সরকার ও শাসক দল দুইয়ের শীর্ষে অমিত শাহ
১৯ জুন ২০১৯এবার সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির বিপুল জয়ের সঙ্গেই ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ জুটির ক্ষমতাবৃদ্ধির তত্ত্ব৷ বিস্তর আলোচনা এই নিয়ে একদিকে, রাজনাথ সিংকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেসরকারি কাঠামোয় প্রধানমন্ত্রীর পর দ্বিতীয় স্থানটি দখল করে নিয়েছেন মোদীর বিশেষ আস্থাভাজন বিজেপির চাণক্য অমিত শাহ৷ অন্যদিকে, মেয়াদ সমাপ্ত হলেও শাসক দল বিজেপির শীর্ষ পদে এখনই নতুন কাউকে আনতে নারাজ না মোদী-শাহ জুটি৷ অবস্থাটা এমনই যে, দলে এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার লোক নেই৷
সমালোচকেরা বলছেন, অতীতে যে নিয়মে নীতিন গাডকারি, রাজনাথ সিং-রা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি পদে থাকতে পারেননি, এখন সেই নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নিজের পদের মেয়াদ আরও বাড়িয়ে নিলেন শাহ৷
এই বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকেই নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহর ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল৷ সেটা সেই গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে শুরু হয়েছিল৷ এবার মোদী-শাহ জুটি আরও ক্ষমতাবান৷ আশচর্যজনক হলেও এই জুটির ক্ষমতায়নে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ অনুমোদন দিয়েছে৷ দ্বিতীয়বার সরকারে এসে দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ' নিয়মের তোয়াক্কা করেননি তাঁরা৷ বিজেপির বর্তমান অবস্থা এমনই যে নীতি, নিয়মের কথা স্মরণ করানোর মতো কেউ নেই''৷
বিজেপির সূত্র জানাচ্ছে, আগামি কয়েক মাস বিভিন্ন রাজ্যে সাংগঠনিক রদবদল হবে৷ কিন্তু, দলের সর্বভাতীয় সভাপতি পদের নির্বাচন আপাতত স্থগিত রাখছেন অমিত শাহ৷ তাঁর নেতৃত্বেই দল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মেয়াদ সমাপ্ত হলেও আরও মাস ছ'য়েক ডিসেম্বর পর্যন্ত দলের শীর্ষে থাকবেন তিনি৷ দলের কার্যকরী সভাপতি পদে বসানো হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নাড্ডাকে৷ দলের নেতারা অনেকেই বলছেন মাস ছয়েক পর নাড্ডার হাতেই দলের ব্যাটন তুলে দিতে চান মোদী-শাহ জুটি৷
কিন্তু, দল ও সরকারের শীর্ষ পদে কেন থাকবেন? সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে কেন্দ্র ও দেশের প্রতিটি রাজ্যের ওপর ‘নজরদারি' চালাতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিকল্প কিছু নেই৷ প্রধানমন্ত্রীর অবর্তমানে তিনিই সর্বেসর্বা৷এছাড়াও অতি গুরুত্বপূর্ণ সিবিআই, ইডি, ‘র', আইবি ইত্যাদি গোয়েন্দা এজেন্সির নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ বস্তুত সরকারে প্রধানমন্ত্রীর ছায়া হয়ে উঠেছেন মোদীর ছায়াসঙ্গী অমিত শাহ৷ দলের শীর্ষ পদে আগামী কয়েক মাস নিজের কার্যকালের মেয়াদ বাড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্য হল, দলকে আশানুরূপ মজবুত করে তোলা৷ বিশেষত যে রাজ্যে সংগঠন দুর্বল, সেই রাজ্যগুলিতে৷
এই লক্ষ্যে দলের নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের কর্মসূচি নির্ধারণ করেছেন শাহ৷ তাঁর লক্ষ্য, কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের সদস্য সংখ্যা অন্তত ২০ শতাংশ বৃদ্ধি করা৷ এমনিতে বিজেপির সাংগঠনিক নির্বাচন হবে আগামি কয়েক মাস ধরে৷ এরমধ্যেই হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড এবং জম্মু ও কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে৷ তবে, জম্মু ও কাশ্মীরে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ আরও বাড়ানো হয়েছে৷ এই রাজ্যগুলিতে কীভাবে বিপুল জয় ছিনিয়ে আনা যায়, সেই লক্ষ্যে অবিচল সরকার ও দলের প্রধানরা৷
সব দেখেশুনে নিন্দুকরা বলছেন, ‘‘ভারতীয় জনতা পার্টির নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেশের ভালোমন্দ ঠিক করার গুরু দায়িত্ব নিজেরাই নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন মোদী-শাহ জুটি৷''