1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরে দাঁড়ালেন বিপির সিইও

২৭ জুলাই ২০১০

অবশেষে পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম’এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা টোনি হেওয়ার্ড৷ মেক্সিকো উপসাগরে দুর্ঘটনার পর থেকে চাপে ছিলেন তিনি৷ তাঁর স্থলে নতুন সিইও হিসেবে যু্ক্তরাষ্ট্রের নাগরিক বব ডাডলির নাম ঘোষণা করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/OVr6
অতীত ও ভবিষ্যৎ – টোনি হেওয়ার্ড ও বব ডাডলি (পেছনে)ছবি: ap

যা ভাবা হচ্ছিলো, তাই হয়েছে৷ সরে যেতে হচ্ছে টোনি হেওয়ার্ডকে৷ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আজ বব ডাডলির নাম ঘোষণা করেছে ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম – বিপি৷ তিনি আবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক৷ সাগরতলে বিস্ফোরণের পর আমেরিকায় বিপির যে বদনাম ছড়িয়ে পড়েছে, তা কাটাতেই হয়তো একজন মার্কিনিকে বেছে নিলো বিপি৷ ডাডলি বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর প্রথম কাজ হবে যে কূপটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়া৷ সেই সঙ্গে মেক্সিকো উপসাগরকে দূষণমুক্ত করা৷ ডাডলি বলেন, ‘‘আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিপিকে শক্তিশালী ও টিকে থাকার জন্য সক্ষম করে তোলা৷ আমাদের এখন বিনিয়োগ দরকার, পুঁজি দরকার৷ নগদ অর্থ এলেই ব্যবসা চাঙা হয়ে উঠবে৷'' এদিকে বিপি জানালো, তেল নিঃসরণের ঘটনায় তাদের ১৭০০ কোটি ডলার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে৷

যুক্তরাজ্যের নাগরিক হেওয়ার্ড দায়িত্ব নিয়েছিলেন ২০০৭ সালে৷ ওই সময় তিনি বলেছিলেন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সজাগ থাকবেন তিনি৷ সব কিছু ঠিকঠাক মতোই চলছিলো, কিন্তু গত ২০ এপ্রিলের ঘটনা সব ওলট পালট করে দেয়৷ লুইজিয়ানার কাছে সাগরতলে একটি রিগে ঘটে বিস্ফোরণ৷ তাতে মারা যায় ১১জন৷ বিপর্যয়ের শেষ তখনো নয়৷ এরপর তেল নিঃসরণ হতে থাকে অবিরল ধারায়৷ দূষণ ছড়িয়ে পড়ে৷ মারা পড়তে থাকে একের পর এক সামুদ্রিক প্রাণী৷ পরিবেশের ক্ষতি দেখে চতুর্দিকে বিক্ষোভ ওঠে৷ ক্ষুব্ধ হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও৷

NO FLASH Öl Katastrophe BP Folgen Umwelt
মেক্সিকো উপসাগরের ঘটনা বিপি’র জন্য মারাত্মক সংকট হয়ে উঠেছেছবি: AP

অনেক চেষ্টার পর গত বৃহস্পতিবার বন্ধ করা যায় তেল নিঃসরণ৷ তাতে আপাত স্বস্তি মিলেছে৷ তবে ততদিনে বিপির বদনাম হয়েছে অনেক৷ সঙ্গে আর্থিক ক্ষতিও৷ এর মধ্যে শুধু ক্ষতিপূরণই দিতে হয় ২ হাজার কোটি ডলার৷ শেয়ারের দামও পড়তে থাকে৷ এত সব ক্ষতির মধ্যেই নির্বাহী কর্মকর্তা বদলের ঘোষণা এলো৷ বিপির চেয়ারম্যান কার্ল হেনরিক স্ভানবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘‘গত তিন বছর ধরে সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনকারী হেওয়ার্ডের বিদায়ের ঘোষণা দিচ্ছে বিপি৷ অক্টোবরে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে আসবেন বব ডাডলি৷'' বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘বিপির অনেক সম্পদ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানে রয়েছে যোগ্য লোকও৷ বিশ্বের জ্বালানি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপির এখনো অনেক কিছু করার আছে৷ বিপি এগিয়ে যাবে৷''

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব যে ছাড়তে হবে, তা নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন হেওয়ার্ড৷ তাই পদত্যাগের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি মনে করি, আমার মুখ সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করা বিপির পক্ষে অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছিলো৷'' হেওয়ার্ডকে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নিলেও তাঁর জন্য আরেকটি জায়গা ঠিক করেছে বিপি৷ তা হলো, রাশিয়ায় যৌথ বিনিয়োগে বিপি যে কাজ করছে, সেই কোম্পানির বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন৷ এতে বছরে ১৬ লাখ ডলার বেতন পাবেন তিনি৷ তবে অনেকে বলছেন, এটা এক ধরনের নির্বাসন৷ এছাড়া দীর্ঘকাল প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য পেনশনও রয়েছে তাঁর জন্য৷ এই খাতে প্রতি বছর তাকে দেওয়া হবে ৬ লাখ পাউন্ড৷

নতুন নির্বাহী কর্মকর্তা ডাডলি এখন আছেন লন্ডনে৷ সেখানের পাট গুটিয়ে অক্টোবরই তিনি চলে যাবেন স্বদেশে৷ ৫৪ বছর বয়সি ডাডলির জন্ম মিসিসিপিতে৷ অ্যামোকো কর্পোরশনে ২০ বছর কাজ করেছেন তিনি৷ ওই প্রতিষ্ঠানটি বিপির সঙ্গে মিলে গেলে তিনিও ব্রিটিশ তেল কোম্পানিতে অন্তর্ভুক্ত হন৷ এরপর বিভিন্ন পদ ঘুরে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি৷ আর সেই সঙ্গে সাগরতলে রিগে ত্রুটি সারানোর পর তা পুনরায় সচল করার কাজের তদারকির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷

বিপি আজ জানায়, এপ্রিলের দুর্ঘটনার পর গত তিন মাসে তাদের ১৭শ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে৷ আর তাই পুঁজি বাড়াতে তারা আগামী দেড় মাসে ৩ হাজার কোটি ডলারের সম্পদ বিক্রি করবে৷ এক রিগের বিস্ফোরণেই অনেক ভুগতে হলো বিপিকে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন