‘‘বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি নাই, সাধারণ মানুষই খুন হচ্ছে৷ এবং ভিন্নমতের লোকজন হত্যা করাই বাংলাদেশের ঐতিহ্য-’’ জঙ্গিদের গুলি করে হত্যা করা সম্পর্কে এই মন্তব্য করেছেন পাঠক এম কে জেড রাজকুমার৷
সালেক মোহাম্মদ মনে করেন ‘‘ আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন ব়্যাবকে এখন ম্যাজিসেট্রটের অধীনে দিয়ে দেওয়ার সময় হয়েছে৷’’
অন্যদিকে মোহাম্মদ মিজান কিন্তু আজও ভোলেননি ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার কথা, কারণ, তখন ‘আইভি রহমানের মতো ভালো মানুষকেও প্রাণ দিতে হয়েছিল৷’ পাশাপাশি তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথাও লিখেছেন৷ সলিমান সুমনও কিন্তু পাঠক মিজানের সাথে একমত৷
আর ক্রসফায়ারের পাশাপাশি জঙ্গিদের গুলি করে হত্যার জন্য ডয়চে ভেলের পাঠক কাজি মানিক কিন্তু সরকারকেই দায়ী করছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘ সরকার যখন ধরা পড়ে, তখন শুরু হয় নাটক, যদিও বা আগে থেকে নাটকের সংলাপ তৈরি থাকে৷ এর জন্য সরকারের আলাদা মন্ত্রণালয আছে, সেখান থেকে সবকিছু ট্রেনিং দেওয়া হয়৷ যেমন পুলিশলীগ কি বলবে, ব়্যাব কী বলবে, দালাল লীগ কী বলবে, নেতা কী বলবে, আবার মুরগি লীগ কী বলবে৷ সব কিছু ওখান থেকে তৈরি হয়৷’’
-
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
মৃতদেহের পাশে কোনো গুলি ছিল না
পশ্চিম কুনিয়া বাগানবাড়ি, বরিশাল৷ একজন মহিলা দেখতে পেলেন ধানক্ষেতে একটা মৃতদেহ পড়ে আছে৷ ব়্যাবের লোকজন তাদের গাড়ি থেকে গুলি এনে মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে৷ মহিলাটি প্রথম যখন মৃতদেহটা দেখেন তখন সেখানে কোনো গুলি ছিল না৷ আশেপাশে কোনো রক্তও ছিল না৷ ধানক্ষেতে পায়ে মাড়ানোর কোনো চিহ্ন ছিল না৷
-
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
আনিস কেন মারা গেল?
আনিসুর রহমান, ছাত্রদলের স্থানীয় এক নেতা৷ রাত আড়াইটার দিকে মোহাম্মদপুর থেকে তাঁকে আটক করা হয়৷ দু’জন প্রতক্ষ্যদর্শী জানান, ব়্যাব ৪-এর একটি দল আনিসের বাসায় তল্লাশি চালায়, কোনো পরোয়ানা বাদেই৷ দু’দিন বাদে সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আনিস মারা যান৷ ব়্যাবের দুই কর্মকর্তা হাসপাতাল থেকে আনিসের কাগজপত্র সরিয়ে ফেলেছে বলেও জানান এক প্রতক্ষ্যদর্শী৷
-
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
ক্রসফায়ারে শেষ মোহাম্মদ
মোহাম্মদ মইনউদ্দিন৷ ও আর নিজাম রোড৷ মেহেদিবাগ৷ পাঁচলাইশ থানা৷ চট্টগ্রাম৷ তাঁর বাড়িতে ফোন করে জানানো হলো তিনি ক্রসফায়ারে মারা গেছেন৷ ব়্যাবের নজরদারিতেই জেনারেল হাসপাতালে তাঁর ময়নাতদন্ত হলো৷ মৃতের পিঠে চারটি গুলির চিহ্ন বাদেও বুকে সাতটা ছোট ফুটো পাওয়া যায়৷
-
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
সেন্টুকে নিয়ে যায় ব়্যাব-৩
মো. মশিউল আলম সেন্টু৷ ছাত্রদলের সহসভাপতি৷ আনুমানিক সন্ধ্যে সাতটার দিকে সেন্টুরা রিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল থেকে নীলক্ষেত মোড়ে এলেন৷ ব়্যাব ৩ লেখা একটি সাদা মাইক্রোবাস সেন্টুদের থামার নির্দেশ দিতে দিতে ওদের পেছনে পেছনে আসছিল৷ ব়্যাব কর্মকর্তারা রিকশা আরোহীদের থামিয়ে সেন্টুর বাঁ পায়ে গুলি করে৷ এরপর তোয়ালে দিয়ে চোখ বেঁধে, হাত পিছমোড়া করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়৷
-
‘ক্রসফায়ার’ – একটি প্রদর্শনী
শরীরে বৈদ্যুতিক শকের দাগ
সুমন আহমেদ মজুমদার ছিলেন যুবলীগের সহসম্পাদক৷ বাড়ি টঙ্গির আমতলীতে৷ এক তরুণসহ সুমনকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়৷ এক রেস্তোরাঁয় বসিয়ে তাঁর হাতে একটা খাম ধরিয়ে দিয়ে খুলতে বলা হয়৷ ভেতরে দু’টো ৫০০ টাকার নোট আর একটা সাদা কাগজ৷ তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ৷ হাসপাতাল রেজিস্ট্রার সুমনের ডান পায়ের গভীর ক্ষত আর সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে অনুমান করেন, তাঁকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছিল৷
লেখক: শহিদুল আলম
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী