেন সাদাত৷ তখন তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন৷
এরই মধ্যে কিশোর-কিশোরীদের সাইবার বুলিং থেকে রক্ষায় তার সেই অ্যাপ সারা দেশের জন্য তৈরির কাজ শুরু করেছেন৷ তার আশা, আগামী ছয় মাসের মধ্যে সারাদেশে অ্যাপটির সহায়তা পাওয়া যাবে৷ সাইবার টিন নামে একটি গ্রুপও গঠন করেছেন তিনি৷
২০১৮ সালে সাদাত তার আরো কয়েকজন বন্ধুর সহযেগিতায় ‘সাইবার টিন’ নামের অ্যাপটি তৈরি করেন৷ পিরোজপুরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়ে এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা তার মনে গভীরভাবে দাগ কাটে৷ আর সেখান থেকেই অ্যাপটি তৈরির ভাবনা আসে৷ এর আগে তিনি নড়াইল ভলান্টিয়ার্স নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলে সামাজিক নানা বিষয় নিয়ে কাজ করতেন সাদাত৷
সাদাত জানান, এই অ্যাপটি ডাউনলোড করে মোবাইল ফোনে ব্যবহার করা যায়৷ কোনো কিশোর-কিশোরী সাইবার বুলিংয়ের শিকার হলে এই অ্যাপের মাধ্যমে সহায়তা চাইতে পারেন৷ এরপর তারা যদি পুলিশের সহায়তার প্রয়োজন মনে করেন, তাহলে পুলিশকে জানান৷ কাউন্সেলিংয়ের প্রয়োজন হলে তা-ও করেন৷ তাদের এই কাজ এখন পর্যন্ত নড়াইলেই সীমবদ্ধ৷ তাদের ওয়েব সাইট ও ফেসবুক গ্রুপও আছে৷ সেখানেও সহায়তা চাওয়া যায়৷
আর এই অ্যাপই সাদাতকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাইয়ে দেয় ২০২০ সালের নভেম্বরে, যা তিনি গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেল জয়ী মালালা ইউসুফজাই'র হাত থেকে নেদারল্যান্ডস-এর হেগ শহরে৷ মালালা তখন তাকে ‘সত্যিকারের চেঞ্জ মেকার, অনুপ্রেরণা’ বলে অভিহিত করেন৷ কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন পুরস্কার হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে সাদাতের পড়ালেখার খরচ এবং তার প্রজেক্টের জন্য এক লাখ ইউরো দেয়৷ মালালা নিজেও ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন৷
সাদাত বলেন, ‘‘আমরা নড়াইলের বাইরে সহযোগিতা দিতে পারি না৷ কিন্তু সারাদেশ থেকেই আমাদের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ আসে৷ আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি না৷ কারণ নড়াইল জেলার এসপি সাহেব আমাদের সহায়তা করেন৷ অন্য জেলার পুলিশের সাথে আমাদের যোগাযোগ নেই৷ তাই ৬৪ জেলায়ই এখন নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার কাজ করছি৷ অ্যাপ তৈরির কাজ করছি৷ এ কারণে বর্তমানে অ্যাপটি বন্ধ রেখেছি৷ এটা হলে সারাদেশেই সহযোগিতা করতে পারবো৷’’
৬৪ জেলার জন্য তাদের কাজে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাকে পুরস্কার প্রদানকারী কিডস রাইটস ফাউন্ডেশন, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, সেভ দ্য চিল্ড্রেন, ইয়াং বাংলাসহ আরো অনেকে৷ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ঢাকায় কেন্দ্রীয় অফিস করা হয়েছে এবং যশোরে একটি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে৷ এছাড়া দেশের ৬৪ জেলায়ই সাইবার বুলিং প্রতিরোধে স্কুল প্রোগ্রাম চালু হবে বলেও জানিয়েছেন সাদাত৷ তিনি আরো জানান এখন সাইবার টিন গ্রুপে কাজ করছেন মোট ২২ জন৷
সাদাত বলেন, ‘‘পুলিশ সদর দপ্তরের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়েছে৷ আগামী রবিবার বৈঠক হতে পারে৷ ১০৯ (নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হেল্প ডেস্ক) এর সাথে আমরা কীভাবে যুক্ত হতে পারি, তা নিয়ে কথা হবে৷ আর অনেক বিষয়ের সমাধান আমাদের হাতে নেই৷ সেখানে পুলিশের সহায়তা দরকার৷’’
এ পর্যন্ত তাদের এই অ্যাপটি ২০ হাজার ডাউনলোড হয়েছে৷ এক হাজার ৫০০ জন সহায়তা চেয়েছেন৷ সরাসরি অভিযোগ করেছেন ৩৫০ জন৷ ২৪০টির বেশি ঘটনায় সমাধান দেয়া হয়েছে৷ সাইবার অপরাধে জড়িত আট জনকে চিহ্নিত করে পুলিশে দেয়া হয়েছে৷
সাদাত জানালেন, তার কাছে ফোনও আসে৷ গত সপ্তাহে এক কিশোরী তাকে ফোন করে হতাশায় আত্মহত্যা করবে বলে জানায়৷ সাদাত তাকে কাউন্সেলিং করে স্বাভাবিক করে তুলেছেন বলে জানান৷
বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সাদাত বলেন, ‘‘এই কাজ করতে গিয়ে আমার নিজের পড়াশুনার কিছুটা ক্ষতি হয় সত্য৷ তারপরও তো মানুষের জন্য কাজ করতে হবে৷ তাই সব কিছু ম্যানেজ করে নিই৷’’
সাদাতের বাবা সরকারি চাকরি করেন৷ তিনি বদলি হয়ে এখন ঢাকায় এসেছেন৷ তাই ঢাকায় তার যোগাযোগ বেড়েছে৷ ভবিষ্যতে তিনি এই সাইবার বুলিং ও সাইবার ক্রাইমের বিরুদ্ধে আরো বড় কাজ করতে চান৷